1973 সালে মুক্তি পাওয়া হিন্দি ছবি ‘সওদাগর’-এ বাড়িতে তৈরি ‘গুড়’ বিক্রেতা অমিতাভ বচ্চন নূতনের গুরুত্ব তখনই বুঝতে পেরেছিলেন, যখন ক্রেতারা তাঁর তৈরি সামগ্রীকে নিতে অস্বীকার করেছিল । ওই সিনেমায় অমিতাভ সুন্দরী পদ্মা খান্নার জন্য নূতনের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করেছিলেন ।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ডেভলপমেন্ট ফিনান্স ইনস্টিটিউশন (ডিএফআই) -কে পুনরায় তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । প্রাথমিক ভাবে 20 হাজার কোটি টাকা মূলধন হিসেবে বরাদ্দ করেছেন । আর এই জাতীয় আরও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সংস্থাগুলির জন্য জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন । পরিকাঠামো ক্ষেত্রে অর্থ বিনিয়োগ ও আরও অনেক কিছুর জন্য এটাই সওদাগর মুহূর্ত ।
উদারীকরণের পর তিন দশক কেটে গিয়েছে । ভারত অবশেষে একটি আধুনিক আর্থিক বাজার তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে । যার সঙ্গে পর্যাপ্ত দীর্ঘমেয়াদী ঋণের ব্যবস্থাও থাকবে । এই উদ্যোগ যদি সাফল্য পায়, তাহলে একদিকে যেমন পরিকাঠামো তৈরিতে লাভ হবে, অন্যদিকে তেমনই আর্থিক ব্যবস্থায় এনপিএ-র ধাক্কার ঝুঁকি অনেকটাই কমবে এবং বিশেষত পেনশন তহবিল থেকে এফআইআই (বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী) আসার পরিমাণ বৃদ্ধি করবে ।
- দাশমুন্সি সঠিক প্রমাণ করলেন
ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আইডিবিআই) আইন, 1964 সংসদ দ্বারা বাতিল হওয়ার আগে 2003 সাল পর্যন্ত ডিএফআই-গুলি ভারতের আর্থিক ব্যবস্থার একটি অংশ ছিল ।
আইডিবিআই ছিল প্রধান ডিএফআই । যা তখন আরও ২ টি বড় ডিএফআই এর নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করত । সেই ২ টি প্রতিষ্ঠান হল, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফিনান্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (আইএফসিআই) এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্রেডিট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (আইসিআইসিআই)। এছাড়া আরও কয়েকটি ছোট প্রতিষ্ঠান ।
1998 সালে যখন আরবিআইয়ের প্রাক্তন গভর্নর এম নরসিমহান এবং আইডিবিআইয়ের চেয়ারম্যান এস এইচ খানের নেতৃত্বে দুটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি মেয়াদী ঋণের উপর ডিএফআই-এর একাধিপত্য বাতিলের সুপারিশ করেছিল, তখনই এই সিদ্ধান্তের পূর্বাভাস ছিল ।
ওই প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে সরকার প্রথমে ব্যাঙ্কগুলিকে মেয়াদী ঋণ দেওয়া শুরু করার অনুমতি দেয় । আইসিআইসিআই এর সুযোগ নেয় এবং ব্যাঙ্ক চালু করে । আর তার পর তখন ডিএফআই নিয়ন্ত্রক আইন বাতিল হওয়া নিছক আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে থেকে গিয়েছিল ।
বিশেষজ্ঞরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটিও ডিএফআই ছাড়া কাজ চালিয়ে যাচ্ছে । কিন্তু সংসদে অন্তত একজন সাসংদ, কংগ্রেসের প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছিলেন । তিনি চেয়েছিলেন সরকার এই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখুক । দুই দশক পরে দাশমুন্সিই সঠিক প্রমাণিত হলেন ।
- গুরুতর ত্রুটি
ব্যাঙ্কিংয়ের ভাষায় মেয়াদী ঋণকে ‘স্যানস-রিকোর্স লোন’ বলা হয় । যার অর্থ হল, এমন ঋণ যেখানে ব্যালান্স-শিটের কোনও ভরসা থাকেন এবং তাই এই ঋণ ঝুঁকিপূর্ণ হয় । তবে এই ধরনের ঋণ ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে খুব বেশি আর্থিক সম্পদ ছাড়াই ক্ষুদ্র উদ্যোগপতিরা বড় লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন । এই পথ বন্ধ করে দেওয়ার অর্থ ঋণ কেবল বড় গ্রুপগুলিকে এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্পকে দেওয়া হবে ।
একজন পেশাদার থেকে উদ্যোগপতি হওয়ার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হল হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস । গত এক দশকে কম পরিচিত ব্যবসায়ীদের দ্বারা বেশ কয়েকটি তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হয়েছে মেয়াদী ঋণের সুবিধা নিয়ে ।
সড়ক পরিকাঠামো তৈরিতে প্রয়োজনীয় বুট (বিল্ড-ওন-অপারেটর-ট্রান্সফার) প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রেও মেয়াদী ঋণ জরুরি ।
একজন বুট ডেভলপার তাঁর দিক থেকে কোনও ভুল হলে, তা শুধরে দেওয়ার গ্যারান্টি দেন । তবে তিবি জমি অধিগ্রহণে দেরি বা যা হিসেব কষা হয়েছিল, তার থেকে কম টোল আদায় হল, তা নিয়ে তাঁকে কাঠগড়ায় তোলা যায় না । আর যদি অনুমান ভুল হয়ে যায়, তাহলে ঋণদানকারীর কাছে অর্থ পুনরুদ্ধারের খুব বেশি বিকল্প থাকে না ।
এই দীর্ঘ গল্পকে সংক্ষিপ্ত ভাবে বলতে গেলে মেয়াদী ঋণ হল একটি বিশেষ কাজ । ব্যাঙ্কিং খাতে উদারীকরণ ন্যায়সঙ্গত হওয়া সত্ত্বেও অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকার (1999-2004) এবং মনমোহন সিং সরকার (2004-2014) এই ধরনের বিশেষ ক্ষেত্রে জায়গা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছিল ।
দেশে দীর্ঘমেয়াদী বন্ডের বাজার নেই । ঋণ বৃদ্ধির উপর আরবিআই-এর নিষেধাজ্ঞা এই ধরনের বাজার তৈরির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণমূলক বাধা তৈরি করছে । এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন (ইপিএফও), যা সমাজতান্ত্রিক নীতি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, তারা বাজারচালিত পেনশন তহবিলের বৃদ্ধিকে কঠিন করে তুলছে ।
ফলাফল ছিল বিপর্যয়কর । 2004 থেকে 2009 সালের মধ্যে ছোট আকারের ব্যাঙ্কগুলি মেয়াদী ঋণ দেওয়ার উন্মাদনায় যোগ দেয় । তারা সড়ক তৈরিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্বল্প-মেয়াদী (দুই থেকে তিন বছর) আমানত ব্যবহার করছিল, যেখানে টাকা ফেরত পেতে 15 বছরের বেশি সময় লাগে ।