নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন পূর্ব ভারতকে নাড়িয়ে দিয়েছে । মূলত অসম, ত্রিপুরা এবং শিলংয়ে বিক্ষোভ দেখা গেছে । এই আইনে দু'ধরনের মতামত আছে । সমর্থকরা বলছেন, CAA হল অতীতের অন্যায় কাজের সংশোধন । অন্যদিকে, বিরোধীরা বলছেন এটা হল ধর্মের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে বিভাজনের একটা ঘৃণ্য চক্রান্ত ।1995 সালের নাগরিকত্ব আইন অনুসারে যাঁরা ভারতে বেআইনি পথে কোনওরকম নথি ছাড়া প্রবেশ করেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব বাতিলের কথা বলা হয়েছে।
যাই হোক, নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন সংখ্যালঘু উদবাস্তুদের ক্ষেত্রে বড় রকম ধাক্কা । অত্যাচারের ফলে পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে যে সব সংখ্যালঘুরা ভারতে প্রবেশ করেছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই আইন বড় ধাক্কা । তবে নয়া আইন চালু হলেও ওই সব মানুষগুলির কোনও চিন্তা নেই বলেই কেন্দ্রের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে । তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে । সংখ্যালঘুরা এসেছেন তিনটি ইসলামিক রাষ্ট্র থেকে । অন্যদিকে, হিন্দু, শিখ, জৈন, ক্রিশ্চান, বৌদ্ধ এবং পার্সিদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই । তবে আশ্চর্যের বিষয়, ওই তিন রাষ্ট্র থেকে যে সব মুসলিমরা ভারতে এসেছেন, তাঁদেরই বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা কোনও ধর্মীয় নিপীড়নের সম্মুখীন হননি এবং নিজেদের জীবন ভালো করার জন্যই অনুপ্রবেশ করেছিলেন। এটাই নতুন আইনের মূল কথা।
কয়েক শতকের সমস্যা
নিজেদের জীবন সুন্দর এবং স্বচ্ছন্দময় করার জন্য মানুষ অন্য দেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ করেন এবং উদ্বাস্তু হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন । 1947 সালে দেশ ভাগের পর 1.5 কোটি মানুষ দুই দেশের সীমান্ত টপকে ছিলেন। ভারত-পাকিস্তানের পশ্চিম সীমান্তে 1.2 কোটি মানুষ এবং পূর্ব সীমান্তে 42 লাখ মানুষ সীমান্ত পারাপার করেছিলেন । দেখা গেছে, 1959 সালের পর থেকে 80 হাজার তিব্বতের মানুষ ভারতে প্রবেশ করেছেন ৷ একইরকমভাবে বৌদ্ধ গুরু তথা ধর্ম প্রচারক 14 তম দলাই লামা নিজেও ভারতের শরণার্থী ৷
উাগান্ডায় 1972 সালে কিছু ভারতীয় নির্যাতনের স্বীকার হন এবং পরবর্তী সময় এক লাখের বেশি তামিল শ্রীলঙ্কা থেকে শরণার্থী হিসেবে থেকে যায় ৷ তবে নতুন আইনে এই সব শরণার্থীদের নিয়ে কোনও সমস্যা নেই, সব সমস্যা ওই তিন মুসলিম রাষ্ট্রের শরণার্থীদের নিয়েই ৷ দেশভাগের সময় পশ্চিম সীমান্তবর্তী এলাকায় মানুষগুলির নির্যাতনের সম্মুখীন হন ৷ বাধ্য হয়ে তাঁরা ভারতে শরণার্থী হিসেবে প্রবেশ করেন ৷ যেখানে শিখ এবং হিন্দুরা তাদের স্থান বদল করে নিয়েছেন, সেখানে মুসলিমরা পরবর্তী কালে ফিরে গেছেন ৷ তবে পূর্ব সীমান্তবর্তী এলাকার অবস্থা ছিল ভয়ঙ্কর ৷ পরবর্তীতে পরিস্থিতি বেশ কিছুটা পরিবর্তন হয়ে যায়৷ পূর্ব পাকিস্তানের এবং বাংলাদেশের এক লাখের বেশি মানুষ ভারত এবং বাংলাদেশে তাঁদের আশ্রয় খুঁজে নিতে চান ৷ শরণার্থী হিসেবে এই অনুপ্রবেশ এখনও চলছে ৷
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু সংসদে জানিয়েছেন 2.40 কোটি অবৈধ অভিবাসী ভারতে রয়েছে ৷ এর মধ্যে বেশির ভাগই পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে, অসমও বাদ পড়েনি ৷ দেখা দেখে, 75 লাখ অবৈধ অভিবাসী পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে, বাকি অসম এবং ত্রিপুরায় ৷ এর মধ্যে অসমের স্থান দ্বিতীয় ত্রিপুরা তৃতীয়৷ জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে 7-8 লাখ অবৈধ অভিবাসীদের দেখা গেছে ৷ এখান থেকে তারা উত্তরপ্রদেশ, কেরালা এবং হায়দরাবাদে ছড়িয়ে পড়ে ৷ এটা প্রথম থেকেই দেখা গেছে যে, অসম প্রথম থেকে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ৷ অভিবাসীদের মধ্যে হিন্দুর পাশাপাশি মুসলিমদের সংখ্যাও প্রতি নিয়ত বেড়ে চলেছে৷ এই সংখ্যাটা 25 লাখ থেকে বেড়ে 35 লাখ হয়ে গেছে ৷ তাদের নিজস্ব জনসংখ্যা 50 শতাংশ হ্রাস পাওয়ার পর অসমের মানুষ জন তাঁদের মাতৃ ভাষাকে রক্ষা করতে প্রতিবাদ-আন্দোলন শুরু করে ৷