পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

COVID-19 প্যানডেমিক : কী করা উচিত রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ?

মহামারী এবং লকডাউনের ফলে বাজারে যে অবস্থা চলছে, ফলে দেউলিয়া হয়ে পড়ার ঝুঁকির মুখে থাকা সংস্থাগুলিকে কীভাবে ঋণ দিয়ে পুর্নজীবিত করা যায় এবং কীভাবে কয়েক মাসের জন্য ব্যক্তিগত ঋণ গ্রহণকারীদের কিস্তি স্থগিত রাখা যায়—এই লেখায় RBIকে সেই পরামর্শ দিয়েছেন পূজা মেহরা । পূজা দিল্লিনিবাসী সাংবাদিক এবং ‘দ্য লস্ট ডেকেড (২০০৮—১৮) : হাউ ইন্ডিয়াস গ্রোথ স্টোরি ডিভল্ভড ইনটু গ্রোথ উইথআউট এ স্টোরি-র লেখিকা । মতামত একান্ত ব্যক্তিগত ৷

Covid-19 Pandemic
কোভিড ১৯

By

Published : Mar 24, 2020, 1:49 PM IST

নয়াদিল্লি : ‘COVID-19’ প্যানডেমিক বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিকে মন্দার মুখে ফেলতে পারে । লকডাউনের প্রভাবে ব্যবসায় যে বাধা আসছে, তার ফলে প্রচুর সংস্থা, বিশেষত বিমান এবং পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত যারা, তারা সর্বস্বান্ত হয়ে যেতে পারে ।

ইতিমধ্যেই ভারতে বিমান পরিবহন, রেস্তরাঁ, হোটেল, MSME-গুলিতে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে । তবে সবচেয়ে জোরালো ধাক্কা খেয়েছে রপ্তানি ক্ষেত্র ।

এই প্যানডেমিকের ফলে বিশ্বব্যাপী পণ্যদ্রব্য রপ্তানি 50 বিলিয়ন ডলার হ্রাস পেতে পারে, পরিসংখ্যান পেশ করে এমনটাই জানানো হয়েছে রাষ্ট্রসংঘের বাণিজ্য এবং উন্নয়ন বিষয়ক সম্মেলনে । ভারতের ক্ষেত্রে এই হার প্রায় 348 মিলিয়ন ডলার । সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ের মুখে পড়তে চলেছে অ্যামেরিকা, ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া এবং চিনের সেই সব সংস্থা যারা আমদানিকৃত কাঁচামাল এবং রপ্তানি বাজারের উপর নির্ভরশীল ।

বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতি:

বিশ্বজুড়ে সোনা এবং দামি ধাতুসমূহের দামে ক্রমশ পতন ঘটছে, কারণ লগ্নিকারীরা নগদ টাকা ব্যয় না করে নিজেদের কাছে তা গচ্ছিত রাখছেন । অনিশ্চিত সময়ে জমানো নগদ অর্থ ‘নিরাপদ স্বর্গের সমান’ । নগদের অভাবে এই সময়ে বিশ্বব্যাপী আর্থিক চালিকাশক্তিরূপে যারা চিহ্নিত, তারা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে যতদূর সম্ভব সম্পত্তি বিক্রি করে দিচ্ছেন ।

স্টক মার্কেটগুলিতে এই বিক্রিবাট্টায় ধস নামায় ওয়াল স্ট্রিটে একদশকব্যাপী ‘বুল রান’-এ ইতি টেনেছে । লগ্নিকারীরা শুধু যে এই পরিবর্তনশীল বাজার ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন তাই নয়, তাঁরা তেল, ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি’, সোনা, রুপো এবং সোয়াবিনের মতো পণ্য বিক্রি করে দিচ্ছেন আর পরির্বতে নগদের বিনিময়ে নিরাপদ আর্থিক আশ্রয় খুঁজছেন । এর ফলে অর্থনৈতিক বাজার আরও আঁটোসাঁটো হচ্ছে ।

সুতরাং, বিশ্বের প্রধান কিছু কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক যেমন অ্যামেরিকান ফেডারেল রিজার্ভ, দ্য ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড, ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অফ জাপান, ব্যাঙ্ক অফ কানাডা এবং সুইস ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক একজোট হয়ে বাজারে নগদ অর্থের জোগান বাড়াতে সচেষ্ট হয়েছে, যাতে যথেষ্ট পরিমাণ নগদের উপস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সুষ্ঠু এবং সক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে ।

2008 সালের বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটের সময় যেমনটা ঘটেছিল, ঠিক সেই পথ অনুসরণ করে ‘দ্য ফেড’ বাজারে নগদ অর্থের জোগানের সমস্যা মেটাতে ‘কোয়ান্টিটেটিভ ইসিং’ (QE)-এর নতুন রাউন্ড চালু করেছে ।

এটি মুখ্য সুদের হার কমিয়ে একেবারে শূন্যে নামিয়ে দিয়েছে এবং অর্থনৈতিক বাজারে নগদের জোগান দিতে 700 বিলিয়ন ডলার ছেড়েছে ।

RBI-এর বর্তমান অবস্থান:

এই পথ অবলম্বন করার প্রয়োজনীয়তা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে এখনও তৈরি হয়নি । কারণ ভারতের অর্থনৈতিক বাজারে নগদ অর্থের জোগানের সমস্যা নেই । উলটে ভারতীয় অথনৈতিক পরিকাঠামো নগদ অর্থের জোগান সহজ এবং সাবলীলই রয়েছে ।

ভারতের অথনৈতিক বাজারে টাকার জোগান যাতে অবাধ থাকে তা নিশ্চিত করতে RBI তরফ থেকে 1 লাখ কোটি টাকার বিবিধ লং টার্ম রেপো অপারেশন (LTRO) চালু করা হয়েছে । এর লক্ষ্য অর্থনীতিতে মহামারীর প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করা ।

এছাড়াও RBI-এর মানিটরি পলিসি কমিটি COVID-19-এর ফলে সৃষ্ট অথনৈতিক সংকটের সঙ্গে লড়তে ‘পলিসি রেট কাট’-এর কথা ভাবনা চিন্তা করতে পারে । যদিও লকডাউন এবং আর্থিক অনিশ্চিয়তার এই সময়ে সুদের হার হ্রাস করে চাহিদা বাড়ানোর পন্থা একেবারেই ফলপ্রসূ হবে না ।

RBI কী করতে পারে?:

লকডাউনের ফলে যে সব সংস্থা দেউলিয়া হওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তাদের বাঁচাতে RBI-এর লক্ষ্য হওয়া উচিত, ঋণের ব্যবস্থা করে এদের পুর্নজীবন দেওয়া । মহামারীর ফলে সংকটাপন্ন ব্যবসায় ঋণের যোগান নিশ্চিত করলে বিক্রয় বাবদ শুল্ক হ্রাস পেলেও সংস্থাগুলি আর্থিকভাবে স্থিতিশীল থাকবে এবং কর্মচারীদের বেতন দিতে পারবে । এতে কর্মচারীদের দুর্ভোগ, উদ্বেগ হ্রাস পাবে এবং প্যানডেমিকের প্রভাব ধীরে ধীরে থিতিয়ে আসার পর পণ্য এবং পরিষেবার চাহিদাও ক্রমশ আগের মতোই বাড়তে থাকবে ।

যদিও লকডাউনের জেরে এই সংস্থাগুলি যথেষ্ট পরিমাণে শুল্ক সংগ্রহ করতেও সমস্যায় পড়বে । যার ফলে ঋণের অঙ্ক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে । সেক্ষেত্রে যাতে ঋণগুলি ‘নন-পারর্ফমিং অ্যাসেট’ হিসাবে ঘোষিত না হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করতে RBI-এর উচিত, সেইসব ঋণগ্রহীতা, যাঁরা ঋণ মেটাতে গিয়ে অসুবিধার মুখে পড়ছেন, তাঁদের বর্ধিত নজরদারির হাত থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া ।

এছাড়া প্যানডেমিকের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে ঋণের অঙ্ক যার মধ্যে ব্যক্তিগত ঋণও রয়েছে, তা পুনরুদ্ধার করার সময়সীমা কিছু মাসের জন্য স্থগিত করার অনুমতিও দিতে পারে RBI।

ABOUT THE AUTHOR

...view details