পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

‘নমস্তে ট্রাম্প’, অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাবে লক্ষাধিক মানুষ - ভারত

2000 সালে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের ভারত সফরের পর দুই দেশের সম্পর্ক উন্নত হয় ৷ ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিরক্ষা জোটসঙ্গী হয়ে ওঠে অ্যামেরিকা ৷ এবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আসছেন ভারত সফরে ৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন, প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর ও অন্য বিষয়ে আলোচনা হতে পারে ৷ বিদেশ মন্ত্রকের প্রাক্তন মুখপাত্র ও দক্ষিণ কোরিয়া ও কানাডায় ভারতের প্রাক্তন দূত বিষ্ণু প্রকাশের প্রতিবেদন ৷

Donald trump on visit in India
ডোনাল্ড ট্রাম্প

By

Published : Feb 19, 2020, 3:24 PM IST

24 এবং 25 ফেব্রুয়ারি একটি রাষ্ট্রীয় সফরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতে আসছেন । স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পকে সঙ্গে নিয়ে ট্রাম্প আমেদাবাদে অবতরণ করবেন এবং তাঁকে এমন বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অভ্যর্থর্না জানানো হবে, যা ইতিপূর্বে তিনি দেখেননি এবং ভবিষ্যতেও সম্ভবত দেখবেন না । 12 ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনের ওভাল অফিসে নিজের ভারত সফরের কথা ঘোষণা করে ট্রাম্প রীতিমতো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেছিলেন, তাঁকে স্বাগত জানাতে লাখ লাখ মানুষ বিমানবন্দর থেকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ নবনির্মিত সর্দার প্যাটেল স্টেডিয়াম পর্যন্ত যাত্রাপথে উপস্থিত থাকবেন । আর এই স্টেডিয়ামেই ট্রাম্প এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অন্তত এক লাখ দর্শকের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেবেন ।

নয়াদিল্লিতে একটি তাৎপর্যপূর্ণ বাণিজ্যিক লেনদেন এবং প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে । দুই রাষ্ট্রনেতা সেখানে দু’দেশের যৌথ স্বার্থসম্বন্ধিত একাধিক দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে আলোচনা করবেন । লক্ষ্যণীয়ভাবে, ভারত এবং আমেরিকার ৬০টি উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা চক্র রয়েছে, যার মধ্যে “2+2 মন্ত্রীপর্যায়ের আলোচনা” (বিদেশ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা)-ও রয়েছে , যার দ্বিতীয় রাউন্ডের আলোচনা 2019 সালে ডিসেম্বর মাসে ওয়াশিংটনে হয়েছিল।

2016 সালের জুন মাসে ভারত এবং অ্যামেরিকা ‘বিশ্বব্যাপী কৌশলগত জোট’ গঠন করেছিল । পাশাপাশি ভারতকে ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা সঙ্গী’ হিসাবে চিহ্নিত করে নিজেদের ঘনিষ্ঠতম জোটসঙ্গী ও বন্ধু দেশের সমান মর্যাদাও দিয়েছিল অ্যামেরিকা । 2005 সাল পর্যন্ত 40 বছর ধরে অ্যামেরিকা থেকে ভারত কার্যত কোনও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানি করেনি । পরবর্তী 15 বছরে অ্যামেরিকা আবার ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিরক্ষা জোটসঙ্গী দেশ হিসাবে উঠে এসেছে । অন্তত 18 বিলিয়ন মূল্যের আধু্নিক মানের প্রতিরক্ষা সামগ্রী এবং তা প্রয়োগের পরিকাঠামো ভারতে রপ্তানি করে অ্যামেরিকা । আরও অনেক চুক্তি ভবিষ্যতে বাস্তবায়িত হবে ।

সুতরাং এটা বিশ্বাস করা সত্যিই কঠিন যে, 1971 সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট নিক্সন, বিমান বহনকারী USS এন্টারপ্রাইজের নেতৃত্বাধীন সপ্তম সেনাবাহিনীকে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে ভারতকে আটকাতে আদেশ দিয়েছিলেন । পাকিস্তানের অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সাহায্য করছিল ভারত । যাতে ভারত আর সাহায্য করতে না পারে, সে কারণেই নিক্সন এমন নির্দেশ দেন বলে শোনা যায় । শুধু তাই নয়, আমেরিকা চিনকে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে ইন্ধনও দিয়েছিল ।

1998 সালের মে মাসে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করার পর ভারতকে একঘরে করতে ও তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আনতে চেয়ে যে দাবি উঠেছিল, তাতে নেতৃত্ব দিয়েছিল অ্যামেরিকা । যদিও সেই সময় অর্থাৎ 1998 থেকে 2000 সালের মধ্যে বিদেশমন্ত্রী যশবন্ত সিং এবং অ্যামেরিকা উপ-বিদেশ সচিব স্ট্রোব টালবট, তিন মহাদেশের সাতটি দেশে 14 বার দেখা করে ও কথা বলে, উদ্ভূত সংকটকে সুযোগে রূপান্তরিত করে ফেলেন । এর পর 2000 সালের মার্চ মাসে 22 বছর বিরতির পর প্রেসিডেন্ট ক্লিন্টনের পাঁচ দিনের ভারত সফর অ্যামেরিকা এবং ভারতের সম্পর্কে একটি নতুন যুগের সূচনা করে । তার পর আর ভারতকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ।

প্রেসিডেন্ট বুশ সবরকম চেষ্টা করেছিলেন পারমাণবিক পরীক্ষার ফলে সৃষ্ট শৈত্য থেকে ভারতকে উদ্ধার করার । ভারতের বিরুদ্ধে তখন একমাত্র বাধা ছিলেন চিনা প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও, যাকে ফোন করেন বুশ, আর এর পরই কাজ হয় । 2008 সালের 6 সেপ্টেম্বর NSG -র (নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপ) তরফে ভারত নিরঙ্কুশ ছাড়পত্র পায় । তার আগে 2006 সালের 3 মার্চ নয়াদিল্লিতে বুশ বলেছিলেন, “অ্যামেরিকা এবং ভারত, আগের তুলনায় এখন অনেকটাই কাছাকাছি এবং দু’টি স্বাধীন দেশের এই জোট, গোটা দুনিয়াকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে ।”

2010 সালের নভেম্বর মাসে প্রথম ভারত সফরে আসেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা । সে বার সংসদে ভাষণ দিতে গিয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের দাবিকে সমর্থন করার আশ্বাস দিয়েছিলেন । বলেছিলেন, “এশিয়া এবং বিশ্বের অন্য অংশে ভারত শুধুমাত্র উপরের সারিতে উঠে আসছে না, ইতিমধ্যেই উঠে এসেছে ।” তাৎপর্যপূর্ণভাবে, 1950 সালের আগস্ট মাসে রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদের জন্য ভারতকে সমর্থন করার প্রস্তাব দিয়েছিল অ্যামেরিকা । কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু মনে করতেন কমিউনিস্ট চিন ভারতের চেয়েও যোগ্য দাবিদার ।

সব মিলিয়ে তাই, ভারত-অ্যামেরিকা সম্পর্কে কল্পনাতীত পরিবর্তন এসেছে, পরস্পরের বিরুদ্ধে থাকা দুই গণতান্ত্রিক দেশ থেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়েছে দুই দেশ । এই 180 ডিগ্রি ঘুরে যাওয়ার কারণ কী? এর পিছনে আকর্ষণ এবং বিকর্ষণ, দু’ধরনের নিয়ামকই রয়েছে । আকর্ষণ নিয়ামকের মধ্যে রয়েছে গণতন্ত্রের ভিত্তি এবং বহুত্ববাদ, ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশ, ভারতের বাজারের পরিধি এবং অনাবাসী ভারতীয়দের প্রভাব । ভারতের উত্থানকে স্বাগত জানিয়েছে আমেরিকা, এবং পরবর্তীকালে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষেত্রেও সমস্ত স্তরে দুই দেশের স্বার্থে বিভেদ আসবে না ।

বিকর্ষণ নিয়ামকের মধ্যে রয়েছে ক্রমবিস্তারশীল চিনের অভূতপূর্ব উত্থান, যা এই সুপ্রতিষ্ঠিত ভূকৌশলগত আধিপত্য এবং বিশ্বের সর্বসেরা ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হিসাবে অ্যামেরিকা পরিচয়কে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে । ভারতকে তাই এই ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য রক্ষাকারী দেশ হিসাবে দেখার হার বাড়ছে ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details