পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

কৃষিক্ষেত্রে বিপর্যয় কমাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ভেজাল বীজ চক্রগুলি - Indian farming sector news

একদিকে চাষিরা এই ভেজাল বীজ কিনে নিজেদের বিনিয়োগ তথা উপার্জনের ক্ষেত্রে লোকসান ডেকে আনছেন । তারই ফলে উৎপাদনে ক্ষতির জেরে গলা ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়ছেন তাঁরা। অন্যদিকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং খাদ্য নিরাপত্তা এর দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে । এই দুরবস্থার জন্য যারা দায়ি তাদের গুরুতর শাস্তি দেওয়া উচিত ।

seeds
seeds

By

Published : Jun 5, 2020, 4:38 PM IST

হায়দরাবাদ, 5 জুন : বর্ষার আবির্ভাব এবং তার আগে হওয়া প্রাক বৃষ্টি চাষিদের জানান দেয়, বীজতলার জন্য মাটি প্রস্তুত করে রাখার সময় এসে গেছে । অতীতে এবং এই বছরও চাষিরা নিজেদের কাছে থাকা বীজের গুণমান নিয়ে উদ্বিগ্ন । সময়ের মধ্যে বীজতলার কাজ শেষ করার প্রয়োজনীয়তার সুযোগ নিয়ে চাষিদের ফাঁদে ফেলতে বাজারে আবার প্রতারকরা জাল বিছিয়েছে । সম্প্রতি মাঞ্ছির‌্যাল, কাগজনগর এবং শাদনগরে মজুত থাকা ভেজাল কার্পাস বীজের ঘটনা সামনে আসার পর করিমনগরেও ফের একই ঘটনা ঘটেছে ।

হায়দরাবাদ, করিমনগর থেকে ভেজাল বীজ সরবরাহ করার খবর পেয়ে পুলিশ হানা দেয় এবং 18 কুইন্টালের মতো ভেজাল কার্পাস বীজ উদ্ধার করে । জুলাইয়ে টাস্ক ফোর্স 16 বার হানা দিয়ে ভেজাল বীজ সরবরাহের ঘটনা প্রকাশে্য আনে । ট্রেনে বীজগুলি অন্ধ্রপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্র হয়ে তেলাঙ্গানার নানা অংশে পাঠানো হচ্ছিল । গুন্টুর, প্রকাসম, খাম্মাম, নালগোন্দা, ওয়ারাঙ্গল এবং অনন্তপুরের মতো জেলায় ভেজাল বীজ সরবরাহ করার অভিযোগ বছরের পর বছর বেড়েই চলেছে । তবে শুধুমাত্র এই দুই তেলুগু রাজে্যই এই ধরনের ঘটনা সীমাবদ্ধ নয় ।

একজন চাষির থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়ে লুধিয়ানা (পঞ্জাব) পুলিশ সম্প্রতি ভেজাল বীজ সংক্রান্ত একটি বড়সড় দুর্নীতিচক্র ভেস্তে দিয়েছে । ওই চাষি পুলিশকে জানিয়েছিলেন, চক্রটির আওতায় বীজগুলি 125 টাকা প্রতি কেজির বদলে 200 টাকা প্রতি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে । গত মাসে কর্নাটকের ধারওয়াড়, বল্লারি এবং হাভেরিতে অভিযান চালিয়ে অন্তত এক কোটি টাকা মূল্যের ভেজাল বীজ উদ্ধার করা হয়েছে । আর এই ঘটনাই প্রমাণ করে যে, সীমানা পেরিয়ে এই কুখ্যাত চক্র বর্তমানে একাধিক রাজ্যে জাল বিস্তার করে ফেলেছে । এই চক্রের সঙ্গে যারা যারা জড়িত, তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে–এই মর্মে দাবি করা হলেও দেশে বছর বছর এই দুঃখজনক ঘটনা অবাধে ঘটেই চলেছে ।

তেলাঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাও সম্প্রতি বলেছেন, ভেজাল বীজের কারবারিরা আদপে কৃষক—ঘাতক । এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, নকল বীজের কারবার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে দেওয়া উচিত । এই ধরনের অসামাজিক কারবারিদের বিরুদ্ধে "প্রিভেনটিভ ডিটেনশন অ্যাক্ট"—এর আওতায় অভিযোগ দায়ের করা উচিত এবং তাদের জেল হওয়া উচিত । মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং কাজেও তা করে দেখানো হয়েছে । এমনকী, 1966 সাল থেকে উচ্চমানের বীজ ব্যবহার করা সংক্রান্ত নিয়ম—নির্দেশিকায় আনা সংশোধনীসমূহ গোটা দেশেই বিস্তৃত । কঠোর আইন হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল এই বিলকে কিন্তু গত 16 বছর ধরে সেটি প্রস্তাবের স্তরেই পড়ে রয়েছে ।

অন্তর্দেশীয় স্তরে এখনও উচ্চ গুণমানের বীজ প্রাপ্তির কোনও নিশ্চয়তা নেই । চাষিরা কোনও ক্ষতির মুখে পড়লে তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও কোনও আশ্বাস নেই । বীজ নিয়ে গবেষণার অধিকার কিংবা মৌলিক কোনও পরিকাঠামো ছাড়াই এবং অন্যান্য নানা ধরনের কৌশলগত বোঝাপড়ার অভাব নিয়েই বহু মানুষ নিজেদের সংস্থা গড়ে তুলছেন এবং বীজের কারবারে নেমে পড়ছেন । অন্যদিকে আবার, বহু লোভী এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যবসায়ীরা দ্রুত টাকা উপার্জনের জন্য নিকৃষ্ট মানের এবং নকল বীজ চাষিদের বিক্রি করে প্রতারণা করছেন । আর এতে চাষের পাশাপাশি চাষিদেরও ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে ।

অনেক রাজ্যই বর্তমানে পঙ্গপাল তাড়াতে প্রস্তুতি নিচ্ছে । কারণ পঙ্গপাল ফসল ধ্বংস করে ফেলছে । কিন্তু ভেজাল বীজের কারবার প্রতি বছর যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি আর বিপদ ডেকে আনছে, তা এর তুলনায় কোনও অংশে কম তাৎপর্যপূর্ণ কিংবা কম গুরুতর নয় ।

চাষিরা এই ভেজাল বীজ কিনে নিজেদের বিনিয়োগ তথা উপার্জনের ক্ষেত্রে অবধারিত লোকসান ডেকে আনছেন । আবার উৎপাদনে ক্ষতির জেরে ঋণে জর্জরিত হচ্ছেন । অন্যদিকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং খাদ্য নিরাপত্তা এতে ব্যাপক হারে প্রভাবিত হচ্ছে । এই দুরবস্থার জন্য যারা দায়ি, তাদের অপরাধী হিসেবে গণ্য করা উচিত এবং গুরুতর শাস্তি দেওয়া উচিত । কঠোর আইন, নিয়ম—নির্দেশিকা প্রণয়ন করা উচিত এবং গোটা দেশে তা কার্যকর করা উচিত যাতে ভেজাল বীজ তৈরি করা বা বিক্রির ভাবনা উদয় হলেই যেন মানুষ শাস্তির ভয়ে কেঁপে ওঠে এবং এই ধরনের কাজ করা থেকে বিরত থাকে । যে সংস্থা নকল বীজ তৈরি করছে এবং যে সব আধিকারিকরা গুণমান পরীক্ষায় সেগুলিকে শংসাপত্র দিয়ে উতরে দিচ্ছেন, তাঁদেরও সমান শাস্তি হওয়া উচিত । শুধু তাই নয়, চাষিদের ক্ষতির অঙ্কের সম্পূর্ণটাই ওই সব সংস্থা এবং আধিকারিকদের কাছ থেকে আদায় করা উচিত । কেবলমাত্র তাহলেই কৃষিক্ষেত্রের এই বিপর্যয় কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে এবং পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details