বিশ্বজুড়ে বেড়েই চলেছে কোরোনা প্যানডেমিকের দাপট । ইতিমধ্যেই এই মারণ ভাইরাসের ছোবলে আক্রান্ত 1 কোটি 30 লাখেরও বেশি মানুষ । এর প্রায় এক চতুর্থাংশ আক্রান্ত রয়েছেন শুধুমাত্র অ্যামেরিকাতেই । প্রায় 19 লাখ আক্রান্ত নিয়ে ব্রাজিলের স্থান অ্যামেরিকার ঠিক পরেই । আর তার ঠিক পরেই 9 লাখেরও বেশি আক্রান্ত নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত । বর্তমানে ভারতে প্রতিদিন যে পরিমাণে কোরোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলছে , তা যথেষ্টই চিন্তার । সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন , অদূর ভবিষ্যতে কোরোনার বিরুদ্ধে লড়াই শেষ হবে না । শতকের ভয়ঙ্করতম স্বাস্থ্যসঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে সাধারণ মানুষের প্রস্তুতি বিস্ময়কর । কয়েকদিন আগে পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলেছিল , কোরোনা ভাইরাস শুধুমাত্র কাশি ও হাঁচির মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটায় । কিন্তু সম্প্রতি তারা বলেছে , আমাদের কথা বলার সময় যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ড্রপলেট বের হয়, তার থেকেও ছড়াতে পারে এই ভাইরাস । অর্থাৎ এই ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে । আমরা সবাই জানি , কাশি ও হাঁচির মাধ্যমে ভাইরাসের এক শরীর থেকে অন্য শরীরে ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতেই লকডাউন জারি করা হয়েছে । প্রার্থনা সভা, সিনেমা হল, মিউজিয়াম, জিম ইত্যাদি বন্ধ রাখা হয়েছে এই কারণেই । কিন্তু এই সব বিধিনিষেধ সত্ত্বেও মানুষ নাগাড়ে নিয়ম ভেঙে চলেছেন । এর ফলেই বেড়ে চলেছে সংক্রমণের পরিমাণ । বিশেষজ্ঞরা প্রথম থেকেই সঠিকভাবে মাস্ক পরা ও খোলা জায়গায় থুতু না ফেলার বিষয়ে সতর্ক করেছেন । কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও নিয়ম ভাঙা রোখা যাচ্ছে না । পরিসংখ্যানবিদরা বলছেন , কোরোনায় আক্রান্ত বহু মানুষ এখনও খোলা রাস্তায় মাস্ক ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছেন ৷ ফলে হু হু করে বেড়ে চলেছে সংক্রমণ । এই ভয়ঙ্কর গাফিলতির জন্য অদূর ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে । এই ধরনের মানুষদের নিয়মের সম্মান করতে হবে এবং নিজের ও সমাজের ভালোর জন্য বিধিনিষেধ মেনে চলতেই হবে ।
অসতর্কতা থেকে হতে পারে বিপদ
কোরোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হলে সামাজিক দায়িত্ব পালন করা খুবই প্রয়োজন ৷ এই প্যানডেমিকের সময়ে যদি মানুষ নিজেরা সচেতন না হয় তবে, আসতে পারে আরও বড় বিপদ ৷ তার সচেতনতাই এখন একমাত্র উপায় কোরোনা প্রতিরোধে ৷
কোরোনার বিরুদ্ধে এই ভয়ঙ্কর যুদ্ধে জেতার জন্য প্রধানমন্ত্রী যখন মানুষকেই মূল শক্তি হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন ৷ তখনও কিছু মানুষের এই ধারণাই হয়েছে , " একজন স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ালে কিছুই হবে না । আমার একার জন্য কিছুই সমস্যা হবে না । " একজনের এই ধরনের ধারণার জন্য বহু মানুষ একসঙ্গে বিপদে পড়তে পারে । এখনও পর্যন্ত স্রেফ মাস্ক না পরার জন্য জরিমানা বাবদ ওড়িশা পুলিশ প্রায় এক কোটি টাকার কাছাকাছি সংগ্রহ করেছে । কোরোনা সংক্রান্ত নিয়মাবলী সঠিকভাবে পালন না করার জন্য দিল্লিতেও পুলিশ এক কোটি টাকার বেশি সংগ্রহ করেছে । আগ্রায় প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছে , কঠোরভাবে লকডাউনের নিয়ম না মানলে ফের 14 দিনের জন্য লকডাউন জারি করা হবে । অন্যদিকে, মাস্ক না পড়ার অপরাধে কেরল সরকারের তরফে নতুন শাস্তির কথা ঘোষণা করা হয়েছে । জনসমক্ষে থুতু ফেলা ও মাস্ক না পরার শাস্তি হিসাবে 10 হাজার টাকা জরিমানা ও 2 বছরের কারাবাসের মতো কঠিন শাস্তির কথা ভাবছে পিনারাই বিজয়ন সরকার । সাধারণ মানুষকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাজ্যের পুলিশ তাদের জরিমানা করলে বা শাস্তি দিলে বিষয়টি খুবই অসম্মানের হবে । নিজেদের সামাজিক দায়িত্ব সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল না হলে এইভাবে তাঁর কর্তব্য মনে করিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকে না । নিয়ম না মেনে মানুষ নিজেরাই নিজেদের জন্য সমস্যা ডেকে আনছেন । কোরোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তখনই জয়লাভ সম্ভব, যখন মানুষ তাঁর সামাজিক দায়িত্ব খুব ভাল করে পালন করবেন ৷ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বাধ্যবাধকতা বুঝবেন । মানুষের সম্মিলিত যোগদান ছাড়া এই অতিমারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জেতা কার্যত অসম্ভব । সাম্প্রতিক, এই কোরোনা আবহে দেশের প্রত্যেক নাগরিককে সুপ্রশিক্ষিত সৈনিকের মতো দায়িত্ব পালন করতে হবে । মাস্ক পরা, বার বার হাত ধোওয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা - এগুলিকে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে । বর্তমান পরিস্থিতিতে সামাজিক সমন্বয় একান্ত জরুরি । আর এইভাবেই একে অপরকে সাহায্য করার মাধ্যমে আমরা গ্রাম থেকে শহর, সর্বত্র কোরোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সফল হতে পারব ।