পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

মণিপুর-মিজ়োরামে অব্যাহত চিনা সোনা, সুপারি পাচার - চিনা সোনা পাচার

পাচারকারীরা কেন চিনা সোনার দিকে বেশি ঝুঁকছে ? কারণ মায়ানমারে এটি সহজেই পাওয়া যায় এবং ভারতীয় বাজারের তুলনায় দামও অনেক কম । ভারতে সোনা থেকে সরকারি হিসেব অনুযায়ী, 10 ​​শতাংশ কর আসে এবং এর সঙ্গে 3 শতাংশ GST । পাশাপাশি, শুকনো সুপারি পাচার করে এক বছরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয় বলে সূত্রের খবর । সেই থেকেই সুপারি পাচারের দিকে আকর্ষিত হচ্ছে পাচারকারীরা । প্রতিবেদনটি লিখেছেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক সঞ্জীব কুমার বড়ুয়া ।

Smuggling of Chinese gold
প্রতীকী ছবি

By

Published : Sep 20, 2020, 7:38 PM IST

দিল্লি, 20 সেপ্টেম্বর : কোরোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে মার্চের 24 তারিখ থেকে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করা হয় । স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা দেশ । তবে কমেনি পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য । মায়ানমার থেকে চিনা সোনা, বা সুপারি পাচার থেকে শুরু করে আফিম ও অন্যান্য মারাত্মক ড্রাগ । সবই চলছে ।

গত সপ্তাহে এক পাচারকারী নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত প্যারামিলিটারি জওয়ান হিসেবে পরিচয় দিয়ে মিজ়োরামের সীমান্তে চেকপোস্ট দিয়ে তার ট্রাক পার করানোর চেষ্টা করেছিল । সেই পাচারকারী নিজের কথায় প্রায় প্রভাবিত করে ফেলেছিল অসম রাইফেলসের ডিরেক্টর জেনেরালকে ।

এ-বিষয়ে প্রতিরক্ষা বিষয়ক এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “ ডিরেক্টর জেনেরালের সঙ্গে ভিডিয়োয় কথা বলার পর পাচারকারী কিছুটা ঘাবড়ে গেছিল । তাড়াহুড়োয় সে ভুল করে সোনার গয়না ভরতি একটি প্যাকেট ওখানেই ফেলে রেখে যায় ।”

অসম রাইফেলসের পরিসংখ্যান অনুসারে, লকডাউনের পর থেকে কেবলমাত্র মিজ়োরামেই সুপারি, হেরোইন, নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ইত্যাদি মিলিয়ে 50 কোটি টাকারও বেশি পাচার সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে । এ সময়ের মধ্যে 39 জন মায়ানমারের নাগরিক এবং 96 জন মাদক পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মায়ানমার-মিজ়োরাম সীমান্ত থেকে অসম রাইফেলস গত দুই বছরে 800 কেজিরও বেশি সোনা বাজেয়াপ্ত করেছে । যদিও অনুমান করা হয় যে পাচার হওয়া সোনার মাত্র 5-10 শতাংশ বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হয়েছে । মিজ়োরামে যে সোনা পাচারচক্র সক্রিয় রয়েছে, তাদের কাছে 4,000-8,000 কেজি সোনা থাকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, 250 বছরেরও পুরানো অসম রাইফেলস হল একটি প্যারামিলিটারি বাহিনী যা ভারত-মায়ানমার সীমান্ত পাহাড়া দেওয়ার কাজে নিযুক্ত ।

কয়েক বছর আগে পর্যন্ত, অরুণাচলপ্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর এবং মিজ়োরাম বরাবর ভারত-মায়ানমার আন্তর্জাতিক সীমান্তের ঘন জঙ্গলকে কাজে লাগিয়ে AK-47 এবং M -16-এর মতো অস্ত্র পাচার করা হত । উত্তর-পূর্বে জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িতদের এই অস্ত্র পাঠানো হত বলে খবর ।

কিন্তু এখন মায়ানমারের গোপন কারখানায় উৎপাদিত ড্রাগের পাশাপাশি চিনের খনি থেকে তোলা উৎকৃষ্ট মানের সোনা এবং মিয়ানমার থেকে শুকনো সুপারি ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে আসে । পরে দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরুর মতো ভারতের প্রধান শহরগুলিতে পাঠানো হয়, যেখানে চাহিদা ও লাভ অনেক বেশি ।

সেনা সূত্রে খবর, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে জঙ্গি কার্যকলাপ কমার ফলে অবৈধ অস্ত্রের চাহিদা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে । মণিপুর ও মিজ়োরাম সীমান্তে বিশেষত মোরেহ (চ্যান্ডেল, মণিপুর) এবং জোখাওয়াতারের (চম্পাই, মিজ়োরাম) হয়ে চিনা সোনা ভারতে পাচার করা হয় । বেআইনি অস্ত্র পাচারের চক্রটি এখন অরুণাচল প্রদেশ এবং নাগাল্যান্ডের দিকে চলে গেছে । মাদকের পাশাপাশি চোরাচালানকারীরা এখন সোনার দিকে ঝুকেছে এবং সুপারি এখন আরও বেশি লাভজনক ।

বিশ্বে সোনার সবচেয়ে বেশি উত্তোলন হয় চিন থেকে । প্রায় 11 শতাংশ । আর গ্রাহকের দিক থেকে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। চিনের অন্যতম বড় সোনার খনির বেল্ট ইউনান প্রদেশে, যা মায়ানমার সীমান্তের কাছেই । আর ভারতের সীমান্ত থেকেও খুব বেশি দূরে নয় ।

মিজ়োরাম চোরাচালানকারীদের পক্ষে সেরা বাজি কারণ এটি । পূর্বে মায়ানমারের সঙ্গে এবং পশ্চিমে বাংলাদেশের সাথে দীর্ঘ সীমান্ত তাঁদের কাজকে আরও সহজ করে দেয় । কিন্তু পাচারকারীরা কেন চিনা সোনার দিকে বেশি ঝুঁকছে ? কারণ মায়ানমারে এটি সহজেই পাওয়া যায় এবং ভারতীয় বাজারের তুলনায় দামও অনেক কম । ভারতে সোনা থেকে সরকারি হিসেব অনুযায়ী, 10 ​​শতাংশ কর আসে এবং এর সঙ্গে 3 শতাংশ GST ।

পাশাপাশি, শুকনো সুপারি পাচার করে এক বছরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয় বলে সূত্রের খবর । সেই থেকেই সুপারি পাচারের দিকে আকর্ষিত হচ্ছে পাচারকারীরা ।

এই সূত্র আরও জানিয়েছে, 1984 সাল থেকে মিজ়োরামের মাদক সেবনের কারণে প্রতি বছর গড়ে 44 জন প্রাণ হারায় । প্রধান ড্রাগগুলির মধ্যে একটি হ'ল কুখ্যাত ‘ইয়াবা’ ট্যাবলেট যা মায়ানমারের ওয়া রাজ্যে তৈরি হয়। তাঁর কথায়, “শুধুমাত্র 2019 সালেই 54 জন মারা গেছেন । ড্রাগগুলি সরাসরি ব্যবহারের মাধ্যমে বা চুরি, ডাকাতি এবং অপরাধের কারণে রাজ্যের যুব সমাজ পুরো ফাঁপা হয়ে গেছে । 2012 সালে মাদক সংক্রান্ত অভিযোগে মোট 3254 জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল । ”

মোরেহ থেকে ইম্ফল যাওয়ার পথে মায়ানমার সীমান্তের নিকটবর্তী আসাম রাইফেলস-পরিচালিত স্পর্শকাতর খুদেনগাথাবি ফাঁড়ি । এই ফাঁড়িটি থেকে ভারতের সবথেকে বেশি পাচার সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করার রেকর্ড রয়েছে । এলাকায় চোরাচালন বন্ধ করতে প্রতিদিন প্রায় 300 টি গাড়ি এবং 2,000 যাত্রীকে পরীক্ষা করা হয় । সূত্রের খবর, 2019 সালে 125 বার বাজেয়াপ্ত করার ঘটনা ঘটেছিল, সেই সময়ে অসম রাইফেলস দ্বারা 500 কোটি টাকার নিষিদ্ধ এবং যুদ্ধসামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছিল ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details