বিশাখাপটনম, 21 মে : কোরোনায় যখন দেশ জর্জরিত তখন সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে বুক চিতিয়ে লড়াই করে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা । কোরোনায় আক্রান্তদের সুস্থ করে তুলতে একনিষ্ঠভাবে চিকিৎসা করে যাচ্ছেন । নাওয়া-খাওয়া ভুলে হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে দিনের পর দিন কাটাচ্ছেন । আর কাজের প্রতি এই একনিষ্ঠতার উপহার কি মানসিক হাসপাতালে রোগীর স্ট্যাম্প ? অন্তত অন্ধ্রপ্রদেশের এক চিকিৎসকের ক্ষেত্রে তো তেমনটাই মনে হচ্ছে ।
বিশাখাপটনমের নারসিপটনম আঞ্চলিক হাসপাতালের চিকিৎসক ছিলেন সুধাকর । আর পাঁচজন চিকিৎসকের মতো তিনিও সামনের সারিতে দাঁড়িয়েই কোরোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসা করছিলেন । তবে, এই সবকিছুর মাঝে তিনি নিজের সুরক্ষার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিলেন । আর একটু ভালো করে বললে চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিয়ে অবহেলা করায় সরকারের সমালোচনা করেছিলেন । বলেছিলেন, চিকিৎসকদের জন্য N-95 মাস্ক দিতে । একই দাবি তিনি কোরোনায় আক্রান্তদের জন্যও করেছিলেন । শুধু N-95 মাস্কের জন্য নয়, অনভিজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে অস্ত্রোপচার করতে হচ্ছে বলেও তিনি সরকারের সমালোচনা করেছিলেন ।
তাঁর এই সমালোচনা ঝড়ের গতিতে ভাইরাল হয় সোশাল মিডিয়ায় । তারই পরিণাম হিসেবে 8 এপ্রিল তাঁর নামে একটি চিঠি আসে । সেই চিঠিতে উল্লেখ ছিল তাঁর সাসপেনসনের কথা । নিজের সুরক্ষা চাওয়ার পরিণাম হিসেবে চাকরি খুইয়ে প্রথমদিকে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন সুধাকর । পরে নিজেকে খানিকটা সামলে নিয়ে ঠিক করেন নিজের অধিকারের জন্য লড়বেন । তাঁর প্রতি হওয়া অন্যায়ের জবাব চেয়ে 16 মে বিশাখাপটনমের পোর্ট হাসপাতালের সামনে অর্ধনগ্ন অবস্থায় প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন সুধাকর । তাঁর এই আচরণের উদ্দেশ্য ও কারণ থেকে অজ্ঞাত স্থানীয়রা তাঁকে নেহাতই পাগল মনে করেন । সেইমতো তাঁরা পুলিশের কাছে গিয়ে জানান, অর্ধনগ্ন ওই ব্যক্তি অকারণে অশান্তি করছেন । স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পোর্ট হাসপাতাল চত্বরে পৌঁছায় পুলিশ । সুধাকরকে নিয়ন্ত্রণে আনতে দড়ি দিয়ে বাঁধে। তারপর থানায় নিয়ে যাওয়া হয় । সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় কিং জর্জ হাসপাতালে ।
সুধাকরের শারীরিক পরীক্ষা করার পর কিং জর্জ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, তাঁর মানসিক অবস্থা ভালো নয় । চিকিৎসকদের কাছ থেকে এই খবর শোনা মাত্রই এক সেকেন্ডও দেরি করেনি পুলিশ । সুধাকরকে নিয়ে সোজা চলে যাওয়া হয় সরকারি মানসিক হাসপাতালে । পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে 353 ও 427 ধারায় মামলা দায়ের করা হয় । এতদূর পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল । হয়ত মানুষের কাছে অজানাই থেকে যেতেন চিকিৎসক সুধাকর । তাঁর চিকিৎসক থেকে মানসিক হাসপাতালের রোগী হওয়ার গল্প । কিন্তু বাধ সাধে সোশাল মিডিয়া । সোশাল মিডিয়ায় ঠিক যেভাবে তাঁর সমালোচনামূলক বক্তব্য ভাইরাল হওয়ায় চাকরি খুইয়েছিলেন সুধাকর, সেভাবেই আর একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয় । সেই ভিডিয়োয় দেখা যায়, সুধাকরকে পোর্ট হাসপাতালের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করার সময় এক কন্সটেবল ক্রমাগত তাঁকে মেরে চলেছেন । এই ভিডিয়োই সকলের সামনে তুলে ধরে সুধাকরকে । তাঁর লড়াইকে । পুলিশকর্মীর এই আচরণের কৈফিয়ত হিসেবে বিশাখাপটনমের পুলিশ কমিশনার আর কে মিনা জানান, সুধাকর মদ খেয়ে পোর্ট হাসপাতালের সামনে অশান্তি করছিলেন । একইসঙ্গে তিনি জানান, ওই কনস্টেবলকেও সাসপেন্ড করা হয়েছে ।