পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

কোরোনার প্রতিষেধক তৈরি কি কখনও সম্ভব হবে ?

WHO - এর মতে, COVID - 19 প্রতিষেধক হল বাধ্যতামূলক । সেইমতো প্রতিষেধক তৈরিতে নেমে পড়েছে ওষুধ সংস্থাগুলি ৷

CAN CORONA VACCINE BECOME A REALITY?
কোরোনার প্রতিষেধক কি কখনও বাস্তব হবে?

By

Published : Jun 26, 2020, 3:31 PM IST

চিনে নভেল কোরোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রায় ছ’মাস হল । খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই সেই প্রাদুর্ভাব প্যানডেমিকে পরিণত হয় ৷ যা গোটা দুনিয়াকে একটা সংকটের মধ্যে ঠেলে দেয় ৷ বিশ্বজুড়ে নানা দেশ বিশ্বাস করতে শুরু করল , COVID - 19 প্রতিরোধে প্রতিষেধকই হল একমাত্র সমাধান । দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের CEO ড. সেথ বার্কলে বলছেন, কোনও সক্রিয় ও নিরাপদ কোরোনা ভাইরাসের প্রতিষেধকই একমাত্র বিশ্বে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে পারে । কিন্তু সবথেকে বেশি জরুরি হল, প্রতিষেধক তৈরি করতে লাগে বিপুল সময় ও অর্থ । প্রতিষেধক তৈরি করতে গবেষণা, উদ্ভাবন, প্রি-ক্লিনিক্যাল টেস্টিং, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রয়োজন ৷ এছাড়াও নজরদারি সংস্থার অনুমোদন লাভসহ একাধিক ধাপ পেরোতে হয় । সাধারণভাবে, একটি প্রতিষেধক তৈরি করতে 8 থেকে 15 বছর সময় লাগে ।

WHO আগেই জানিয়েছে যে, COVID - 19 প্রতিষেধক হল বাধ্যতামূলক । এই বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সংকটের সময় বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গবেষণামূলক সংস্থাগুলি প্রতিষেধক তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে । তারা আশাবাদী , তারা 12 থেকে 18 মাসের মধ্যে প্রতিষেধক তৈরি করে ফেলতে পারবে । কিন্তু প্রিভেনটিভ মেডিসিন অ্যান্ড ভ্যান্ডেরবিল্ট ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের দাবি , কোরোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক দ্রুত তৈরি করার চাপে হিতে বিপরীত হতে পারে । ফেডারেল গর্ভমেন্ট অফ ইউনাইটেড স্টেটসের তরফে শুরু হয়েছে ' অপারেশন ওয়ার্প স্পিড ' ৷ এর সাহায্যে 2021 সালের গোড়াতেই কীভাবে অ্যামেরিকার জন্য 300 মিলিয়ন COVID - 19 প্রতিষেধক তৈরি করা যায়, তার প্রচেষ্টা চলছে ৷

এই ভাইরাস , বৈজ্ঞানিক নাম SARS-Cov-2 ৷ প্রথম এর প্রকোপ শুরু হয় চিনের ইউহান প্রদেশে ৷ 2019 সালের ডিসেম্বর মাসে । ছড়িয়েও পড়ে দ্রুত ৷ এরপর থেকে দু’মাসের মধ্যেই অ্যামেরিকা ও চিন, কোরোনা ভাইরাস প্রতিষেধকের প্রয়োগ মানবদেহের উপর করতে শুরু করে । অ্যামেরিকা, চিন, ব্রিটেন ও জার্মানির মোট 8 টি সংগঠন প্রতিষেধক নিয়ে গবেষণা করছে । প্রতিষেধক তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থা হল ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ৷ কারণ তখনই নতুন প্রতিষেধক নিরাপদ কি না, আর তার সক্রিয়তা কেমন, তা বোঝা যায় । USFDA ও ইউরোপিয়ান এজেন্সির তরফে নতুন প্রতিষেধককে অনুমোদন দেওয়া হয় তার নিরাপত্তা, সক্রিয়তা, শক্তি ও সেটি খাদমুক্ত কি না, তা খতিয়ে দেখার পর । অ্যামেরিকান বায়োটেক সংস্থা, মোডারনা ৷ এই সংস্থা জানিয়েছে তারা বর্তমানে তাদের তৈরি mRNA-1273 প্রতিষেধকের গবেষণার অন্তিম স্তরে রয়েছে । টাল জ্যাকস, সংস্থার প্রধান মেডিকেল অফিসার জানিয়েছেন, 2020 সালের জুলাই মাসে এই প্রতিষেধকের তৃতীয় দফার পরীক্ষা শুরু হতে চলেছে 30 হাজার মানুষের উপর । আরও একটি অ্যামেরিকান ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা Pfizer আবার হাত মিলিয়েছে BioNTech সংস্থার সঙ্গে ৷ যাতে COVID - 19 সংক্রমণ রোধ করতে বিশ্বব্যাপী স্তরে তারা BNT162 প্রতিষেধক তৈরির দায়িত্ব হাসিল করতে পারে । Pfizer - এর চেয়ারম্যান এবং CEO আলবার্ট বুরলা বলেছেন, তারা অক্টোবরের মধ্যে প্রতিষেধক উৎপাদন করতে পারবেন ।

সম্প্রতি, AstraZeneca ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে COVID - 19 প্রতিষেধক নিয়ে একটি যুগান্তকারী চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে । চিনের Sinovac Biotech -এর তৈরি প্রতিষেধক CoronaVac মানবদেহে প্রয়োগ করার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেয়ে গেছে । আরও কিছু বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা যেমন - সানোফি, রশ, জনসন অ্যান্ড জনসন, GSKও COVID - 19 - এর প্রতিষেধক তৈরির কথা জানিয়েছে । ট্রান্সলেশনাল হেলথ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির এক্সিকিউটি ডিরেক্টর গগনদীপ সিংয়ের দাবি অনুযায়ী, বেশ কয়েকটি অন্তঃদেশীয় সংস্থা যেমন - জাইডাস, ক্যাডিলা, সিরাম ইনস্টিটিউট, ভারত বায়োটেক ও ইন্ডিয়ান ইমিউনোলজিক্যালসও কোরোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক খোঁজার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে ।

গবেষক ও বিজ্ঞানীরা যদিও সতর্ক করেছেন , উৎপাদনের সীমাবদ্ধতা ও মজুতকরণ প্রতিষেধকের সরবরাহে প্রভাব ফেলতে পারে । কোনও সংস্থার পক্ষেই এত বিপুল পরিমাণে প্রতিষেধক প্রস্তুত করা সম্ভব নয় , যা দিয়ে গোটা বিশ্বের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় । অ্যামেরিকা, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া 2009 সালের H1N1 প্রতিষেধক উৎপাদনে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছে । কোরোনার ক্ষেত্রেও সেই একই পরিণতি ঘটতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগে । WHO - এর দাবি, ধনী - দরিদ্র, উভয় ধরনের দেশেই সমানভাবে যেন প্রতিষেধকের বণ্টন হয় । বেশিরভাগ দেশ চায়, প্রতিষেধক সরবরাহের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার যেন দেওয়া হয় কোরোনা রোগীদের সেবার কাজে নিযুক্ত স্বাস্থ্যকর্মী, প্যারামেডিক্যাল কর্মী এবং কোরোনা আক্রান্তদের মধ্যে যারা বয়স্ক ও যাদের প্রাণের ঝুঁকি বেশি আছে তাদের । স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সরকার ও ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিকে পরামর্শ দিয়েছেন, প্রতিষেধকের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে । এমন পরামর্শও দেওয়া হয়েছে যে বিশ্বের সমস্ত দেশ যেন একজোট হয়ে একটি ' সলিডারিটি পারচেজিং ক্লাব ' গড়ে তোলে ৷ যাতে প্রতিষেধক দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ও উদ্দেশ্যমুখী অগ্রাধিকার দেওয়া সম্ভব হয় । বিল অ্যান্ড মেলিন্দা গেটস ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিরা ছাড়াও আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার ও বিশ্বব্যাঙ্ক জানিয়েছে , তারা বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলিকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত । যদি মানব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মানবতাও মিলে মিশে এক হয়ে যায়, তাহলে আমরা অবশ্যই COVID - 19 - এর বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ জিততে পারব ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details