পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

সংকটে টেলিকম ক্ষেত্র

By

Published : Mar 9, 2020, 12:17 PM IST

গ্রাহকদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা তথ্যপ্রযুক্তি এবং IOT (ইন্টারনেট অফ থিংস)-র ক্ষেত্রে নতুন অগ্রগতি ঘটাচ্ছে, মোবাইলে ফাইভ-জি প্রযুক্তি এইসব পরিষেবাকে সাধারণ মানুষের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসছে । 2018 সালের টেলিকম নীতিতে কেন্দ্র প্রস্তাব দিয়েছিল, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, ফাইভ-জি প্রযুক্তিকে সাধারণ মানুষের দরজায় পৌঁছে দেওয়া হবে ।

Telecom Sector
টেলিকম ক্ষেত্র

দিল্লি, 9 মার্চ: 2018 সালে তৈরি হয়েছিল ন্যাশনাল ডিজিটাল কমিউনিকেশন পলিসি, লক্ষ্য ছিল পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের সব মানুষের কাছে ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দেওয়া এবং GDP-তে টেলিকম ক্ষেত্রের অংশীদারি বাড়িয়ে 6 শতাংশে নিয়ে যাওয়া । চার বছরের মধ্যে ৪০ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরির আশা জাগিয়েছে নতুন টেলিকম-ব্যবস্থা, যেখানে রয়েছে নতুন বিনিয়োগ এবং নতুন উদ্যম , কিন্তু তার অবস্থা এখন মহাভারতের কর্ণের মাটিতে বসে যাওয়া রথের চাকার মতো । যদিও ফিফথ জেনারেশন টেকনোলজির (ফাইভ জি)মধ্যে নতুন অজস্র সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, কিন্তু বেসরকারি টেলিকম সংস্থাগুলোর অনেকেই সেই সুযোগ নিতে অক্ষম বলেই মনে হচ্ছে । 1999 সালে বেসরকারি টেলিকম সংস্থাগুলো তাদের বার্ষিক গ্রাহকমূল্যের 8 শতাংশ লাইসেন্স ফি হিসেবে অ্যাডভান্সড গ্রস রেভিনিউ (AGR)-তে যোগ করতে সম্মত হয় । যদিও, পরে তারা আদালতে গিয়ে বলে, যে কেন্দ্র সরকার AGR-এর সংজ্ঞা সঠিকভাবে নির্ধারণ করে দেয়নি । এই পরিস্থিতিতে টেলিকম সংস্থাগুলোর বকেয়া এজিআর-এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় 47 লক্ষ কোটি টাকা । সুপ্রিম কোর্ট গত বছরের অক্টোবর মাসেই স্পষ্ট করে দিয়েছিল, যে এজিআর বকেয়া মূল্য কোনওভাবেই আটকানো যাবে না, এবং 23 জানুয়ারির মধ্যে তা মিটিয়ে দিতে হবে । আদালতের আদেশ না মানায়, এরপর সুপ্রিম কোর্ট হুঁশিয়ারি দেয় যে 17 মার্চের মধ্যে বকেয়া মেটাতে হবে, নাহলে টেলিকম সংস্থাগুলির ম্যানেজিং ডিরেক্টরদের আদালতে হাজিরা দিতে হবে । হুঁশিয়ারির পর, বিরূপ পরিস্থিতির মুখে পড়ে অচলাবস্থা কাটানো নিয়ে দোলাচলে রয়েছে টেলিকম সংস্থাগুলি । টেলিকম দফতরের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, ভারতী এয়ারটেলের বকেয়া রয়েছে 35,000 কোটি টাকা, ভোডাফোন এবং আইডিয়াকে দিতে হবে 53000 কোটি টাকা করে, আর টাটা টেলিকমের বকেয়া রয়েছে 14000 কোটি টাকা । যদিও, এই সংস্থাগুলো নিজেরাই নিজেদের বকেয়ার হিসেব কষে দাবি করেছে, যে এয়ারটেলকে দিতে হবে শুধু 15 থেকে 18000 কোটি টাকা । ভোডাফোন এবং আইডিয়ার হিসেব অনুযায়ী, তাদের বকেয়া মাত্র 18 থেকে 23000 কোটি টাকা । টেলিকম দপ্তর বলেছে, যে এইসব হিসেব পরীক্ষা করে দেখা হবে, কিন্তু তারা এমন কোনও পরিকল্পনা করেনি যার মাধ্যমে এই বেসরকারি সংস্থাগুলো কোনওরকম স্বস্তির আশা করতে পারে, এবং তাদের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলা করতে পারে । যদি পারস্পরিকভাবে লাভজনক কোনও পথ না বের করা যায়, তাহলে দেশের টেলিকম সেক্টরগুলি আর থাকবে না ।

অচলাবস্থা কাটানো নিয়ে দোলাচলে রয়েছে টেলিকম সংস্থাগুলি

সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ভারতের মোবাইল ব্যবহারকারীরা প্রত্যেকে প্রতিমাসে গড়ে 11 গিগাবাইট ডেটা খরচ করেন, অনুমান করা হয়েছিল যে 2018 সালে দেশজুড়ে প্রতিমাসে 460 বিলিয়ন গিগাবাইট ডেটা খরচ হবে এবং 2024 সালে সেটা পৌঁছাবে প্রতিমাসে 1600 বিলিয়ন গিগাবাইটে । হাতের মুঠোর ইন্টারনেট সমেত স্মার্টফোন বিভিন্ন পরিষেবায় বৈচিত্র ও নিরাপত্তা নিয়ে এসেছে । ইন্টারনেট খরচ কমে যাওয়ায় অনুমান করা হচ্ছে যে, 2024 সালের মধ্যে দেশের স্মার্টফোনের সংখ্যা 110 কোটি ছাড়িয়ে যাবে । 2018 সালে দেশে ব্রডব্যান্ড গ্রাহকের সংখ্যা 61 কোটি; এটা নিশ্চিতভাবেই আগামী চার বছরে 125 কোটিতে পৌঁছবে । জিও-র আসার সঙ্গে সঙ্গে, এক জিবি ডেটা পৃথিবীর সর্বনিম্ন দামে, মাত্র 8 টাকায় পাওয়া যায় । এধরণের বাণিজ্যিক কৌশলের ফলে, 2017-2019 সালে টেলিকম সংস্থাগুলির আয় বিপুল প্রভাবিত হয়েছে । যার ফলে, সুপ্রিম কোর্ট 15টি সংস্থাকে এজিআর বকেয়ার মেটানোর নির্দেশ দিলেও, মাত্র তিনটিই বর্তমানে চালু রয়েছে । এদের মধ্যে ভোডাফোন জানিয়ে দিয়েছে, টেলিকম দফতরের হিসেব মতো 53000 কোটি টাকা মেটাতে হলে, তাদের সামনে ভারতে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না । সুদ এবং সুদ-সহ এরিয়ার সমেত লাইসেন্স ফি মেটানোর পাশাপাশি, টেলিকম সংস্থাগুলোকে সর্বশেষ নোটিস দেওয়া হয়েছে GST মিটিয়ে দেওয়ারও । এসবই বেসরকারি টেলিকম সংস্থাগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে । ভোডাফোনের দাবি, যদিও সেলুলার অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন বকেয়া এজিআরে ছাড়ের অনুরোধ করেছে, এই সংকটজনক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে গেলে ডেটার দাম সাত-আট গুণ বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই । বর্তমানে, যদি কেন্দ্রীয় সরকার এই পরিস্থিতি সামলাতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ন সম্পূর্ণ সফল হওয়া কঠিন ।

পনেরো বছর আগে, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুল কালাম তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিকম ক্ষেত্রের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন, কারণ তারা দেশের প্রতিটি জ্ঞানপিপাসু মানুষের কাছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুফল পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছিল । এটা শুধুই গ্রাহক সংখ্যা বাড়ানো নয়, পাশাপাশি তা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থানও উন্নত করেছে । যেখানে গ্রাহকদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা তথ্যপ্রযুক্তি এবং IOT (ইন্টারনেট অফ থিংস)-র ক্ষেত্রে নতুন অগ্রগতি ঘটাচ্ছে, মোবাইলে ফাইভ-জি প্রযুক্তি এইসব পরিষেবাকে সাধারণ মানুষের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসছে । 2018 সালের টেলিকম নীতিতে কেন্দ্র প্রস্তাব দিয়েছিল, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, ফাইভ-জি প্রযুক্তিকে সাধারণ মানুষের দরজায় পৌঁছে দেওয়া হবে । 2018-র অগাস্টে, ট্রাই প্রতি মেগা হার্জের বেস রেট ধার্য করেছিল 492 কোটি টাকা, তারা এই দর সংশোধন করতেও আগ্রহী নয় । বেসরকারি সংস্থাগুলির মধ্যে এয়ারটেল জানিয়ে দিয়েছে, যে তারা এই নিলামে অংশ নেবে না, কারণ ফাইভ-জি পরিষেবা দিতে প্রয়োজনীয় বিপুল পরিমাণে স্পেকট্রামের জন্য প্রয়োজনীয় 50 হাজার কোটিরও বেশি টাকা দিতে তারা অক্ষম । বিশ্বজুড়ে প্রায় 40টি টেলিকম সংস্থা ফাইভ-জি পরিষেবা দিচ্ছে । যদিও ভারতের টেলিকম সংস্থাগুলো আগেভাগে নিজেদের প্রস্তুত করতে পারেনি, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেয়নি, যাতে তারা আন্তর্জাতিক টেলিকম সংস্থাগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে । বলা হচ্ছে, যে পশ্চিমী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় চিনের তৈরি ফাইভ-জি প্রযুক্তিও ভারতের পক্ষে মানানসই । যদিও এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে ভারত সরকার এবং তার রাজনৈতিক কৌশলের উপর । একইসঙ্গে এটাও কেন্দ্রের ওপরেই নির্ভর করছে যে তারা ক্ষতির মুখে পড়া টেলিকম সংস্থাগুলোকে (এরিয়ার, বকেয়া এবং ফাইভ-জি পরিষেবার দাম কমে যাওয়ার ভারে পিষ্ট) সাহায্য করবে কি না, যাতে প্রয়োজনীয় ছাড়ের মাধ্যমে যদি সম্ভব হয়, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা শুধরে যেতে পারে । এতে ভবিষ্যতে ফাইভ-জি প্রযুক্তির মাধ্যমে লাভবান হতে এই সংস্থাগুলিকে বাঁচানো যাবে ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details