দিল্লি, 25 মার্চ : ভারতে প্রায় সাড়ে পাঁচশো জন আক্রান্ত ৷ মৃত্যুর সংখ্যা দশজনের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ায় COVID-19 সংক্রান্ত বিপদ এখন বাস্তব পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছে ৷ জীবন এবং অর্থনীতিতে এর পুরো প্রভাব আমরা হয়তো বুঝতে পারছি না ৷ কিন্তু আমরা এটা বুঝতে পারছি যে এই বিপদ আমাদের অনেক দূর টেনে নিয়ে যাবে এবং আমাদের অর্থনীতিকে সমস্যার মধ্যে ফেলবে ৷ COVID-19 প্যানডেমিকের প্রভাবে যে আমাদের দেশের প্রতিটি নাগরিককে বাস্তব সমস্যার সম্মুখীন করবে, তা 19 মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণের আগে দেশের মানুষ বুঝতেই পারেনি ৷ 22 মার্চ সফল ‘জনতা কারফিউ’য়ের পরের দিন মোদি রাজ্য সরকারগুলিকে লক ডাউন করার পরামর্শ দেন এবং সেগুলিকে যথাযথা মেনে চলার কথা বলেন ৷
দেশজুড়ে লকডাউন
আগামীদিনে ভারতকে স্বাধীনতার পর তাদের সবচেয়ে কঠিন লড়াই লড়তে হবে ৷ কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন এই রোগের ট্রান্সমিশন সাইকেল ভাঙতে সম্পূর্ণ লক ডাউন করতে বাধ্য হচ্ছে ৷ রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনীতি, একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত ৷ যখন কেউ বাড়ির বাইরে বেরোবে না, কোনও ব্যবসায়িক কাজ হবে না এবং সবকিছু দাঁড়িয়ে যাবে, তখনই এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে এই রোগের ছড়িয়ে পড়া আটকে দেওয়া যাবে ৷ কিন্তু এটা অর্থনীতির উপর চরম আঘাত হানবে ৷ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর কড়াকড়ি যত কমবে, অর্থনীতির উপর প্রভাব ততই কম হতে থাকবে ৷ অন্তত কিছুটা সময়ের জন্য তো বটেই ৷ যদিও অর্থনৈতিক লাভের তুলনায় মানুষের জীবনের দাম অনেক বেশি ৷ এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার মানুষের জীবন এবং জীবনযাত্রার সুরক্ষার জন্য করা পদক্ষেপের মধ্যে যথেষ্ট ভারসাম্য বজায় রেখে চলার চেষ্টা করছে ৷ যখন কোনও সংকট এবং আতঙ্ক তৈরি হয়, তখন সাধারণ মানুষ সরকারের মুখাপেক্ষী হয়েই থাকে ৷ মধ্যবর্তী পর্যায়ে যদি এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়, তাহলে অনেক সমস্যার সমাধানই সহজে করা যাবে ৷ অন্তত সরকারি আধিকারিক ও ব্যবসায়ীরা তাই বলছেন ৷ যদি এই সংকট দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাঘাতের প্রভাব সরকারি কোষাগারেও পড়বে ৷ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের নেতৃত্বে একটি টাস্ক ফোর্স গঠনের কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী ৷ ওই টাস্ক ফোর্স এই সংকটের নেতিবাচক দিকগুলি বিশ্লেষণ করবে এবং যে সমস্ত ক্ষেত্রগুলি চরম সংকটে পড়বে, তাদের জন্য রিলিফ প্যাকেজ তৈরি করবে ৷
ভারতীয় শেয়ার বাজারে একটা বড় আঘাত দেখা যাচ্ছে, রোজই সূচক নেমে যাচ্ছে ৷ অর্থনীতিবিদরা বলছেন, একদিন সবকিছু পুরোপুরি বন্ধ থাকা মানে সমস্ত উৎপাদন বন্ধ করে রাখা এবং এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকার GDP ৷ দশদিন কাজ বন্ধ করে রাখলে ৫ লাখ কোটি টাকা বা ৩.৪ শতাংশ প্রভাব পড়বে GDP-তে ৷
বিভিন্ন ক্ষেত্রের উপর প্রভাব
একদিকে যখন সরকার বৃহৎ ভাবে সাহায্যের পরিকল্পনা করছে, তখন প্রতিটি বড় শিল্পেরই কিছু নিজস্ব সমস্যা সমাধান করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে ৷ এই বন্ধের পরিস্থিতি শেষ হওয়ার পরই বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রভাব হিসেব কষে দেখা যাবে ৷ যেহেতু এটা রবি শস্য উৎপাদনের শুরুর সময়, তাই কৃষিক্ষেত্র এখন একটি দুর্বল পরিস্থিতিতে রয়েছে ৷ লক ডাউন লাগু হয়ে যাওয়ার পর যোগানে ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে ৷ যার ফলে কৃষকদের আয়ের উপর খারাপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ উৎপাদন শিল্প কাঁচামাল ঘাটতি এড়াতে সরবরাহের শৃঙ্খল তৈরি করার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ৷ ত্রাণের চাহিদা মেটানোর জন্য পরিকাঠামোর দিকে যদি সরকার সবকিছু বরাদ্দ করে, তাহলে স্টিল ও সিমেন্টের মতো শিল্পগুলি সমস্যায় পড়তে পারে ৷ যখন বিনিয়োগের পরিমাণ কম হয়, তখন চাকরির ক্ষেত্রই দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ৷ কিন্তু বর্তমানে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার জেরে বিমান শিল্প, হোটেল, রেঁস্তরা, পর্যটন, মল ও বিনোদন শিল্পের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে ৷