পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

By

Published : Jul 2, 2020, 12:54 AM IST

Updated : Jul 2, 2020, 6:29 AM IST

ETV Bharat / bharat

বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা COVID-19 ভ্যাকসিন তৈরিই লক্ষ্য ভারত বায়োটেকের

অবশ্যই বাজারে ভ্যাকসিন আসবে । আর আগামী বছরের মধ্যে 1.3 বিলিয়ন মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব ৷ বলছেন ভারত বায়োটেকের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডাঃ কৃষ্ণা ইলা ।

image
Bharat Biotech

হায়দরাবাদ, 2 জুলাই : ইতিমধ্যেই ভারত বায়োটেকের তৈরি দেশের প্রথম কোরোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক COVAXIN-কে মানবদেহে পরীক্ষার ছাড়পত্র দিয়েছে DCGI । আর ETV ভারতের সঙ্গে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে ভারত বায়োটেকের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডাঃ কৃষ্ণা ইলা এই ভ্যাকসিন তৈরি করতে গিয়ে যেসব প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে তা তুলে ধরলেন ৷ এছাড়া বিশ্বের সবথেকে সস্তা COVID-19 ভ্যাকসিন তৈরিই তাদের লক্ষ্য বলেও জানান তিনি ৷

প্রশ্নঃ- ভ্যাকসিন তৈরির প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে ৷ আপনার সংস্থা কি প্রথম সফল ভ্যাকসিন তৈরির কথা ঘোষণা করবে ?

সাধারণত একটি ভ্যাকসিন তৈরি হতে 14-15 বছর সময় লাগে ৷ এখানে 14-15 বছরের সঙ্গে আমরা 1 বছরের তুলনা করছি ৷ ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থা ও রেগুলেটর, সবার কাছে এটা খুব কঠিন কাজ ৷

প্রশ্নঃ- সুতরাং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আপনারা এটা বাজারে আনতে পারবেন ৷ এটা একটি দারুণ ব্যাপার ৷ কিন্তু এটা কি বিশ্বের সহযোগিতার কারণে হয়েছে ? এখন প্রচুর বৈজ্ঞানিক সাহিত্য পাওয়া যায়, তা কি আপনাদের সাহায্য করেছে ?

2-3 মাস আগেও COVID-19 সম্পর্কিত কোনও সাহিত্য ছিল না ৷ বর্তমানে প্রচুর তথ্য বেরিয়ে আসছে ৷ এবং আমি খুশি চিন ও US এই তথ্যগুলি পাবলিক ডোমেনে রেখেছে ৷ এটা খুব ভালো বিষয় ৷ কিন্তু উৎপাদকের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে কোনও কিছুই প্রকাশিত হয়নি ৷ যেগুলি প্রকাশিত হয়েছে সেগুলি হয় পশুর উপর ট্রায়ালের তথ্য অথবা ক্লিনিক্যাল তথ্য ৷ উৎপাদক এটাকে পাবলিক ডোমেনে দেয় না ৷ এটা একটা গোপনীয় বিষয় । সাধারণত কোনও উৎপাদন প্রক্রিয়া পেটেন্টের জন্যও আবেদন করা হয় না ৷

প্রশ্নঃ- ভ্যাকসিনটি বাজারে আনার আগে কীভাবে ট্রায়াল প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করা হবে ?

পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি ভাইরাসটি আলাদা করেছে ৷ তারা ভাইরাসটির চরিত্র বিশ্লেষণ করে আমাদের দিয়েছে ৷ তারপর আমরা R&D ব্যাচ তৈরি করেছি এবং তারপর GMP ব্যাচ তৈরি করেছি ৷ যেটা মানব শরীরে প্রয়োগ করা হবে সেটার সবসময় GMP ব্যাচে তৈরি করতে হবে ৷ তাই আমরা তিনটি ব্যাচ তৈরি করেছি ৷ তিনটি ব্যাচ তৈরি করার পর আমরা ভাইল বন্দী করে দু'টি ব্যাচ ইঁদুর, খরগোশের উপর প্রয়োগ করা হয় ৷ একটি ভাইল আলাদা করে রেখে দেওয়া হয় ৷ আমরা প্রাণীগুলির উপর একটি অথবা দুটি ডোজ় প্রয়োগ করি ৷ এরপর সেগুলির প্রতিরোধ ক্ষমতা ও নিরাপত্তার বিষয়টি লক্ষ্য করা হয় ৷

এগুলি শেষ করার পর আমরা ফেজ় 1, 2 ক্লিনিক্যাল ফর্মেশনে আসি ৷ ফেজ় ওয়ান 28 দিনের জন্য ট্রায়াল চলে ৷ একটি COVID-19 মুক্ত ভলান্টিয়ার নিয়োগের জন্য সেরোলজি বিশ্লেষণ করা হয় ৷ একবার rt-pcr টেস্টের পর ভলান্টিয়ার নিয়োগের পর তাদের ডোজ় দেওয়া হয় । 28 দিন ধরে নমুনা সংগ্রহ করা হয় ৷ তারপর আমরা সেরোলজি করি ৷ শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তা ভাইরাসটিকে আর বাড়তে দেয় না ৷ আমরা রক্তের নমুনা ও ভাইরাসটিকে BSL-3 ল্যাবে নিয়ে আসি ৷ এখানে ভাইরাসটির বৃদ্ধি পাওয়া উচিত নয় ৷ এরপর আমরা ফেজ় 2ও 3-এ যাই ৷ এটি বেশ সময়সাপেক্ষ ৷

প্রশ্নঃ- আমরা ভ্যাকসিনের কত কাছে পৌঁছেছি ?

অবশ্যই ভ্যাকসিন আসবে ৷ আমরা তিনটি প্ল্যাটফর্মে কাজ করছি ৷ আমরা নিশ্চিত অন্তত দুটটির ক্ষেত্রে এটি কাজ করবে ৷ প্রায় 100-র উপর R&D সংস্থা আছে ৷ তার মধ্যে অল্প সংখ্যক সংস্থারই ভ্যাকসিন তৈরির অভিজ্ঞতা আছে ৷

প্রশ্নঃ- NITI আয়োগ বলছে ভারতে প্রায় 6টি সংস্থা ভ্যাকসিন তৈরির প্রতিযোগিতায় আছে ৷ ভারতীয় উৎপাদনকারী সংস্থাগুলিকে কেমন দেখছেন ? ভারতে ল্যাব ও উৎপাদনকারী সংস্থার অনুপাত কত ?

ভারতে ভ্যাকসিন তৈরির উৎপাদনকারী এবং R&D কম্পানির সংখ্যা খুব কম ৷ তাদের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ও ভ্যাকসিন রিসার্চের কোনও অভিজ্ঞতা নেই ৷ এটা দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ ৷ অ্যামেরিকায় অনেক R&D কম্পানি আছে ৷ ভারতে উৎপাদনকারী সংস্থাও R&D কম্পানি ৷ ভারত বায়োটেকও একটি R&D কম্পানি ৷ এখন এখানে 100-র বেশি বিজ্ঞানী কাজ করে চলেছে ৷

প্রশ্নঃ- BSL-3: একটি গাইডলাইন ? এটা কী আপনি বলতে পারবেন ?

BSL-এর অর্থ হল বায়ো সেফটি লেভেল ৷ সর্বনিম্ন ক্যাটাগরি হল BSL-1 এবং BSL-3 হল সর্বোচ্চ ৷ একইরকম ভাবে আমাদেরও BSL লেভেল আছে ৷ সম্ভবত ভারত বায়োটেক একমাত্র কম্পানি যাদের BSL-3 উৎপাদন সুবিধা আছে ৷ চিন সম্প্রতি 200 মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে BSL-3 সুবিধা তৈরিতে ৷ অ্যামেরিকাও একটি তৈরি করতে চলেছে ৷ আমাদের যদি সুবিধা না থাকে তাহলে জীবনদায়ী ভ্যাকসিন বানানোর অনুমতি দেওয়া উচিত নয় ৷ এই বিশেষ সুবিধা ছাড়া আমরা ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারি না ৷ আমরা সঠিক রাস্তায় আছি ৷

প্রশ্নঃ- অনেক সংস্থা VERO সেল টেকনোলজি ব্যবহার করছে ৷ ভারত বায়োটেকও কি একই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে ? না এরা নতুন কিছু তৈরি করেছে ?

আমরা সবাই একই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করি ৷ আমরা যদি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করি তাহলে রেগুলেটরি হার্ডল বলে কিছু থাকে না ৷ আমাদের কাছে দু'টি প্রোডাক্ট থাকবে- সেল কালচার এবং ভাইরাস ৷ তাই তোমাকে দুটি প্রোডাক্টকে আলাদা আলাদা ভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে ৷ এবং এটি এর ফলে জটিল হয়ে পড়ে ৷ VERO সেল টেকনোলজি একটি রেগুলেটরিরর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পরীক্ষিত প্ল্যাটফর্ম ৷ আমরা একটি প্ল্যাটফর্মে 7-8 টি ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারি ৷

প্রশ্নঃ- আপনারা যদি ভ্যাকসিনটি আনতে পারেন তাহলে বিশ্বে এর ব্যাপক চাহিদা থাকবে ৷ সেক্ষেত্রে কীভাবে উৎপাদন বাড়াবেন ?

আমরা এখন প্রাথমিক ধাপে ৷ ভাইরাসটি কীভাবে বাড়ছে , কীভাবে GMP ব্যাচ তৈরি করা হয়, টক্সিলজি কীভাবে করা হয় এবং কীভাবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করা হয় সেগুলি দেখা হচ্ছে ৷ সমান্তরালভাবে, কীভাবে উৎপাদন বাড়ানো হবে সে বিষয়টি নিয়েও ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে ৷ আমরা রোটভাইরাস ও ব়্যাবিস ভ্যাকসিন তৈরিতে বিশ্বের সবথেকে বৃহত্তর উৎপাদক ৷ এতেই বোঝা যায় আমাদের ক্ষমতা আছে ৷ কিন্তু এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে এটা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ ৷

প্রশ্নঃ- সরকারের কাছ থেকে ও COVID-19 সংক্রান্ত জাতীয় ইনস্টিটিউটগুলি থেকে আপনারা কতটা সাহায্য পাচ্ছেন ?

সরকার যথেষ্ট প্রো-অ্যাকটিভ, এবিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ৷ একজন নির্মাতা হিসেবে আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে ৷ R&D সহজ, তবে আমাকে একটি পণ্য সরবরাহ করতে হবে যার সুরক্ষা এবং দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ ৷

প্রশ্নঃ- COVID-19-এর বেশ কয়েকটি স্ট্রেন রয়েছে বলে জানা গেছে ৷ আমাদের কি বিভিন্ন স্ট্রেনের জন্য আলাদা না সমস্ত স্ট্রেনের জন্য একটি মাত্র ভ্যাকসিনই দরকার ?

সমস্ত RNA (রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) ভাইরাস খুব দ্রুত বিবর্তনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয় ৷ মূলত একটি ভাইরাস একটি মৃত জীব ৷ এটা নিজে থেকে বৃদ্ধি পেতে পারে না ৷ তাই একে বৃদ্ধির জন্য মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে হবে ৷ যখন একটি মৃত জীব মানবদেহ ব্যবহার করে, এটি বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন হোস্ট শরীরের সঙ্গে আলাদাভাবে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ৷ COVID-19 জিনটি যা ফুসফুস রিসেপ্টরের সঙ্গে আবদ্ধ হয় তা খুব গুরুত্বপূর্ণ ৷ মিউটেশন অন্যান্য স্পাইকগুলিতে ঘটতে পারে তবে এটির মধ্যে নয় ৷

সুতরাং যদি এই অংশে কোনও রূপান্তর ঘটে তবে আমাদের আলাদা ভ্যাকসিন দরকার ৷ তবে আমরা যেমন আজ দেখছি তার খুব বেশি পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই ৷

প্রশ্নঃ- ভ্যাকসিন পেটেন্টের বিষয়টি ভারত বায়োটেক কীভাবে দেখছে ?

নির্মাতা হিসেবে আমাদের একটি প্রধান কারণে পেটেন্ট ফাইল করতে হবে ৷ অন্য উৎপাদনকারী সংস্থাকে দেখাতে হবে আমি তোমার আগে এটা করছি ৷ এটি কৌশলগত খেলা ৷ আমি চাই না যে MNC গুলি এসে আমাকে জানাক যে আমি পেটেন্ট লঙ্ঘন করেছি ৷ এজন্য বিশ্বব্যাপী আমাদের 160টি পেটেন্ট রয়েছে ৷

প্রশ্নঃ- যখন এটা অনেকের কাছে পৌঁছাবে তখন কি দাম সাধারণের আয়ত্বের মধ্যে থাকবে ?

রোটাভাইরাস ভ্যাকসিনটি অ্যামেরিকায় 65 ডলার এবং ইউরোপে 80 ডলারে বিক্রি হয় ৷ প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি আমরা এটি প্রতি ডোজ় 1 ডলারে বিক্রি করব ৷ সবচেয়ে কম দামে বিক্রি করা হবে ৷ COVID-19 ভ্যাকসিন এলে আমরা চিন থেকে 10 গুণ কম সস্তায় দিতে পারি ৷ আমরা সরকারের কাছ থেকে কোনও অর্থ গ্রহণ করিনি ৷ এর কারণ, দেশ এখন বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এই পরিস্থিতিটার সুযোগ নিতে চাই না ৷ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষের জীবন বাঁচানোই এখন প্রধান কাজ ৷

প্রশ্নঃ- আপনার পক্ষে কর্মীদের বোঝানো কতটা কঠিন ছিল কারণ এটি একদমই অন্যরকম সময়?

গত দু'মাস আমাদের জন্য একটি নার্ভাস ব্রেকডাউন ছিল ৷ কীভাবে চিন এবং বাকিদের ধরতে পারব ৷ এটি প্রচণ্ড চাপের ছিল, যেহেতু আমাদের 4 মাস দেরি হয়েছিল ৷ আর BSL-3 কনটেনমেন্টে আমার কর্মীদের কাজ করতে হয় ৷ আমি আমার কর্মীদের কাছে কৃতজ্ঞ । গত দু'মাস ধরে তারা তাদের পরিবারকে দেখেনি ।

ফেজ়-1 শুরু হলে আমরা তাদের টিকা দেব যাতে তারা সুরক্ষিত থাকে ৷ আমি মনে করি আমাদের কর্মীরা আমাদের এবং দেশের জন্য উপহার ৷

প্রশ্নঃ- আমরা কখন এই ভাইরাসকে পৃথিবী থেকে চলে যেতে দেখব ? অনেককে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য কি সময় লাগবে ? কী ধরনের লজিস্টিকাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে ?

আগামী বছরের মধ্যে 1.3 বিলিয়ন মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব ৷ সরকার যদি ব্যবস্থা করে তাহলে এটা সম্ভব ৷

সবচেয়ে সস্তা COVID-19 ভ্যাকসিন তৈরি করতে চলেছে ভারত বায়োটেক
Last Updated : Jul 2, 2020, 6:29 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details