পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

মোদি-চিনপিং পর্যায়ের বৈঠকেই মিলতে পারে সমাধান

আলোচনার সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে, এখন কেবলমাত্র দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠকেই সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং, উভয়েই অত্যন্ত জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে নিজেদের দেশে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন । সমস্যার সমাধানে তাঁদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন । এমনই মনে করছেন সাংবাদিক সঞ্জীবকুমার বড়ুয়া ।

LAC conflict
LAC conflict

By

Published : Sep 23, 2020, 8:33 PM IST

Updated : Sep 24, 2020, 10:24 AM IST

গত কয়েক মাসে পূর্ব লাদাখে একাধিক কর্পস কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে । তার পর সোমবার আবার ভারতের চুসুল পোস্টের কাছে মলডোতে আরও একটি বৈঠক হয় । ওই বৈঠক চলে টানা 14 ঘণ্টা ধরে । কিন্তু সেই বৈঠকও কোনও রকম সন্তোষজনক ফলাফল ছাড়াই শেষ হয়েছে । ফলে অচলাবস্থা জারি রয়েছে ।

সূত্র থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, আলোচনায় চিনের পক্ষ থেকে তাদের একগুঁয়ে মনোভাব বজায় রাখা হয়েছে । পূর্ব লাদাখে তারা যে অবস্থানে রয়েছে সেখান থেকে সেনা না সরাতে অনড় চিন । "প্যাংগং হ্রদের উত্তর পাড়, ডেসপাং ও হট স্প্রিং এলাকায় চিনারা যেখানে অবস্থান, সেখান থেকে যে কোনও প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিতে সেনা সরানোর প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে তারা । এর সঙ্গে PLA দাবি করেছে যে প্যাংগং সো এর দক্ষিণ পাড়ে ভারতীয় সেনা যে সমস্ত জায়গায় নতুন করে অবস্থান করা শুরু করেছে, সেখান থেকে সরে যেতে হবে । যাতে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় ।" সূত্রের তরফ থেকে আরও জানা গিয়েছে যে অচলাবস্থা কাটানোর জন্য যেহেতু কোনও অগ্রগতি হচ্ছে না, তাই আগামী এক পক্ষকালের মধ্যে আবার এই নিয়ে বৈঠকের বিষয়ে উভয় পক্ষ সহমত হয়েছে ।

এপ্রিল-মে মাসে যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার পর থেকে একাধিক পর্যায়ে সমঝোতা সূত্র বের করার জন্য বৈঠক হয়েছে । এই বৈঠকটি তারই অঙ্গ । মোদি ও জিনপিং স্তরের বৈঠক সমঝোতার সব রকমের প্রচেষ্টা করার পর নতুন করে সমাধানের আশার আলো পাওয়া যেতে পারে একমাত্র দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে । এর কারণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চিন প্রেসিডেন্ট উভয়েই এই মুহূর্তে দেশের অভ্যন্তরে জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় । ফলে তাঁদের উচিত প্রয়োজনীয় চুক্তির বিষয়ে চেষ্টা করা । যদি তা না হয়, তাহলে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা ( LAC )-র পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে । আরও উত্তপ্ত হওয়ার দিকে যেতে পারে । অক্টোবরে চিনের তরফে ভারতের সঙ্গে সরাসরি লড়াই শুরু করে দেওয়া হতে পারে । ফলে সেনা সরানো নিয়ে সমস্ত নির্ধারিত পদ্ধতি ও প্রোটোকল ভেঙে পড়তে হবে ।

অক্টোবরে কেন ?

নভেম্বর এবং তার পরে LAC বরাবর ওই এলাকার পরিস্থিতি মানুষের কাজ করার জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে যাবে । অত্যন্ত তুষারপাত, জমে যাওয়ার মতো ঠান্ডা, শীতল পরিস্থিতি, বাতাসের অভাব সেখানে মানুষের পক্ষে কাজ করার পরিস্থিতি একেবারে অসম্ভব । যুদ্ধের কথা তো ছেড়েই দিন । অন্যদিকে হিমালয়ের উচ্চতায় তুষার গলে যাওয়ার পরিস্থিতি আসার আগে পর্যন্ত জওয়ান মোতায়েন ও সামগ্রী মজুত করে রাখা উভয় দেশের জন্যই অর্থনৈতিক বোঝা বৃদ্ধি করবে । বিভিন্ন অর্থনৈতিক কারণ ও COVID-19 এর মারাত্মক আঘাতের জেরে ভারতীয় অর্থনীতির পতন শুরু হয়েছে । উৎসবের মরসুম (অক্টোবর-জানুয়ারি ) ও রবি শস্য ফলনের মরসুম অর্থনীতিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে । কারণ, এই সময় উৎসব, বিয়ে হয় এবং গ্রাহকদের চাহিদাও বেশি থাকে । এটা ভারতীয় অর্থনীতিকে কিছুটা হলেও পতন আটকাতে সাহায্য করবে এবং যে ক্ষতি হতে চলেছে, তা কিছুটা হলেও কমাতে পারবে ।

চিন তাদের কৌশলগত পরিকল্পনার প্রবৃত্তি থেকে ভারতের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পরিস্থিতিকে আটকে দেওয়ার চেষ্টা করবে । আর তাই LAC-তে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করার চেষ্টা করবে । এর ফলে অতিরিক্ত 40 হাজার সেনা মোতায়েন ও আরও সেনা সরঞ্জাম মজুত করা অর্থনীতির জন্য আরও অনেক বড় বোঝা হয়ে দাঁড়াবে । সেপ্টেম্বরের 4 তারিখ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং মস্কোতে চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেংগের সঙ্গে বৈঠক করেন । মস্কোতেই বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর সেপ্টেম্বরের 10 তারিখ বৈঠক করেন চিনের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে । চিন বিষয়ে ভারতের বিশেষ প্রতিনিধি ( SR ) হলেন অজিত ডোভাল । তিনি আবার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা । তিনি জুলাই মাসে ভার্চুয়াল মাধ্যমে চিনের SR ওয়্যাং ই এর সঙ্গে বৈঠক করেন । কর্পস কমান্ডার পর্যায়ের যে বৈঠক সোমবার চুষুল-মল্ডোতে হয়েছে, লেফটেন্যান্ট জেনেরাল পর্যায়ের ষষ্ঠ বৈঠক । এর জুন মাসের 6, 22 ও 30 তারিখ এবং জুলাইয়ের 14 ও অগস্টের 2 তারিখ এই পর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল ।

ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিদেশ মন্ত্রকে চিন বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব নবীন শ্রীবাস্তব । এছাড়া ছিলেন 14 নম্বর কর্পসের কমান্ডার সেফটেন্যান্ট জেনেরাল হরিন্দর সিং এবং লেফটেন্যান্ট জেনেরাল পি জি কে মেনন । মেনন অক্টোবরে লেফটেন্যান্ট জেনেরাল সিং এর থেকে দায়িত্ব নেবেন । এটাই ছিল ওই বৈঠকের বিশেষত্ব ।

যৌথ বিবৃতি

এশিয়ার দুই বৃহৎ শক্তির বিদেশ মন্ত্রীদের বৈঠকে নেওয়া সংকল্পের ভিত্তিতে 5 টি পয়েন্টের যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল গত 10 সেপ্টেম্বর । তার ভিত্তিতে সোমবারের আলোচনায় ঐকমত্য তৈরি হয় । এটাই ওই বৈঠকের গুরুত্ব ।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং উহান (এপ্রিল 27-28, 2018 ) ও মমল্লপুরম (অক্টোবর 12,2019 ) এ ‘অনাড়ম্বর’ সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন । সেখানে যে আপাত চুক্তি হয়েছিল, সেটাকে টেনে এনেই ‘নেতাদের একাধিক ঐকমত্যের’ উপর জোর দিয়েই যৌথ বিবৃতিতে প্রথম পয়েন্টটি তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রয়েছে । সীমান্তে এখন যে পরিস্থিতি রয়েছে, তার সমাধান করতে বর্তমানের সমস্ত প্রক্রিয়া ব্যর্থ হওয়ার পর কৌশলে মোদি ও শি-এর বৈঠকের বিষয়টি টেনে আনা হয়েছে । এর ফলে এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে আবার মোদি ও শি-এর পর্যায়ের বৈঠকে ফিরে যাওয়া উচিত ।

ভারত ও চিনের মধ্যে সমস্যার পরিস্থিতি এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে, যেখানে উভয় দেশের একেবারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে এটা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত । যেখানে এই দীর্ঘ সময় ধরে চলা সমস্যার সমাধান করা যাবে । কোলোনিয়াল পাস্ট ও সেনা বা কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা ঐতিহাসিক ভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে পারবে না ।

ঐতিহাসিক গতিবিধি

হিমালয় অঞ্চলে সেনা জওয়ানদের পাঠানো, সেনা সরঞ্জাম ও লজিস্টিক পাঠানোর মতো অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মধ্যেই ভারত ও চিনের মধ্যে সমঝোতা সংক্রান্ত আলোচনা চলছে । এই মুহূর্তে LAC বরাবর গভীর এলাকাগুলিতে উভয় পক্ষই প্রায় 1 লাখ সেনা মোতায়েন করে রেখেছে । অভূতপূর্ব গতিতে পরিকাঠামো ও লজিস্টিক সংক্রান্ত উন্নয়নের কাজ করা হচ্ছে । যখন চিন এই প্রথমবার LAC-তে বিপুল পরিমাণ সেনা মোতায়েন করছে, তখন ভারতও পাকিস্তানের উপর নজর রাখা সংক্রান্ত সেনা কৌশল থেকে সরে চিন কেন্দ্রিক কৌশল নিতে শুরু করছে ।

Last Updated : Sep 24, 2020, 10:24 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details