পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

ওয়াশিংটনে বৈঠকে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করবে ভারত

ওয়াশিংটন ডিসি-তে হতে চলছে ভারত ও অ্যামেরিকার টু প্লাস টু বৈঠক । কিন্তু অ্যামেরিকার সংবাদমাধ্যমের নজর রয়েছে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন, 2019 ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জির প্রতিবাদে চলা বিক্ষোভ, বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের নামে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর পুলিশের নির্যাতন এবং 370 ধারা প্রত্যাহারের পর কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি সহ একাধিক বিষয়ের উপর । দিল্লি থেকে স্মিতা শর্মার প্রতিবেদন ।

INDIA US
মাইকেল পম্পেওর সঙ্গে এস জয়শঙ্কর

By

Published : Dec 21, 2019, 2:18 PM IST

ওয়াশিংটন ডিসি-তে হতে চলছে ভারত ও অ্যামেরিকার ' টু প্লাস টু ' বৈঠক । তার আগে এখন সে দেশের প্রধান সংবাদপত্রগুলিতে ভারত সংক্রান্ত খবরের ছয়লাপ । বৈঠকের জন্য ভারতের বিদেশমন্ত্রী ডাঃ এস জয়শংকর ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এখন অ্যামেরিকায় । তাঁরা বৈঠক করবেন অ্যামেরিকার বিদেশমন্ত্রী মাইকেল পম্পেও ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার-এর সঙ্গে । যদিও এই বৈঠকের পাশাপাশি সে দেশের সংবাদমাধ্যমের নজর থাকবে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন, 2019 ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জির প্রতিবাদে চলা বিক্ষোভ, বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের নামে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর পুলিশের নির্যাতন এবং 370 ধারা প্রত্যাহারের পর কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি সহ একাধিক বিষয়ের উপর ।

সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে । প্রতিবেদনটিতে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন নিয়ে ভারতে যে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ চলছে সেই প্রসঙ্গে কিছু প্রশ্ন তোলা হয়েছে । সেগুলির মধ্যে অন্যতম - ভারত কি তাহলে হিন্দু রাষ্ট্র হওয়ার দিকে এগোচ্ছে? বলা হয়েছে, জম্মু ও কাশ্মীর থেকে 370 ধারা প্রত্যাহার করার পর সেখানে কয়েক হাজার মুসলিমকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে । জাতীয় নাগরিক পঞ্জির জেরে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের রাজ্যে (অসম) কয়েক লাখ লোক যাদের মধ্যে অনেকেই মুসলিম কার্যত দেশহীন হয়ে পড়েছে । প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইনের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীদের ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি । এর মাধ্যমে তিনি কার্যত তাঁর রাজনৈতিক জীবনকে বাজি রেখেছেন ।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তাদের খবরের শিরোনাম করেছে, "নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে ভারতে বিক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে" । ওই সংবাদপত্রে আরও লেখা হয়েছে, ভারতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি বলছে, "এই আইন দেশের সংবিধানে ধর্মীয় নিরপেক্ষতার যে ভিত্তি রয়েছে তা নষ্ট করবে" ।

ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, "নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইনের প্রতিবাদে দেশের ছাত্ররা যে প্রতিবাদ শুরু করেছে তা দমন করতে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অভিযান চালিয়েছে ।"

ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে 370 ধারা প্রত্যাহারের পর সেখানে ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে এবং রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে । সেই বিষয়ে অ্যামেরিকার কংগ্রেসনাল কমিটি ইতিমধ্যে দুটি শুনানির আয়োজন করেছে । অ্যামেরিকার বিভিন্ন মহল থেকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, 2019 –এর তীব্র সমালোচনা ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে । অ্যামেরিকার আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশন (Commission on International Religious Freedom) ও বৈদেশিক কাজকর্ম মূলক কমিটি (House Foreign Affairs Committee) নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইনের তীব্র সমালোচনা করে বলেছে, এই আইন গণতন্ত্রের মূল ভিত্তির পরিপন্থী । রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার অফিস নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, 2019 নিয়ে এক বিবৃতি দিয়েছে । এই বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, এই আইন মূলগতভাবে বিভেদমূলক ও ভারতে মানবাধিকারের পরিপন্থী ।

ভারত ও অ্যামেরিকার মধ্যে টু প্লাস টু বৈঠক 2018 সালের সেপ্টেম্বরের প্রথমে শুরু হয়েছিল । এই বৈঠকে মূলত দুই দেশের বৈদেশিক নীতি, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয় । বৈঠকের আগে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার বলেছেন, "গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও বৈদেশিক ইশুগুলি নিয়ে এই বৈঠকে মূলত আলোচনা হবে । পাশাপাশি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং জম্মু ও কাশ্মীর থেকে 370 ধারা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়ে যে বিতর্ক ছড়িয়েছে তা মেটাতে ভারত সরকারের তরফে তাদের মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গী বৈঠকে জানিয়ে দেওয়া হবে ।"

অ্যামেরিকার দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অস্থায়ী সচিব অ্যালিস জি ওয়েলস বলেছেন, "এই বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে মানবাধিকারের বিষয়টি নেই । তবে, কাশ্মীর ইশু ও ভারতের নিরাপত্তায় যে সমস্ত বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে সেই বিষয়ে অবশ্যই আলোচনা হবে ।"

ভারত সরকার অবশ্য পাশ্চাত্য সংবাদমাধ্যমের এই সমস্ত 'একপেশে সমালোচনা'-কে উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, এই ইশুগুলি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় । 14 নভেম্বর চতুর্থ রামনাথ গোয়েঙ্কা ভাষণে এস জয়শঙ্কর বলেছেন, "যে প্রতিবাদ হচ্ছে তা নিরপেক্ষ নয় । বিদেশের কিছু সংবাদমাধ্যমে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলি নিয়ে যে একপেশে সমালোচনা হচ্ছে তা আন্তর্জাতিক কূটনীতির মাপকাঠিতে পড়ে না । এই সমস্ত বিষয়ে সমালোচনা করে ভারত ও পাকিস্তানকে এক গোত্রে ফেলা মোটেই উচিত নয় । ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলি নিয়ে যে অহেতুক আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে তা কার্যত ছদ্ম-অসক্রিয়তার শামিল । যারা সমালোচনা করছেন তাঁরা আসলে চান দীর্ঘদিন ধরে যে পরিস্থিতি চলে আসছে সেটাই বজায় থাকুক । কিন্তু ইতিহাসের দাবি তার বিপরীত ।"

এদিকে, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে বিশেষ প্রতিনিধিদের বৈঠকের আগে চিন নিরাপত্তা পরিষদে কাশ্মীর প্রসঙ্গে আলোচনা চেয়েছে । চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং উই-এর এই সপ্তাহেই দিল্লিতে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে আসার কথা । তিনি আলোচনা করবেন ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে । এই বৈঠকের আগে পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রী এস এম কুরেশি রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিকে একটি চিঠি লিখেছেন । সেই চিঠিতে তিনি অভিযোগ করেছেন যে, দিল্লি রাষ্ট্রসংঘের সদস্য তালিকা থেকে পাকিস্তানকে সরিয়ে দিতে পরিকল্পনা করছে । এদিকে চিন নিরাপত্তা পরিষদে এক বিশেষ নিয়মে কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব চেয়েছে । এই নিয়মে আলোচনা হলেও বিষয়টির উপর কোনও ভোট হবে না । এর আগে 16 অগাস্ট চিন কাশ্মীর নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা চেয়েছিল । তখন তাদের এই শর্তে রুদ্ধদ্বার আলোচনার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল যে, তারা আলোচনার বিষয়বস্তু ও নির্যাস নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিতে পারবে না ।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনা মুখে পড়লেও ভারত এই বিষয়ে বিতর্ক মেটাতে তার বন্ধু রাষ্ট্রগুলির উপরেই নির্ভর করছে । অন্যদিকে FATF নিয়ে পাকিস্তানকে চাপে রাখতে চাইছে । পাকিস্তানকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে জঙ্গিদের টাকার উৎস বন্ধ করতে FATF (ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স) চূড়ান্ত সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে । তা নিয়ে পাকিস্তান যথেষ্ট চাপের মধ্যে রয়েছে । অন্যদিকে ভারতের বর্তমান অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলকে অনাবশ্যক মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে বলেছে ফ্রান্স । ভারতে সে দেশের রাষ্ট্রদূত ইমানুয়েল লিনেইন একথা বলেছেন । তিনি বলেন, "জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ । কাশ্মীরে শান্তি ফেরানোর কাজটা কঠিন কিন্তু তা একমাত্র সম্ভব দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মধ্যে দিয়েই । বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিয়ে গিয়ে কাজের কাজ কিছু হবে না । কোনও দলেরই উচিত নয় এমন কিছু পদক্ষেপ করা যাতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয় । তবে, একইসঙ্গে ফ্রান্স চায় জম্মু ও কাশ্মীরে মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে যেন কোনও ফাঁক না থাকে এবং পরিস্থিতি যেন সেখানে দ্রুত স্বাভাবিক হয় ।"

সংবাদমাধ্যমের এই সমস্ত খবরের ভিত্তিতে দিল্লিতে চিনের দূতাবাস বা ভারতের বিদেশমন্ত্রক এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি বিবৃতি দেয়নি । কিন্তু সূত্রের খবর যে, নিরাপত্তা পরিষদের অন্যতম সদস্য চিন, যাদের ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, রাষ্ট্রসংঘে আলোচ্য বিষয় থেকে কাশ্মীর ইশুটিকে সম্ভবত বাদ দিতে চলেছে ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details