হায়দরাবাদ, 2 জুলাই : ইতিমধ্যেই ভারত বায়োটেকের তৈরি দেশের প্রথম কোরোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক COVAXIN-কে মানবদেহে পরীক্ষার ছাড়পত্র দিয়েছে DCGI । আর ETV ভারতের সঙ্গে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে ভারত বায়োটেকের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডাঃ কৃষ্ণা ইলা এই ভ্যাকসিন তৈরি করতে গিয়ে যেসব প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে তা তুলে ধরলেন ৷ এছাড়া বিশ্বের সবথেকে সস্তা COVID-19 ভ্যাকসিন তৈরিই তাদের লক্ষ্য বলেও জানান তিনি ৷
প্রশ্নঃ- ভ্যাকসিন তৈরির প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে ৷ আপনার সংস্থা কি প্রথম সফল ভ্যাকসিন তৈরির কথা ঘোষণা করবে ?
সাধারণত একটি ভ্যাকসিন তৈরি হতে 14-15 বছর সময় লাগে ৷ এখানে 14-15 বছরের সঙ্গে আমরা 1 বছরের তুলনা করছি ৷ ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থা ও রেগুলেটর, সবার কাছে এটা খুব কঠিন কাজ ৷
প্রশ্নঃ- সুতরাং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আপনারা এটা বাজারে আনতে পারবেন ৷ এটা একটি দারুণ ব্যাপার ৷ কিন্তু এটা কি বিশ্বের সহযোগিতার কারণে হয়েছে ? এখন প্রচুর বৈজ্ঞানিক সাহিত্য পাওয়া যায়, তা কি আপনাদের সাহায্য করেছে ?
2-3 মাস আগেও COVID-19 সম্পর্কিত কোনও সাহিত্য ছিল না ৷ বর্তমানে প্রচুর তথ্য বেরিয়ে আসছে ৷ এবং আমি খুশি চিন ও US এই তথ্যগুলি পাবলিক ডোমেনে রেখেছে ৷ এটা খুব ভালো বিষয় ৷ কিন্তু উৎপাদকের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে কোনও কিছুই প্রকাশিত হয়নি ৷ যেগুলি প্রকাশিত হয়েছে সেগুলি হয় পশুর উপর ট্রায়ালের তথ্য অথবা ক্লিনিক্যাল তথ্য ৷ উৎপাদক এটাকে পাবলিক ডোমেনে দেয় না ৷ এটা একটা গোপনীয় বিষয় । সাধারণত কোনও উৎপাদন প্রক্রিয়া পেটেন্টের জন্যও আবেদন করা হয় না ৷
প্রশ্নঃ- ভ্যাকসিনটি বাজারে আনার আগে কীভাবে ট্রায়াল প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করা হবে ?
পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি ভাইরাসটি আলাদা করেছে ৷ তারা ভাইরাসটির চরিত্র বিশ্লেষণ করে আমাদের দিয়েছে ৷ তারপর আমরা R&D ব্যাচ তৈরি করেছি এবং তারপর GMP ব্যাচ তৈরি করেছি ৷ যেটা মানব শরীরে প্রয়োগ করা হবে সেটার সবসময় GMP ব্যাচে তৈরি করতে হবে ৷ তাই আমরা তিনটি ব্যাচ তৈরি করেছি ৷ তিনটি ব্যাচ তৈরি করার পর আমরা ভাইল বন্দী করে দু'টি ব্যাচ ইঁদুর, খরগোশের উপর প্রয়োগ করা হয় ৷ একটি ভাইল আলাদা করে রেখে দেওয়া হয় ৷ আমরা প্রাণীগুলির উপর একটি অথবা দুটি ডোজ় প্রয়োগ করি ৷ এরপর সেগুলির প্রতিরোধ ক্ষমতা ও নিরাপত্তার বিষয়টি লক্ষ্য করা হয় ৷
এগুলি শেষ করার পর আমরা ফেজ় 1, 2 ক্লিনিক্যাল ফর্মেশনে আসি ৷ ফেজ় ওয়ান 28 দিনের জন্য ট্রায়াল চলে ৷ একটি COVID-19 মুক্ত ভলান্টিয়ার নিয়োগের জন্য সেরোলজি বিশ্লেষণ করা হয় ৷ একবার rt-pcr টেস্টের পর ভলান্টিয়ার নিয়োগের পর তাদের ডোজ় দেওয়া হয় । 28 দিন ধরে নমুনা সংগ্রহ করা হয় ৷ তারপর আমরা সেরোলজি করি ৷ শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তা ভাইরাসটিকে আর বাড়তে দেয় না ৷ আমরা রক্তের নমুনা ও ভাইরাসটিকে BSL-3 ল্যাবে নিয়ে আসি ৷ এখানে ভাইরাসটির বৃদ্ধি পাওয়া উচিত নয় ৷ এরপর আমরা ফেজ় 2ও 3-এ যাই ৷ এটি বেশ সময়সাপেক্ষ ৷
প্রশ্নঃ- আমরা ভ্যাকসিনের কত কাছে পৌঁছেছি ?
অবশ্যই ভ্যাকসিন আসবে ৷ আমরা তিনটি প্ল্যাটফর্মে কাজ করছি ৷ আমরা নিশ্চিত অন্তত দুটটির ক্ষেত্রে এটি কাজ করবে ৷ প্রায় 100-র উপর R&D সংস্থা আছে ৷ তার মধ্যে অল্প সংখ্যক সংস্থারই ভ্যাকসিন তৈরির অভিজ্ঞতা আছে ৷
প্রশ্নঃ- NITI আয়োগ বলছে ভারতে প্রায় 6টি সংস্থা ভ্যাকসিন তৈরির প্রতিযোগিতায় আছে ৷ ভারতীয় উৎপাদনকারী সংস্থাগুলিকে কেমন দেখছেন ? ভারতে ল্যাব ও উৎপাদনকারী সংস্থার অনুপাত কত ?
ভারতে ভ্যাকসিন তৈরির উৎপাদনকারী এবং R&D কম্পানির সংখ্যা খুব কম ৷ তাদের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ও ভ্যাকসিন রিসার্চের কোনও অভিজ্ঞতা নেই ৷ এটা দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ ৷ অ্যামেরিকায় অনেক R&D কম্পানি আছে ৷ ভারতে উৎপাদনকারী সংস্থাও R&D কম্পানি ৷ ভারত বায়োটেকও একটি R&D কম্পানি ৷ এখন এখানে 100-র বেশি বিজ্ঞানী কাজ করে চলেছে ৷
প্রশ্নঃ- BSL-3: একটি গাইডলাইন ? এটা কী আপনি বলতে পারবেন ?
BSL-এর অর্থ হল বায়ো সেফটি লেভেল ৷ সর্বনিম্ন ক্যাটাগরি হল BSL-1 এবং BSL-3 হল সর্বোচ্চ ৷ একইরকম ভাবে আমাদেরও BSL লেভেল আছে ৷ সম্ভবত ভারত বায়োটেক একমাত্র কম্পানি যাদের BSL-3 উৎপাদন সুবিধা আছে ৷ চিন সম্প্রতি 200 মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে BSL-3 সুবিধা তৈরিতে ৷ অ্যামেরিকাও একটি তৈরি করতে চলেছে ৷ আমাদের যদি সুবিধা না থাকে তাহলে জীবনদায়ী ভ্যাকসিন বানানোর অনুমতি দেওয়া উচিত নয় ৷ এই বিশেষ সুবিধা ছাড়া আমরা ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারি না ৷ আমরা সঠিক রাস্তায় আছি ৷
প্রশ্নঃ- অনেক সংস্থা VERO সেল টেকনোলজি ব্যবহার করছে ৷ ভারত বায়োটেকও কি একই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে ? না এরা নতুন কিছু তৈরি করেছে ?
আমরা সবাই একই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করি ৷ আমরা যদি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করি তাহলে রেগুলেটরি হার্ডল বলে কিছু থাকে না ৷ আমাদের কাছে দু'টি প্রোডাক্ট থাকবে- সেল কালচার এবং ভাইরাস ৷ তাই তোমাকে দুটি প্রোডাক্টকে আলাদা আলাদা ভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে ৷ এবং এটি এর ফলে জটিল হয়ে পড়ে ৷ VERO সেল টেকনোলজি একটি রেগুলেটরিরর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পরীক্ষিত প্ল্যাটফর্ম ৷ আমরা একটি প্ল্যাটফর্মে 7-8 টি ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারি ৷