পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

কাশ্মীর নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাবনা এবং ভোটাভুটি

751 জন সদস্যের মধ্যে 600-এর বেশি সদস্য কাশ্মীর এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিষয় ছ'টি প্রস্তাবনা আনা হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে । এরমাঝেই 13 মার্চ ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন নরেন্দ্র মোদি। তাই রাজনৈতিক মহলের চোখ এখন কাশ্মীর নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাবনা এবং ভোটাভুটির প্রতি।

কাশ্মীর
কাশ্মীর

By

Published : Jan 28, 2020, 1:52 PM IST

দিল্লি, 28 জানুয়ারি : নাগরিকত্ব সংশোধনী (2019) আইন এবং জম্মু-কাশ্মীর থেকে 370 ধারা প্রত্যাহার করার বিষয়ে এক বড়সড় কূটনৈতিক চাপের মধ্যে পড়তে চলেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার । এবিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থানের কথা বিবেচনা করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাবনা আনা হয়েছে । 29 জানুয়ারি (স্থানীয় সময় সন্ধ্যে ছ'টা নাগাদ) বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে । পরের দিন অর্থাৎ 30 জানুয়ারি এবিষয়ে ভোটাভুটি হবে । আগামী মার্চ মাসে ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈঠকের যোগ দিতে ব্রাসেলস যাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । নিঃসন্দেহে তার আগে এই প্রস্তাবনা মোদি সরকারের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ । ‌ 751 জন সদস্যের মধ্যে 600-এর বেশি সদস্য কাশ্মীর এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিষয় ছ'টি প্রস্তাবনা এনেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে । এই প্রস্তাবনার বিষয়ে ছ'টি বৃহৎ দল তাদের সহমত পোষণ করেছে । মনে করা হচ্ছে মাস দুয়েক আগে কাশ্মীরে বিদেশি প্রতিনিধি দলের সফর হয়েছিল, সেই প্রেক্ষিতেই এই প্রস্তাবনা আনা হয়েছে ।

প্রস্তাবনার বিষয়ে সরকারিভাবে ভারতের বিদেশমন্ত্রক কোনও মন্তব্য করতে চায়নি ‌। বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ বলেই দায় এড়িয়ে গেছে বিদেশমন্ত্রক । তবে বিদেশমন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ভারত বারবার একটি বিষয় স্পষ্ট করেছে যে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা কাশ্মীর প্রসঙ্গ সব তাদের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় । কাশ্মীর ইশু নিয়ে কোনও বিদেশি রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ ভারত মেনে নেবে না তা বারবার বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলেছে । বিষয়টি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে আলোচনা হবে বলে বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে । ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই প্রস্তাবনার বিষয় বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার পর জনমানসে তার কী প্রভাব পড়েছে এবং এর ফলে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারে রক্ষা করা হচ্ছে কি না সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতেই এমন প্রস্তাবনার পরিকল্পনা ।

ভারত কোনও আন্তর্জাতিক নিয়ম ভাঙছে কি না এবং মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবনায় । জম্মু-কাশ্মীর থেকে 370 ধারা তুলে নেওয়া বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশের পর দেশের নানা প্রান্তে একাধিক প্রতিবাদ-বিক্ষোভের খবর সামনে এসেছে । কাশ্মীর প্রসঙ্গ এতটাই স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছিল যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি বড় প্রতিনিধিদল সেখানে সফর করতে গেছিল । যদিও সেই সফর নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে । কারণ, সরকারি ঘেরাটোপের মধ্যে এবং আধিকারিকদের নির্দিষ্ট করে দেওয়া পথেই কাশ্মীর সফর করেন বিদেশি প্রতিনিধিরা । কাদের সঙ্গে কথা বলবেন, কোথায়-কীভাবে ঘুরবেন, সে সমস্ত কিছু কেন্দ্রই ঠিক করে দেয় বলেই রাজনৈতিক মহলের একাংশের অভিযোগ । তা নিয়ে শাসক দলের অস্বস্তি ছিলই । মোদি সরকারের সেই অস্বস্তি বাড়ান EU-MP নিকোলাস ফেস্ট । বিরোধী দলের নেতা-সাংসদদের কাশ্মীরে ঢুকতে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করে তিনি বলেন, "যদি আপনি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের ঢুকতে দেন, তা হলে ভারতের বিরোধী দলগুলিকেও সেই ছাড়পত্র দেওয়া উচিত ।" তবে তাঁদের উদ্দেশ্য যে ভারতের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করা নয়, সে কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তাঁরা । EU প্রতিনিধি দলের মুখপাত্র বলেন, "রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের জন্য এখানে আসা নয় । প্রকৃত ঘটনা জানতে আসা । এখান থেকে দেশে ফিরে কোনও রিপোর্টও আমরা কাউকে দেব না ।" তবে কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তাঁরা যে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন, সে কথাও সফর শেষে ফিরে যাওয়ার সময় স্পষ্ট করেন তিনি । এসেছিলেন 27 জন EU MP । তাঁদের অধিকাংশই অতি ডানপন্থী বলেই পরিচিত । শুধুমাত্র তিন জন বাম তথা প্রগতিশীল দলের প্রতিনিধি । কিন্তু এই ২৭ জনের মধ্যেও আবার চারজন কাশ্মীর সফর না করেই দেশে ফিরে যান । ফিরে যাওয়া চার জনের মধ্যে ক্রিস ডেভিস একাধিক অভিযোগ করে বলেন, "মোদি সরকারের জনসংযোগ স্টান্টের অংশ হতে আমরা যাইনি এবং এমন ভান করতে পারব না যে, সব ঠিকঠাক চলছে । এটা স্পষ্ট যে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ভঙ্গ হয়েছে কাশ্মীরে । সারা বিশ্বের বিষয়টিতে নজর দেওয়া দরকার ।"

আবার এমন অভিযোগও উঠেছে যে, বণিক মহল ও কাশ্মীরের একাধিক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি দল EU MP দের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন । কিন্তু তাঁদের সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি । ন্যাশনাল কনফারেন্সে দুই সাংসদ অভিযোগ করেন, তাঁরা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ওই MP দের সঙ্গে দেখা করতে গেলে আটকে দেওয়া হয়েছে । আর তারপরই এই প্রস্তাবনা, যা নিয়ে কূটনৈতিক মহলে জল্পনার শেষ নেই । যদিও এমন অভিযোগ মানতে চায়নি কেন্দ্রীয় সরকার । ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের কোনওরকম সমস্যায় পড়তে হয়নি বলেই দাবি কেন্দ্রের । পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফে যে প্রস্তাবনা আনা হয়েছে তার অনেকগুলিতে ভারত সরকারের আপত্তি রয়েছে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে ।

13 মার্চ ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলনে এই বিষয়গুলি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং সম্মেলনে যোগ দেবেন । সন্দেহ নেই মার্চের সম্মেলনের আগে আগামী দু'দিন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভোটাভুটির দিকে নজর থাকবে ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details