পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

গাঁজার ডলারের স্রোতে ভাসতে পারবে ভারত?

গাছের জেনেটিক রিসোর্সের (PGR) দিক থেকে দেখলে, আমরা গুপ্তধনের ভাণ্ডারের উপর বসে আছি, কিন্তু তা কাজে লাগানোর মতো কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না । তন্তু থেকে ওষুধ – বিভিন্ন ব্যবহারের ভিত্তিতে এই জেনেটিক রিসোর্সকে সংরক্ষণ ও তালিকাভূক্ত করতে ঢিমেতালে চলছে ভারত । যেখানে আমাদের দেশীয় মারিজুয়ানা ও ভাং-য়ের জেনেটিক উৎসকে সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা যেত । লিখেছেন পলিসি অ্যান্ড আউটরিচ, ন্যাশনাল সিড অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার অধিকর্তা ইন্দ্রশেখর সিংহ ।

By

Published : Aug 23, 2020, 9:31 AM IST

Graphics
গ্রাফিক্স

যেখানে মার্কেট রিপোর্ট বলছে, শুধু অ্যামেরিকাতেই মারিজুয়ানা শিল্প 2020 সাল শেষ হওয়ার মধ্যে 15 বিলিয়ন ডলার আয় করবে, সেখানে ভারতের বীজক্ষেত্র সেই সোনালি সুযোগ হাতছাড়া করছে । যেখানে আমাদের দেশীয় মারিজুয়ানা ও ভাং-য়ের জেনেটিক উৎসকে সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা যেত ।

প্রকৃতি ভারতীয় উপমহাদেশকে ক্যানাবিস ইন্ডিকা নামে একধরণের মারিজুয়ানা দিয়েছে, এবং ভারতের প্রত্যেকটি এলাকায় অনেক ধরণের সাব-স্পিসিজ রয়েছে, যা শত শত বছর ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে । এটা আমাদের উপমহাদেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক জীবনে একটা পবিত্র ভূমিকায় ছিল । বিনোদন ও ধর্মীয় কাজে ব্যবহার হওয়া ছাড়াও, গাঁজা ও ভাং-এর আজ কয়েকশো রকমের ব্যবহার রয়েছে ব্যথার ওষুধ থেকে পোশাক, এমনকী নির্মাণকাজেও । মেডিকেল উদ্দেশ্যে গাঁজার ব্যবসা হিমশৈলের চূড়ামাত্র, কারণ এই গাছের প্রতিটি অংশকে কোনও না কোনও শিল্পে ব্যবহার করা যেতে পারে । ‘কিং কটন’কে ইতিমধ্যেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে আরও টেকসই, সস্তা ও জল কম প্রয়োজন হয়, এমন ভাং (ক্যানাবিস স্যাটিভা এল) ।

গাছের জেনেটিক রিসোর্সের (PGR) দিক থেকে দেখলে, আমরা গুপ্তধনের ভাণ্ডারের উপর বসে আছি, কিন্তু তা কাজে লাগানোর মতো কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না । তন্তু থেকে ওষুধ – বিভিন্ন ব্যবহারের ভিত্তিতে এই জেনেটিক রিসোর্সকে সংরক্ষণ ও তালিকাভূক্ত করতে ঢিমেতালে চলছে ভারত । মনে রাখা দরকার 1985 সাল পর্যন্ত গাঁজা সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকানে বৈধভাবে বিক্রি হত, এবং ভাং এখনও ভারতে বিক্রি হয় । অ্যামেরিকার চাপের মুখে, তন্তু, খাদ্য ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের ব্যবহারের দিকটি উপেক্ষা করে ভারত গাছটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে । এই নিষেধাজ্ঞার ফলে সংরক্ষণে ক্ষতি হয়েছে এবং অপ্রয়োজনীয়তা ও কলুষতার জায়গা তৈরি হয়েছে । এখন অ্যামেরিকাই বৈধকরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং অ্যামেরিকার মারিজুয়ানা শিল্প বিলিয়নে আয় করছে এবং বড় সংখ্যায় কর্মসংস্থান করছে । তাদের কাছে গাঁজা ও ভাং-এর পিজিআরের অন্যতম বৃহৎ সংগ্রহ রয়েছে, এবং তারা এর সত্ত্বও নিচ্ছে ।

গাঁজা দেশের বহু অংশে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মায়, এবং কিছু জায়গায় মাদক ব্যবসার অংশ হিসেবে তা অবৈধভাবে চাষ করা হয় । অবৈধ ব্যবসা যত বাড়ছে, সরকার ও শিল্প তার রাজস্ব হারাচ্ছে, এবং আমরাও হিমাচল প্রদেশের মতো সংবেদনশীল এলাকায় বিদেশি এবং জিনগত পরিবর্তন ঘটানো বীজের (জিএম) বিপদের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি ।

যদিও কয়েকটি রাজ্য বাণিজ্যিকভাবে ভাং ও সেই সম্পর্কিত পণ্যের উৎপাদনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ করেছে, ভারত কিন্তু মারিজুয়ানার ডলারের স্রোত থেকে বহুদূরে ।

সরকারকে এগিয়ে এসে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য ভাং-গাঁজার বীজ থেকে নিয়ন্ত্রণ তুলে নিতে হবে । ভারতীয় বীজ কোম্পানিগুলোকে ছাড় দিতে হবে এবং কৃষকদের সঙ্গে বা গবেষণাকেন্দ্র তৈরি করে দেশীয় প্রকারগুলোর উপর গবেষণা করতে হবে । ভালো জায়গা হতে পারে হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, কেরালা এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু অংশ । এতে স্থানীয় অর্থনীতি উৎসাহ পাবে এবং অবৈধ ব্যবসা কমবে । এর বহুমুখী ব্যবহারকে মাথায় রেখে, ICAR এবং বিভিন্ন রাজ্যের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে দেশীর PGR-এর মূল্যায়ণ করতে হবে ।

NBPGR-এর মাধ্যমে জৈববৈচিত্র সংরক্ষণ এবং সেগুলি ভারতে ব্যবহারের জন্য চিহ্নিত করা যেতে পারে । সরকারি-বেসরকারি গবেষণায় সহায়তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বেসরকারি ক্ষেত্র ও ব্যাঙ্ক । বিশ্বজুড়ে এই কর্মকাণ্ডের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে ভারতীয় বীজ ও PGR-এর মধ্যে । একটা ভালো বীজ রপ্তানি নীতির মাধ্যমে, আমরা এমনকি বিদেশি হেম্প ও মারিজুয়ানা সংস্থাগুলোকে ভারতে গবেষণা ও উৎপাদনের জন্যও উৎসাহিত করতে পারি ।

ভারতীয়দের সঙ্গে অংশীদারিত্বে তাদের বেস তৈরির অনুমতি দিতে হবে । গাঁজা ফুলের সবথেকে বেশি আমদানি করে ইজ়রায়েল ও জার্মানি । নিয়ন্ত্রণ তুলে নিয়ে আমরাও শীর্ষ রপ্তানিকারী হতে পারি, যাতে কৃষক ও শিল্পের আয় বাড়তে পারে । আমাদের গাঁজা ও ভাংয়ের রপ্তানি কর্মসূচি নিতে হবে এবং প্রক্রিয়াকরণ শিল্পকেও এদেশে বেস তৈরির অনুমতি দিতে হবে । শুরুর পদক্ষেপ হিসেবে আমরা আবগারি আইনে বদল আনতে পারি, যাতে আফিমের মতোই গাঁজারও চাষ ও প্রক্রিয়াকরণ করা যায় । কিন্তু ভাং চাষ ও গবেষণা থেকে নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ তুলতে হবে । রাজ্য সরকারগুলোর কাছে এটা করার আইনি ক্ষমতা রয়েছে ।

তুলো খুবই পরিশ্রমসাপেক্ষ ফসল, যাতে টন টন সার, কীটনাশক, জল ইত্যাদি প্রয়োজন হয় । ভারত বস্ত্রশিল্পে বৈচিত্র আনতে পারে এবং ভাং তন্তু থেকে তৈরি পোশাকের হাব হয়ে উঠতে পারে । ভারতের জলবায়ু ও মাটি দেশজুড়ে ভাং চাষের পক্ষে উপযোগী এবং এর থেকে কৃষকরা লাভবান হতে পারে । এর ফলে দেশজুড়ে বিকেন্দ্রীভূত টেক্সটাইল হাব তৈরি হবে । ভাং হচ্ছে সেই তুলোচাষের একটি উপযোগী ও পরিবেশ-বান্ধব বিকল্প, যার গায়ে কৃষক-আত্মহত্যা, জমি ও জল নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার কলঙ্ক লেগে আছে । বস্ত্রমন্ত্রকের উচিত ভাংজাত বস্ত্রের উপর এবং কীভাবে এটা কৃষকদের রোজগার বৃদ্ধি করে ভারতীয় বস্ত্রশিল্পকে বিশ্বের অগ্রণী উৎপাদকে পরিণত করতে পারে, তা নিয়ে সমীক্ষা করা ।

আমাদের দেশের জৈববৈচিত্রের উপহারকে আপন করে নিয়ে, ভাং ও মারিজুয়ানাজাত পণ্যে পথপ্রদর্শক হওয়ার ক্ষমতা আছে ভারতীয় কৃষক ও শিল্পর। কিন্তু সরকার কি নিয়ন্ত্রণ তুলবে ? না কি অপেক্ষা করবে, যাতে আরও একটা বিদেশি সংস্থা আমাদের জৈববৈচিত্র্যের পেটেন্ট নেয় এবং আমাদের জিনগত বৈচিত্র থেকে ফায়দা তোলে?

ABOUT THE AUTHOR

...view details