দিল্লি, 12 অক্টোবর : পরিস্থিতি পালটে গেল মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ৷ কাশ্মীর থেকে 370 এবং 35 এ ধারা তুলে নেওয়ার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে সরব ছিল ইসলামাবাদ ৷ পিছন থেকে তাদের মদত দিচ্ছিল বেজিং ৷ স্বাভাবিকভাবেই চিনা রাষ্ট্রপ্রধান শি চিনপিংয়ের ভারত সফর ঘিরে বুক বেঁধে ছিল ইমরান খান প্রশাসন ৷ কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে চিনপিংয়ের দ্বিতীয় বৈঠকের নির্যাস ইসলামাবাদের পক্ষে নিঃসন্দেহে বড় ধাক্কা ৷ মোদি-চিনপিংয়ের দ্বিতীয় বৈঠকে কশ্মীর প্রসঙ্গ নিয়ে একটি কথাও আলোচনা হল না ৷ বিদেশমন্ত্রক সূত্রে খবর, কাশ্মীর প্রসঙ্গটি বাদ দিয়ে মূলত দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়েই আলোচনা হয়৷ দুই প্রতিবেশী দেশ সিদ্ধান্ত নিল, বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ দমনে তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করবে । বাণিজ্য, যোগাযোগ, পর্যটন ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করার দিকেও অঙ্গীকার করল দুই দেশ ৷
গতকালই দু'দিনের সফরে ভারতে এসেছিলেন চিনপিং ৷ প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে দু'দফায় বৈঠক করেন তিনি ৷ আজ বিদেশ সচিব বিজয় গোখলে বৈঠকের মূল বিষয়গুলো তুলে ধরেন ৷ গোখলে জানান, মূলত বাণিজ্য নিয়েই আলোচনা হয়েছে ৷ বিদেশ সচিবের কথায়, "কাশ্মীর বিষয়টি পুরোপুরি অভ্যন্তরীণ ৷ অন্য কোনও বিদেশি রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ আমরা যে মেনে নেব না, তার এর আগেও বার বার স্পষ্ট করেছি ৷ কাশ্মীর নিয়ে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট ৷ চিনপিংয়ের সফরের শুরুতেই কাশ্মীর নিয়ে আমাদের অবস্থান আরও একবার জানিয়ে দিয়েছিলাম ৷ আমরা খুশি, বেজিং আমাদের অবস্থানকে সম্মান দিয়েছে ৷"
সন্দেহ নেই, চিনপিংয়ের এই নীরবতা ইসলামাবাদের অস্বস্তি বাড়াল ৷ কাশ্মীরকে পাকিস্তান বারবারই আন্তর্জাতিক সমস্যা বলে দেখাতে চায় । কিন্তু, ভারতের অবস্থান ঠিক বিপরীত৷ ভারত এই বিবাদকে দ্বিপাক্ষিক সমস্যা বলে মনে করে । 1972 সালের শিমলা চুক্তিতে কাশ্মীরকে দ্বিপাক্ষিক বিষয় বলেই মেনে নিয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান । সেই চুক্তি এবং লাহোর ঘোষণাপত্রই আলোচনার ভিত্তি হওয়া উচিত বলে মনে করে ভারত ।
ভারত ও চিন, দুই দেশের কাছে প্রধান চ্যালেঞ্জ সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদ । তা দমন করতে যৌথভাবে কাজ করতে হবে দুই দেশকে ৷ দুটি দেশই খুব বৈচিত্রপূর্ণ ৷ নানা ধর্ম, সংস্কৃতির মানুষ একইসঙ্গে বাস করে ৷ সেক্ষেত্রে যৌথভাবেই সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদের মোকাবিলা করতে হবে দুই দেশকে ৷ যাতে এই বিষয়গুলি মাথাচাড়া দিয়ে না ওঠে এবং সমাজের উপর প্রভাব বিস্তার করতে না পারে ৷ সন্ত্রাসবাদ দমনের পাশপাশি দুই দেশের বাণিজ্যিক পরিস্থিতি নিয়েও আলাপ-আলোচনা হয় ৷ আলোচনা হয় নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্র খুঁজে বার করা নিয়ে ৷ চিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করা, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ঘাটতি, বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলিকে চিহ্নিত করা সহ একাধিক ইশুতে কথা বলেন মোদি ও শি চিনপিং ৷
প্রথম দিকে কাশ্মীর নিয়ে সামান্য কিছু মন্তব্য করলেও ক্রমেই নিজেদের অবস্থান বদল করে বেজিং ৷ ইমরান খান কাশ্মীর সমস্যাকে আন্তর্জাতিক বিষয় করে তুলতে চাইলেও বেজিং মনে করে এটি একান্তই ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক বিষয় । আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি তাদেরই মেটাতে হবে । কূটনৈতিক মহলের মত, কাশ্মীর নিয়ে দূরে থাকার নীতি নিয়ে বেজিং দিল্লির সামনে একটা বার্তা দিতে চাইছে ৷ কাশ্মীর ইশুতে হস্তক্ষেপ না করে চিন বার্তা দিতে চাইল, দিল্লি যেন তিব্বত ও তাইওয়ানকে চিনের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে স্বীকার করে নেয় ৷