বিহারের আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে NDA এমনভাবে রাজনীতির দাবার বোর্ডে ঘুঁটি সাজিয়েছে যে, যাদব বা মুসলিমরা যে পদক্ষেপই করুক না কেন, লাভ হবে BJP-র । বিহারে জাতপাতের রাজনীতি ও তার গতিপ্রকৃতি বহুমাত্রিক । আর তার জেরে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে সেই রাজ্যে মুসলিম বা যাদবদের পুরো ভোটটা NDA-র বিরুদ্ধে যাওয়ার সম্ভাবনা কার্যত অসম্ভব ।
যদিও এটাও ঠিক, নীতীশ কুমার তাঁর দীর্ঘ কয়েক দশকের মুখ্যমন্ত্রিত্বকালে বিহারের মুসলিম ও অন্য পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়ের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য বহু কাজ করেছেন । নীতীশ কুমারের সরকারের সেই সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজকর্ম মুসলিম ও পিছিয়ে থাকা জাতির মানুষ কিন্তু ভোলেনি । সাম্প্রতিককালে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার যে সমস্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে , সরকার সংসদে যে সমস্ত বিল পাশ করেছে, তা তাদের পক্ষে যাবে না বলেই মনে করে মুসলিম সমাজের একটা বড় অংশ যেমন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ইত্যাদি । কিন্তু মুসলিম সমাজের একটা বড় অংশের এই বিরূপ মনোভাব সত্ত্বেও বিহারে নীতীশ কুমারের পক্ষে মুসলিম সমর্থন এখনও একেবারে কমে যায়নি । মুসলিম জনসমাজের এই সমর্থন কমে না যাওয়ার অন্যতম কারণ হল বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে নীতীশ কুমার সরকার মুসলিম সমাজের জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে চলেছে ।
মুসলিম সমাজের একটা অংশের সমর্থন এখনও অটুট থাকা সত্ত্বেও আসন্ন বিধানসভা ভোটে JD(U) কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না । তাই তারা প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মুসলিম, যাদব, কুর্মি-সহ অন্যান্য পশ্চাৎপদ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বর মধ্যে যাতে সমতা থাকে, সেই কথা বিশেষভাবে মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে । উল্লেখ্য, নীতীশ কুমার নিজে পশ্চাৎপদ কুর্মি সম্প্রদায়ের নেতা ।
আসন্ন বিধানসভা ভোটে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে JD(U) যে যথেষ্ট পরিকল্পনা করে মাঠে নেমেছে, তা তাদের প্রার্থীদের পরিচিতি ও রাজনৈতিক ইতিহাস দেখলেই বোঝা যাচ্ছে । যেমন ধরা যাক দ্বারভাঙা বিধানসভা আসনটির কথা । এই আসনে জনতা দল (ইউনাইটেড)- এর প্রার্থী হলেন ফারাজ় ফাতমি । উল্লেখ্য, এই দ্বারভাঙা আসনে জনসংখ্যার 27 শতাংশ হল মুসলিম । ফারাজ় ফাতমিকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানোর পর সম্প্রতি বিধান পরিষদের সদস্য মৌলানা গুলাম রসুল বল্লভি প্রকাশ্যেই ভোটারদের কাছে আবেদন করেছেন যে, তাঁরা যেন ফারাজ় ফাতমিকে ভোট দেন । কিন্তু কে এই মৌলানা গুলাম রসুল বল্লভি ? এই ব্যক্তি বারেলভি চিন্তাধারার অন্যতম সুপরিচিত প্রবক্তা । বিহারে মুসলিম জনসংখ্যার একটা বড় অংশের উপর দীর্ঘদিন ধরে তাঁর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে ।
এবারের বিধানসভা ভোটে শুধু 18 জন যাদব প্রার্থীই নন, সেই সঙ্গে জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর তালিকায় রয়েছে 11 জন মুসলিম প্রার্থীও । আর জনতা দল (ইউনাইটেড)- এর এই যাদব ও মুসলিম প্রার্থীরা আসন্ন বিধানসভা ভোটে যে রাষ্ট্রীয় জনতা দলকে যথেষ্ট বেগ দেবে , তা বলাই বাহুল্য ।
জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর অন্যতম উল্লেখযোগ্য প্রার্থী হলেন চন্দ্রিকা রায় । একসময়ে চন্দ্রিকা রায়ের পরিবারের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের দীর্ঘদিন ওঠাবসা ছিল । চন্দ্রিকার পিতা দারোগা প্রসাদ বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব । তিনি ছিলেন লালুপ্রসাদ যাদবের সরকারের অন্যতম মন্ত্রী । চন্দ্রিকা রায়ের আরও একটি পরিচয় রয়েছে, সেটা হল তিনি রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা তেজপ্রতাপ যাদবের প্রাক্তন শ্বশুর । চন্দ্রিকার মেয়ের সঙ্গে ছয় মাসের সম্পর্কের পর তেজপ্রতাপ যাদব তাঁকে ‘অপহরণ’ করেছিল । সেই বিষয়টি নিয়ে সেই সময় বিহারের রাজনীতিতে যথেষ্ট জলঘোলা হয়েছিল । চন্দ্রিকা রায় শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবার জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর টিকিটে পার্সা বিধানসভা আসন থেকে লড়ছেন ।