দিল্লি, 27 মার্চ : কোরোনা আতঙ্কে গোটা বিশ্ব । কার্যত স্তব্ধ অধিকাংশ দেশ । ধুঁকছে অর্থনীতি । ব্যাহত অধিকাংশ পরিষেবা । আম জনতা থেকে প্রধানমন্ত্রী কারও রক্ষে নেই এই মারণ ভাইরাসের কবল থেকে । কীভাবে পরিস্থিতির সামাল দেওয়া যাবে সে উত্তর আপাতত অজানা । শুধু সংক্রমণ প্রতিরোধে গৃহবন্দী হয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন মানুষজন ।
চিনের ইউহান আঁতুড়ঘর এই ভাইরাসের । ইতিমধ্যে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে চিনে । COVID19-র প্রভাবে ইট্যালি,জার্মান,স্পেন সহ ইউরোপের একাধিক দেশ বিধ্বস্ত । শুধুমাত্র ইট্যালিতেই 7000 জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে । একই পরিস্থিতি অ্যামেরিকাতেও । প্রায় প্রতিটি দেশ লকডাউনের পথে হাঁটছে । ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন থেকে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী বাদ নেই কেউ । অনেক রাষ্ট্রপ্রধানরা নিজেরাই কোয়ারান্টাইনে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । ক্রীড়া, সেলুলয়েড রাজনীতি নানা ক্ষেত্রের বিশিষ্টরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত । কেউ বা সেলফ কোয়ারান্টাইনে কেউ বা আটকে পড়েছেন অন্যদেশে । বিশ্বজুড়ে এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে ৷ মৃতের সংখ্যা 20 হাজারেরও বেশি ৷ প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানেও ইতিমধ্যে ১২০০-র বেশি আক্রান্ত । মৃতের সংখ্যা ১২-র বেশি ।
দেশের অবস্থাও একই । কোরোনায় মৃত বেড়ে 18 ৷ 700 পেরিয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা । কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের তরফে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সুস্থ হয়ে উঠেছেন 66 জন । বাকিরা চিকিৎসাধীন । কিন্তু সংখ্যাটা খুব একটা ভালো নয় । COVID-19 ছড়িয়ে পড়ার জেরে গরিব মানুষের উপর যে প্রভাব পড়েছে, তা সামলাতে গতকাল কেন্দ্রীয় সরকার 1.7 লাখ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ৷ গরিব মানুষ, পরিযায়ী শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, সংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মী-সহ দেশের 80 কোটি জনগণ ও কর্মীদের খাদ্যশস্যের ব্যবস্থা করার জন্য চালু করা হল প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনা (Prime Minister Poor People Welfare Package) ৷ কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যে সমস্ত কর্মী, নার্স, চিকিৎসকরা লড়াই করছেন তাঁদের জন্য 50 লাখ টাকার স্বাস্থ্যবিমার ঘোষণাও করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ৷ প্রায় 1.4 লাখ কোম্পানি দিচ্ছে ওয়ার্ক ফ্রম হোম সুবিধা । আজ RBI-র তরফে গ্রাহক ও আমানতকারীদের জন্য রেপো রেট সহ ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে মাস তিনেকের স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে । দেশের রেল, বিমান গণপরিবহন সমস্ত পরিষেবা বন্ধ । এবার ট্রেনের কামরার মধ্যেই আইসোলেশন ওয়ার্ড বানানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে । কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে বারবার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হচ্ছে । সাধারণ মানুষদের সচেতন করা হচ্ছে । নানাভাবে সচেতনতা মূলক প্রচার চলছে ।
রাজ্যগুলিও একযোগে লড়াই করছে। হাসপাতালগুলিতে আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হচ্ছে । রাজ্যগুলির মধ্যে ভয়াবহ পরিস্থিতি মহারাষ্ট্র ও কেরালায় । পাশাপাশি পঞ্জাব, তেলেঙ্গানা, গুজরাত, অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ সহ একাধিক রাজ্য এই ভাইরাসের থাবায় জর্জরিত । এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে ১৫ জন আক্রান্ত । পঞ্জাবের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে জানানো হচ্ছে, একজন আক্রান্তের কাছ থেকে প্রায় পঁচিশ জন আক্রান্ত হয়েছে। রাজ্যের হাসপাতালগুলিকে কোরোনা নির্ণয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে । স্থানীয় প্রশাসন এলাকায় তৎপর হয়ে মানুষজনকে সচেতন করছে । রাস্তাঘাট, বাজারে ভিড় জমলেই কড়া হচ্ছে কড়া পদক্ষেপ । লকডাউন নির্দেশ অমান্য করায় অনেককে আটক করা হচ্ছে । অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে । কোথাও আবার পরিস্থিতির সামাল দিতে, সংক্রমণের ভয়ে সংশোধনাগার থেকে প্যারোলে ছাড়া হচ্ছে বন্দীদের । এককথায় এক অস্থির পরিস্থিতিতে পুরো দেশ তথা বিশ্ব ।
কয়েকদিন আগে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছিলেন, এই কোরোনার সংক্রমণ চেন ভাঙতে আমাদের গৃহবন্দী থাকাই একমাত্র উপায়। আপাতত খেলা, বিনোদন, ব্যবসা, পরিবহন,শিল্প সমস্ত কিছু বন্ধ । বিশ্ব লড়ছে ভাইরাস মোকাবিলায় । অপেক্ষা সেই ভোরের যেদিন আবার তাঁদের প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন মানুষজন । বাড়ি থেকে স্বচ্ছন্দে রাস্তায় বেরোতে পারবেন । টেলিভিশন বা খবরের কাগজ উলটে আর গুনতে হবে না মৃত্যুর সংখ্যা ।