যখনই কোনও পেনডেমিক আসে, আমরা ‘সুপার স্প্রেডার্স’ কথাটা শুনতে পাই । এই শব্দ ব্যবহৃত হয় এমন মানুষকে বোঝাতে, যার দেহে কোনও রোগের সংক্রমণ ঘটে এবং তার পর তার মাধ্যমে সেই জীবাণু একটা বড় সংখ্যক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে । একক ব্যক্তিই কখনও কখনও হাজার হাজার মানুষকে সংক্রামিত করতে পারে । এই সংক্রমণ ঠেকাতে ‘সুপার স্প্রেডার্স’–দের খোঁজ পাওয়া জরুরি । যদিও সব ‘সুপার স্প্রেডার্স’–দের উপসর্গ দেখা যায় না, তবু তারা ‘অ্যাসিমটোম্যাটিক’ তথা উপসর্গবিহীন বাহক হিসাবে কাজ করেন । বিশ্ব ইতিহাসে এমনই একজন ‘সুপার স্প্রেডার’ ছিলেন টাইফয়েড মেরি । 1869 সাল থেকে 1938 সাল পর্যন্ত তিনি বেঁচে ছিলেন এবং কখনও তাঁর শরীরে টাইফয়েডের কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি । এইভাবেই তিনি নিঃশব্দে রোগ বহন করে গিয়েছেন । তাঁর মাধ্যমে এই রোগ 51 জনের শরীরে ছড়িয়ে পড়েছিল, যার মধ্যে অনেকের মৃত্যুও হয়েছিল । এই কারণে তাঁকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছিল । কোভিড–19 ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর হার SARS ভাইরাসের থেকেও দ্রুত । তবে ‘সুপার স্প্রেডার্স’–দের বিশাল সংখ্যার কারণে বিশ্বের ২০০টি দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে । নভেল কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে বেশিরভাগ দেশ বর্তমানে বড়ই অসহায় ।
এক মহিলা, যাকে অভিহিত করা হয়েছে ‘রোগী নম্বর 31’ হিসাবে, তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় হাজার হাজার নভেল কোরেনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য দায়ি । তাঁর প্রাথমিক উপসর্গ দেখে চিকিৎসকরা তাকে আইসোলেশনে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন । কিন্তু নির্দেশ মেনে কোয়ারান্টাইনে থাকার পরিবর্তে সেই মহিলা স্থানীয় গির্জায় বিভিন্ন ধর্মীয় প্রথা পালনে অংশ নেন । তারপর স্থানীয় একটি রেস্তোরায় নৈশভোজও করেন । কিছু দিন তাঁর পরিক্ষার ফল পজ়িটিভ আসে । কোরিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল জানাচ্ছে, ওই মহিলার মাধ্যমে ভাইরাস অন্তত 1,160 জন মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে । দেয়েগু শহরের অন্তত 60 শতাংশ মানুষের কোভিড-19-এ আক্রান্ত হওয়ার পিছনে ওই মহিলাই দায়ী ৷ ব্রিটেনে স্টিভ ওয়ালশ নামে একজন ব্যবসায়ীকে কোরোনার ‘সুপার স্প্রেডার’ হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে । ওই ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুর ভ্রমণে গিয়ে নভেল কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন । দেশে ফিরে তাঁর মাধ্যমে অন্তত 11 জনের দেহে ভাইরাস সংক্রামিত হয় ।
বলদেব সিং, পঞ্জাবের পাথলায়া গ্রামের বাসিন্দা এবং গুরুদ্বারের পূজারী, জার্মানি, ইতালি ভ্রমণ করে গত 7 মার্চ ভারতে ফেরেন । সরকারের তরফে কোয়ারান্টাইনে থাকার নির্দেশ অমান্য করে তিনি স্থানীয় হলা মহল্লা অনুষ্ঠানে যোগ দেন । পরে অসুস্থ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয় । পরে পরীক্ষায় জানা যায়, তিনি কোভিড–19 এ আক্রান্ত ছিলেন । পঞ্জাবের 33 জন করোনা আক্রান্তের মধ্যে তিনি ছিলেন এক জন, এবং তাঁর মাধ্যমেই বাকিদের মধ্যে ভাইরাস সংক্রামিত হয় । এই ঘটনার পর ওই গ্রাম ও তার আশপাশের গ্রাম মিলিয়ে অন্তত 40,000 মানুষকে কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হয় । দিল্লির একটি মহল্লা ক্লিনিকের চিকিৎসক একজন কোভিড–19 আক্রান্তকে পরীক্ষা করতে গিয়ে নিজেকে সংক্রামিত করে ফেলেন । সেই চিকিৎসকের কাছে দেখাতে যাওয়া 900 জন বর্তমানে কোয়ারান্টাইনে আছেন । রাজস্থানের ভিলওয়ারায় একজন চিকিৎসকের বাড়িতে সৌদি আরব থেকে তাঁর এক আত্মীয় আসেন । এইভাবে সেই আত্মীয়র মাধ্যমে ওই চিকিৎসকের দেহে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে । রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই ওই চিকিৎসকের মাধ্যমে সংক্রমণ তাঁর হাসপাতালের আরও 16 জনের দেহে ছড়িয়ে পড়ে । ফলে বর্তমানে অন্তত 8,000 মানুষ কোয়ারান্টাইনে আছেন ।