দিল্লি ও কলকাতা, 18 মে : শক্তি বাড়াচ্ছে আমফান । বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ দিক থেকে ক্রমশ এগোচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলের দিকে । পরে এটি বাঁক নেবে ওড়িশার দিকে । আজ এনিয়ে একটি নির্দেশিকা জারি করে ওড়িশা সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সতর্ক করল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক । বিকেলে আমফান পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ।
দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর থেকে এগোচ্ছে ঘূর্ণিঝড় আমফান । ক্রমশ শক্তি বৃদ্ধি করছে এটি । আগামী 12 ঘণ্টায় শক্তিশালী হয়ে সুপার সাইক্লোন অর্থাৎ অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে । আলিপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ বেলা 12 টার পর থেকে এই ঘূর্ণিঝড় উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে এবং কিছুটা যাওয়ার পর উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে বাঁক নেবে ।
আজ ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে প্রতি ঘণ্টায় 13 কিলোমিটার বেগে অগ্রসর হচ্ছে এই ঘূর্ণিঝড় । আগামী 6 ঘণ্টা ধরে এগোবে উত্তর ও উত্তর- পশ্চিম দিকে । আপাতত বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ- মধ্য দিকে পারাদ্বীপ থেকে 790 কিলোমিটার দূরে, দিঘা থেকে 940 কিলোমিটার দূরে ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে 1007 কিলোমিটার দূরে অবস্থান রয়েছে এটির । 12 ঘণ্টার মধ্যে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে । বুধবার দিঘা উপকূলের পাশ দিয়ে বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করবে স্থলভাগে । আমফানের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় 155 থেকে 165 কিলোমিটার । হাওয়ার দাপট থাকবে প্রায় 185 কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় ।
শনিবার জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কমিটি (NCMC) আমফানের প্রস্তুতি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার সঙ্গে বৈঠক করে । আমফান মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই একাধিক পদক্ষেপ করেছে এই দুই রাজ্য । তৈরি আছে NDRF । থাকছে গাছ কাটার মেশিন ও উদ্ধারকার্যের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম । পশ্চিমবঙ্গের দিঘায় চলছে সতর্কতামূলক প্রচার । টহল দিচ্ছে পুলিশ ও NDRF-এর টিম । আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে নির্দেশিকা দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে দুই রাজ্যকে । আমফান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রীও ।
আলিপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আমফানের প্রভাবে আগামীকাল থেকে ঝড়- বৃষ্টি শুরু হবে কলকাতাসহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের সাত জেলায় । আগামীকাল রাতে ও বুধবার সকালে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে ঝড়ের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় 95 থেকে 100 কিলোমিটার পর্যন্ত । বুধবার কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর 24 পরগনা, দক্ষিণ 24 পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সর্তকতা জারি করা হয়েছে । সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা থেকে ও নিচু জায়গা থেকে বাসিন্দাদের উঁচু জায়গায় সরে যেতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে । এই সাত জেলার পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাতেও এর জেরে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে । সঙ্গে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া ।
আমফানের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এই সাত জেলার রেললাইন । তাই বুধবার সড়ক ও রেল পরিবহন নিয়ন্ত্রণে রাখতে বলা হয়েছে । আলিপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রবিশস্যের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে । তাই আজকের মধ্যে খেত থেকে শস্য সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে চাষিদের । এই সাত জেলার বাসিন্দাদের ঝড়ের সময় বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে । আগামী বুধবার পর্যন্ত সব রকম লঞ্চ পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার নির্দেশ রয়েছে । মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে ।