পটনা, 27 মে : গায়ে শুধু একটা জামা । চুল উসকো-খুসকো । চোখে-মুখে ধকলের চিহ্ন । সেই অবস্থাতেই নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে শুয়ে থাকা এক যুবতির গা থেকে চাদর টেনে চলেছে একরত্তি শিশু । আধো আধো গলায় ক্রমাগত "মা" বলে ডেকে চলেছে । কিন্তু সামনে শুয়ে থাকা ওই যুবতি চোখও খুলছেন না । আর ওই শিশুর "মা" ডাকে সাড়া দিয়ে তাকে কাছে টেনেও নিচ্ছেন না । বিহারের মুজফ্ফরপুর স্টেশনের এরকম একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে ।
ওই ভিডিয়ো দেখে প্রথমে খানিকটা বিভ্রান্ত হতেই পারেন যে কেউ । কারও হয়তো মনে হতে পারে, কী নিষ্ঠুর মা ? শিশুটা এত বার করে ডাকছে তবুও সাড়া দিচ্ছে না । কারও মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে তবে, কি ওই যুবতি শিশুটির মা নন । কিন্তু বাস্তব হল, ওই যুবতি শিশুটিরই মা । তিনি নিষ্ঠুর "মা" বলে সাড়া দিচ্ছেন না তেমনটা নয় । আসলে ওই যুবতি মৃত । শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে করে নিজের রাজ্য বিহারের মুজফ্ফরপুর স্টেশনে নামতেই গরম, খিদে আর তৃষ্ণার জেরে প্রাণ হারান । তারপর থেকে স্টেশনেই পড়ে আছেন তিনি । আর ঠিক তখন থেকেই মা ঘুমিয়ে আছে ভেবে তাঁর গায়ে থাকা চাদর টেনে জাগানোর চেষ্টা করছে ওই একরত্তি শিশু । পরে এক নাবালক এসে ওই শিশুকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায় ।
ওই যুবতি রবিবার গুজরাট থেকে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে বিহারের পথে রওনা দেন । ট্রেনে খাবার ও জলের অভাবে অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন । তারপর সোমবার সকালে বিহারের মুজফ্ফরপুরনগর স্টেশনে ট্রেন থেকে নামতেই মাটিতে পড়ে যান তিনি । পরে জানা যায়, মৃত্যু হয়েছে ওই যুবতির ।
সদ্য মাকে হারিয়ে স্টেশনের এক কোণে দাঁড়িয়ে শিশু সোমবার মুজফ্ফরপুর স্টেশনেই গরম ও খাদ্যের অভাবে এক দু'বছরের শিশুর মৃত্যু হয় । দিল্লি থেকে রবিবার শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে ওই শিশুকে নিয়ে রওনা দিয়েছিল পরিবার ।
কোরোনা সংক্রমণ থেকে দেশবাসীকে বাঁচাতেই লকডাউন ঘোষণা করেছিল সরকার । কিন্তু সরকারের সেই সিদ্ধান্তই যেন বার বার প্রশ্নের মুখে পড়ে যাচ্ছে । কোরোনা থেকে মানুষকে বাঁচাতে বাস্তবে সরকার কতটা সফল তা এখনও অজানা । তবে, কোরোনা সংক্রমণ রুখতে সরকারের করা পদক্ষেপের মধ্যে যে খামতি রয়েছে তাই বার বার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে এই ঘটনাগুলি। তাই তো কখনও মুম্বইয়ে শ্রমিকদের পিষে দিয়েছে মালগাড়ি । কখনও উত্তরপ্রদেশে লরির তলায় চাপা পড়তে হয়েছে শ্রমিকদের । কখনও মৃত আট মাসের ছেলেকে শেষ বারের মতো দেখতে না পাওয়ার কষ্ট বুকে নিয়ে দিল্লির ফ্লাইওভারের নিচে অসহায়ভাবে কাঁদতে হয়েছে বেগুসরাইয়ের রামপুকারকে । আর এবার মাতৃত্বের টান বোঝার আগেই মা-কে হারাল এক ছোট্ট শিশু। এরপরেও কি ফের উঠে দাঁড়াতে পারবে দেশ । না কি প্রিয়জনের হারানোর এই তালিকা আরও বাড়বে । উত্তর লুকিয়ে সময়ের অন্তরালে ।