পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

আমরা ভারতকে আগুনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারব? - দিল্লিতে সব থেকে বড় অগ্নিকাণ্ড

1997 সালে উপহার সিনেমা হল কাণ্ডের পর এটাই দিল্লিতে সব থেকে বড় অগ্নিকাণ্ড । সেই দুর্ঘটনার প্রাণ হারিয়েছিলেন 59 জন । আনাজ মান্ডির ঘটনার পর দমকল কর্তারা নির্দিষ্ট করেছিলেন শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুন লাগে । 600 ইয়ার্ড এলাকা নিয়ে তৈরি ওই চারতলা কারখানাটিতে ছিল না দমকল বিভাগের কোনও অনুমতি বা সাধারণ অগ্নিনির্বাপন সুরক্ষা ব্যবস্থা । যাই হোক, 150 জন দমকল কর্মী এবং 30টি ইঞ্জিন কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং 63 জনের প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হন, যদিও ততক্ষণে লেলিহান আগুনের শিখা এবং বিষাক্ত ধোঁয়ায় বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন ।

fire
fire

By

Published : Dec 14, 2019, 4:21 AM IST

যখন ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় কোনও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, তা দেখে আমরা মর্মাহত হই । কিন্তু, সুক্ষ ভাবে বিষয়টির দিকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখতে পাব, এই ঘটনার মধ্যে লুকিয়ে আছে একটা ব্যাপক পদ্ধতিগত ত্রুটি । উত্তর দিল্লির আনাজ মান্ডিতে ব্যাগ প্রস্তুতকারক একটি বেআইনি কারখানায় আগুন লাগার কারণে প্রাণ হারিয়েছেন 43 জন শ্রমিক । 1997 সালে উপহার সিনেমা হল কাণ্ডের পর এটাই দিল্লিতে সব থেকে বড় অগ্নিকাণ্ড । সেই দুর্ঘটনার প্রাণ হারিয়েছিলেন 59 জন । আনাজ মান্ডির ঘটনার পর দমকল কর্তারা নির্দিষ্ট করেছিলেন শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুন লাগে । 600 ইয়ার্ড এলাকা নিয়ে তৈরি ওই চারতলা কারখানাটিতে ছিল না দমকল বিভাগের কোনও অনুমতি বা সাধারণ অগ্নিনির্বাপন সুরক্ষা ব্যবস্থা । যাই হোক, 150 জন দমকল কর্মী এবং 30টি ইঞ্জিন কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং 63 জনের প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হন, যদিও ততক্ষণে লেলিহান আগুনের শিখা এবং বিষাক্ত ধোঁয়ায় বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন । এ বছরের 17 ফেব্রুয়ারি দিল্লির করোল বাগে একটি হোটেলে একই রকম অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছিলেন 17 জন । এই ঘটনার পর দমকল বিভাগ বিশেষ সতর্কতা জারি করেছিল, এবং 57 টি হোটেলের অনুমোদন বাতিল করেছিল । অনুমোদন বা অনুমোদন বাতিল নয়- সুরক্ষা বিধির বিষয়ে প্রকৃত কী কী পদক্ষেপ করা উচিত, সে বিষয়ে কারও কোনও ধারণা নেই । 144টি শহরে 1 লাখ বা তার বেশি মানুষের মনে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই । খরচ কমানোর জন্য অনেক নির্মাতা অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থার দিকে তেমন নজর দেয় না, এর ফল ভুগতে হয় সাধারণ মানুষকে তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে ।

দিল্লি হাইকোর্ট সঠিক ভাবেই বলেছে, অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে গাফিলতি আসন্ন বিপদকেই স্বাগত জানায় । ভারতের জাতীয় গৃহ নির্মাণ সুরক্ষা বিধি অনুসারে নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থার কথা বলা আছে । মে মাসে একটি ভবনে আগুন লাগার কারণে 22 জন স্কুল ছাত্রের মৃত্যু হয় আবার 2017 সালের ডিসেম্বরে মুম্বইয়ের কমলা মিলে অগ্নিকাণ্ডের জেরে 14 জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় । অগাস্ট মাসে নয়া দিল্লির AIIMS-এ ভয়াবহ আগুন লাগে । বহু গুরুত্বপূর্ণ কাগজ, নথি, চিকিৎসার যন্ত্রাংশ আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়ে যায় । ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর রেকর্ড অনুসারে 2010 থেকে 2014 সালের মধ্যে 113000 মানুষের মৃত্যু হয় 112000টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় । অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণের ফলে বাড়ি-ঘর তৈরি হচ্ছে মারাত্মক ভাবে, এর ফলে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হয়ে উঠছে ।

কী ভাবে আগুনের হাত থেকে সাধারণ মানুষ বাঁচার চেষ্টা করবেন, সে বিষয়ে কেন্দ্রের তরফে সচেতনতামূলক প্রচারের জন্য পদক্ষেপ করা হয়েছিল । 1995 সালে দেবওয়ালি অগ্নিকাণ্ডের কথা সবার মনে আছে ৷ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন 445 জন । 2004 সালে কুম্ভকর্ণ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছিল 94টি শিশু । এই ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ডগুলি এখনও সবার স্মৃতিতেই জ্বলজ্বল করছে, সরকার বার বার সচেতনতামূলক পদক্ষেপের কথা বলছে ৷ কিন্তু প্রতি ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার পর সরকারের কিছু পদ্ধতিগত ত্রুটি সামনে চলে আসছে । দমকল বিভাগের কাজ ভারতীয় সংবিধানে অন্যতম কঠিন কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে । সঠিক এবং দক্ষ কর্মীবর্গের অনুপস্থিতি এবং কাজের ক্ষেত্রে গাফিলতির জন্য অনেক ক্ষেত্রেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা সঠিক থাকে না, যার ফলে সাধারণ মানুষের জীবনের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায় । জাতীয় গৃহনির্মাণ সুরক্ষা বিধিকে তোয়াক্কা না করে অনেক ক্ষেত্রেই বাড়ি তৈরি হচ্ছে । 2014 সালে জাতীয় তথ্য কমিশন সুপ্রিম কোর্ট এবং সংসদ ভবনে অগ্নি সুরক্ষা বিধি সঠিক ছিল না বলে জানিয়েছিল । তথ্য জানার আইনে করা একটি মামলার প্রেক্ষিতে ঘটনাটি সামনে আসে । এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট 2018 সালে নোটিশও জারি করে । সু্প্রিম কোর্ট অগ্নি সুরক্ষা বিধি হ্রাস এবং নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশও করেছিল । দমকল বিভাগের উচিত প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্নিবিধিকে আরও কঠোর করা এবং তা কার্যকর হচ্ছে কি না, সে দিকে নজর দেওয়া । সচেতনতামূলক প্রচার অভিযানে আয়োজনের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি ৷ কঠোর ভাবে নিয়ম কার্যকর হলেই একমাত্র দেশের প্রতিটি মানুষের জীবন সুরক্ষিত থাকবে ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details