পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

2028 সালের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র টানেল তৈরি হলে, ভারতের পরমাণু রেঞ্জের আওতায় চলে আসবে চিন

অসমে অতি-পরাক্রমশালী ব্রহ্মপুত্র নদের তলায় সুড়ঙ্গপথ খনন করা এবং চালু করার কাজ যদি 2028 সালের মধ্যে শেষ হয়ে যায় তবে গোটা চিনকে ভারতের কৌশলগত পারমাণবিক মিজ়াইলগুলির পাল্লার আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে ‘পালাবদলকারী’ হিসেবে বিবেচিত হবে । লিখছেন সঞ্জীবকুমার বড়ুয়া ।

assam
assam

By

Published : Jul 24, 2020, 7:45 AM IST

অসমে অতি-পরাক্রমশালী ব্রহ্মপুত্র নদের তলায় প্রত্যাশামাফিক চার লেনের 15 কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল তথা সুড়ঙ্গপথ খনন করা এবং চালু করার কাজ যদি 2028 সালের মধ্যে শেষ হয়ে যায় তাহলে তা গোটা চিনকে ভারতের কৌশলগত পারমাণবিক মিজ়াইলগুলির পাল্লার আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে ‘পালাবদলকারী’ হিসেবে বিবেচিত হবে । আর এর মধ্যে থাকবে চিনের সবচেয়ে বড় শহর এবং বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত সাংহাইও ।

ভারত যেখানে চিনের কথা মাথায় রেখে উত্তরপূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদের দক্ষিণ তীরে নিজের শক্তিশালী প্রথাগত এবং পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন মিজ়াইল সিস্টেমের প্রায় গোটাটাই নিয়ে এসে সাজিয়ে রেখেছে সেখানেই এগুলিকে উত্তরের রাজ্য, অরুণাচলপ্রদেশের দিকে সরিয়ে নিয়ে গেলে গোটা চিনই ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত হানতে পারার আওতায় চলে আসবে ।

এমনকী অরুণাচল প্রদেশের উচ্চ পার্বত্য এলাকা এবং দুর্গম, প্রত্যন্ত এলাকায় এই ধরনের মিজ়াইল সিস্টেম মোতায়েন করলে তা যেমন আরও ভালো নিরাপত্তা দেবে তেমনই শত্রুর চোখে ধুলো দিয়ে লুকিয়ে থাকার ক্ষেত্রেও বেশি সহায়ক হবে ।

কিন্তু তার জন্য মিজ়াইল সিস্টেমগুলি যাতে যথাযথভাবে লুকিয়ে রাখা যায় এবং সেই অবস্থাতেই তাদের স্থান পরিবর্তন করা যায় তা আগে নিশ্চিত করতে হবে, যা খুব জরুরি। আর সেই কৌশলগত নিরিখেই ব্রহ্মপুত্রের এই সুড়ঙ্গপথ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।

প্রস্তাবিত টানেল ব্রহ্মপুত্র নদের দক্ষিণ তীরের নুমালিগড়কে জুড়বে উত্তর প্রান্তের গোহপুরের (এরই গা ঘেঁষে রয়েছে অরুণাচল) সঙ্গে ।

মিজ়াইল সিস্টেমের স্থানান্তর-পর্ব ছাড়াও এই সুড়ঙ্গপথ চিনকে পুরোপুরি অন্ধকারে রেখেই ভারত—চিনের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LAC) তথা বিতর্কিত সীমান্ত এলাকা বরাবর সেনা এবং ভারী সমরাস্ত্র পাঠানোর ক্ষেত্রেও কয়েকগুণ বেশি সুবিধাজনক সাব্যস্ত হবে ।

সর্বজনবিদিত তথ্য অনুসারে, অসমে ভারতের যে সেনাছাউনি আছে সেখানে পরমাণু অস্ত্রবহনক্ষম অগ্নি 2, অগ্নি 3 এবং ব্রহ্মস মিজ়াইলের নজরদারি হয় ।

মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক মিজ়াইল অগ্নি 2 লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে 3,500 কিমি দূর পর্যন্ত আবার ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জের অগ্নি 3—র ক্ষেত্রে এই দূরত্ব 5,000 কিমি । অন্যদিকে, ব্রহ্মস হল এমন একটি ক্রুজ় মিজ়াইল যার পাল্লা 300 কিমি । এদের প্রত্যেককেই সড়ক, রেল—সহ যে কোনও ধরনের ভ্রাম্যমাণ প্ল্যাটফর্ম থেকে উৎক্ষেপণ করা যায় ।

ওইদিকে চিনও অন্তত 104টি পরমাণু শক্তিসম্পন্ন মিসাইল মজুত করে রেখেছে, যেগুলি ভারতের দূরতম অংশে ধেয়ে এসে আঘাত হানতে পারে ।

ভারতের বিরুদ্ধে PLA-এর স্ট্র‌্যাটেজিক রকেট ফোর্সের (PLASRF) মোতায়েন করা দু’টি প্রধান পরমাণু অস্ত্রবহনক্ষম মিসাইলের তালিকায় রয়েছে ডং—ফেং 21 এবং ডং—ফেং 31 ।

DF21—এর পাল্লা যেখানে অন্তত 2,000 কিমি, সেখানেই DF31—এর দু’টি প্রকার আছে । DF31—এর পাল্লা 7,000 কিমি আর DF31A —র পাল্লা অন্তত 11,000 কিমি ।

ভারতকেন্দ্রিক এই মিজ়াইলগুলির মধ্যে DF21—এর ঘাঁটি রয়েছে উইঘুর স্বশাসিত এলাকায় অবস্থিত শিনজিয়াংয়ের (বেস 56) কোরলায় ও ইউনান প্রদেশের জিয়ানশুই (বেস 53)—এ । অন্যদিকে DF21 এবং DF31 রয়েছে কুইংহায় প্রদেশের লিউকুইংকৌ—এ (বেস 56) ।

ভারত সরকার যেখানে সম্প্রতি ব্রহ্মপুত্রের তলদেশে সুড়ঙ্গপথ তৈরির প্রকল্পের জন্য অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে, সেখানেই এর ‘রিকোয়েস্ট ফর প্রোপোজ়াল’(RFP)—এর বিশ্বব্যপী টেন্ডার ডাকার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে 2019 সালের 15 অক্টোবর । 2028 সালের মধ্যে এটি তৈরির কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা । গত বছর বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন (BRO), এই সুড়ঙ্গপথ তৈরির প্রকল্পের উপর সংসদীয় প্যানেলকে একটি পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজ়েন্টেশন দেখিয়েছিল ।

পর্বতে ঘেরা অরুণাচলপ্রদেশের, তিব্বত স্বশাসিত এলাকার (TAR) সঙ্গে 1,126 কিমি দীর্ঘ সীমান্ত এলাকা রয়েছে । আর এই অরুণাচল প্রদেশই ভারতের উত্তর-পূর্বাংশের সবচেয়ে বড় রাজ্য । চিন এই রাজ্যের উপর আঞ্চলিক আধিপত্য দাবি করে এবং একে ‘দক্ষিণ তিব্বত’ বলে দাবি করে ।

বিপুল আকৃতি এবং প্রায়ই প্লাবন হওয়ার জন্য পরিচিত ব্রহ্মপুত্র নদের উপর উত্তর এবং দক্ষিণ অসমের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষাকারী ছয়টি সেতু রয়েছে । কিন্তু চিনের সঙ্গে যুদ্ধ হলে সবার আগে এই সেতুগুলিকেই টার্গেট করা হবে ।

সঞ্জীবকুমার বড়ুয়া, নয়াদিল্লি

ABOUT THE AUTHOR

...view details