2020 সালের 9 অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী 1 লাখ কোটি টাকার কৃষি পরিকাঠামো তহবিল (AIF)-এর সূচনা করেন । কৃষিক্ষেত্রে ফসল ফলনের পর তা মজুত, প্রক্রিয়াকরণের জন্য এই তহবিল গড়ে তোলা হয়েছে । যে কাজ সাধারণত ফার্মার প্রডিউসার অর্গানাইজেশনস (FPOs) করে থাকে । ওই তহবিলের সাহায্যে প্রাইমারি এগ্রিকালচার ক্রেডিট সোসাইটি (PACs)-র মাধ্যমে ন্যূনতমহারে FPO গুলিকে এবং অন্য উদ্যোগপতিদের ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় । কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রকের সহায়তার জন্য পুরো কাজটি করবে NABARD ।
ফসল ফলনের পর পুরো প্রক্রিয়ার ব্যবস্থাপনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার 3 শতাংশ হারে ঋণের ব্যবস্থা করে পুরো খরচ বহন করবে । ঋণ নিয়ে তা দিতে না পারলে তারজন্য 2 কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যাঙ্ককে গ্যারেন্টি দেওয়ার ব্যবস্থাও করবে কেন্দ্র । ক্ষুদ্র ও ছোট সংস্থাগুলির জন্য 2 কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের ব্যবস্থা করার জন্য এই কাজ করা হবে ক্রেডিট গ্যারেন্টি ফান্ডের মাধ্যমে ।
AIF-এর প্রধান উদ্দেশ্য হল ফসল ফলনের পরের প্রক্রিয়ার জন্য বিনিয়োগ টানার ব্যবস্থা করা । কারণ, কৃষি সরবরাহ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ফসল ফলনের পরের প্রক্রিয়াটা খুবই দুর্বল অবস্থায় রয়েছে । 3 শতাংশ হারে ঋণ নিয়ে গুদাম ঘর, বাছাই করার জায়গা, হিমঘর প্রকল্প, পাকা জায়গা ও ই-মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য ঋণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে ।
কৃষিজাত বাজারকে সঠিক দিশা দেখাতে এই তহবিল গড়ে তোলা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ । কেন্দ্রীয় সরকার এর আগে কৃষিজাত বাজারের আইনি কাঠামো তৈরি করতে তিনটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল । কৃষিজাত বাজারের ক্ষেত্রে কিছু উদারীকরণ করার জন্যই ওই কাজ করা হয়েছিল । ওই তিন অধ্যাদেশের মাধ্যমে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনে সংশোধন করা হয় । তাতে কৃষকদের ছাড় দেওয়া হয়, যাতে তাঁরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল APMC মান্ডিগুলির বাইরেও বিক্রি করতে পারেন । আর কৃষক, প্রস্তুতকারক, রপ্তানিকারী ও বিক্রয়কারীর মধ্যে কৃষি সংক্রান্ত চুক্তিতেও উৎসাহ দেওয়া হয় । কৃষিজাত বাজারকে সঠিক দিশা দেখাতে আইনি কাঠামোয় বদল করা জরুরি ছিল । কিন্তু তা পর্যাপ্ত ছিল না । ফসল ফলনের পরের ব্যবস্থার জন্য পরিকাঠামো তৈরি করা ততটাই গুরুত্বপূর্ণ, যতটা জরুরি আইনি কাঠামোয় বদল আনা । AIF, এই শূন্যস্থান পূরণে সাহায্য করবে । এটা কতটা দ্রুত এবং কতটা জরুরি ভিত্তিতে কাজ করছে, তার উপর এর ইতিবাচক প্রভাব নির্ভর করছে । তাছাড়া কেন্দ্রের দ্বারা করা এই সংস্কার বাস্তবায়িত করতে রাজ্যগুলি, FPO গুলি এবং সংস্থাগুলি কী করছে, তার উপরও এর ইতিবাচক প্রভাব নির্ভর করছে ।
যেহেতু NABARD আরও 10 হাজার FPO তৈরির দায়িত্বে রয়েছে । তাই তাদের তরফে একটি প্যাকেজ তৈরি করতে হবে, যার মাধ্যমে এই FPO গুলি আরও ভালো দাম পেতে পারে । এর মধ্যে কিছু অনুপস্থিত উপাদানও রয়েছে । ফসল ফলনের ঠিক পরেই দাম সাধারণত কম থাকে । কিন্তু সেই সময় কৃষকরা বাধ্য হন উৎপাদিত ফসল কম দামে বিক্রি করে দিতে । ফলে আরও বেশি এবং আরও ভালো মজুত করার ব্যবস্থা যে কৃষকদের কম দামে উৎপাদিত ফসল বিক্রি আটকে দিতে পারবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই । কিছু ক্ষুদ্র চাষিদের পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে ফসল মজতু করে রাখা সম্ভব নয় । কারণ, পরিবারের খরচ চালানোর জন্য তাঁদের অর্থের প্রয়োজন । ( ভারতে 126 মিলিয়ন প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র খামার রয়েছে । এখানে সব মিলিয়ে 74 মিলিয়ন হেক্টর কৃষিজমি রয়েছে । আর তা কৃষিজমির গড় আয়তনের 0.58 হেক্টর । ) জমির আকার ছোট হওয়ায় তাঁদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় । তার মধ্যে রয়েছে বাজার ও টাকা জোগানের অভাব ।
আলোচনাযোগ্য হিমঘর রসিদ ব্যবস্থার মাধ্যমে FPO গুলির দাম বাড়ানো যেতে পারে । বর্তমান বাজার দরের উপর নির্ভর করে FPO গুলি কৃষকদের ফসলের দামের 75 থেকে 80 শতাংশ অগ্রিম হিসেবে দিতে পারে । কৃষকরা যে ফসল ফলাবে, তার উপর ভিত্তি করে কৃষকদের অগ্রিম দিতে গেলে FPO গুলির মূলধনের পরিমাণও অনেক বেশি হতে হবে । যেভাবে কৃষকদের ফসলের জন্য ঋণ দেওয়া হয়, সেই ভাবে যতক্ষণ না পর্যন্ত NABARD FPO গুলির মূলধন 4 থেকে 7 শতাংশ সুদের হারে ব্যবস্থা করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে হিমঘর তৈরি করেও কোনও লাভ হবে না । বর্তমানে FPO গুলি তাদের মূলধন জোগাড়ের জন্য ঋণের বেশিরভাগটাই বছরে 18 থেকে 22 শতাংশ সুদের হারে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলির থেকে নেয় । এই হারে ঋণ নিলে ফসল মজুত করে রাখা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক নয় । যদি না ফসল উৎপাদনের সময় যে বাজারদর থাকে, অন্য সময় তার থেকে অনেকটাই বেশি হয় ।
(2020 সালের 17 অগাস্ট ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প মন্ত্রক (MSME) একটি অনলাইন Farm-to-Fork পরিষেবার সূচনা করে । যে পরিষেবায় vedkrishi.com-এর মাধ্যমে নাগপুরের একটি FPO সরাসরি বাড়িতে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, সবজি, শস্য ও ডাল পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে । তারা আচার, জুস, সস ইত্যাদিও বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে । ওই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে FPO টি গ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি কৃষকদের যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছে । নথিভুক্ত গ্রাহকরা এক বছরের জন্য আগে থেকেই তাঁদের অর্ডার দিয়ে দিতে পারবেন । এছাড়া এর মাধ্যমে অন্য কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করে চাষিরা জৈব পদ্ধতিতে চাষবাস করছেন । পোর্টালে যে পণ্যের তালিকা দেওয়া রয়েছে, তার মাধ্যমে গ্রাহকরা কোনও কিছু কেনার সময় চাষিদের সম্পর্কে সমস্ত তথ্য পেয়ে যাচ্ছেন । এছাড়া FPO কৃষিকাজে প্রয়োজনীয়, কম্পোস্ট, বায়ো ফার্টিলাইজার, কীটনাশকের সমাধান ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্যও দিয়ে দিচ্ছে । বর্জ্যশূন্য ও সুবিধাজনক ভাবে শুকনো করার জন্য তারা সোলার ড্রায়ারেরও ব্যবস্থা করছে । বিজ্ঞান ও অর্থনীতির মেলবন্ধন ঘটিয়ে কৃষকদের ভালোর জন্য খরচ কমাতে, পণ্যের গুণমান বৃদ্ধি করতে এবং উন্নতি কৃষি প্রযুক্তির সাহায্যে কৃষকদের পথ দেখাতে ও নজরদারি করার জন্য FPO উদাহরণ হিসেবে থাকতে পারে । )
NABARD-কে এমন একটা বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে যাতে FPO গুলি আলোচনাযোগ্য হিমঘর রসিদ ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে । আর ভবিষ্যতে কৃষিতে বাজার সংক্রান্ত ঝুঁকি কমাতে ব্যবস্থা নিতে পারে ।
দ্বিতীয়ত, সরকারি সংস্থাগুলিকে পণ্য বাজারে প্রবেশ করতে হবে । দ্য ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (FCI), ন্যাশনাল এগ্রিকালচার কো অপরাটিভ মার্কিটং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (NAFED), স্টেট ট্রেডিং কর্পোরেশন (STC)-কে কৃষির ভবিষ্যতের বাজারে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে । এই ভাবেই চিন তাদের কৃষির ভবিষ্যতের বাজারের উপর নির্ভরশীল ।
তৃতীয়ত, যে সমস্ত ব্যাঙ্ক FPO গুলি ও অন্য ব্যবসায়ীদের ঋণ দেয়, তাদেরও পণ্যের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এই ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করতে হবে । যাতে কৃষিজাত বাজারের ভালো উন্নতির জন্য পুনর্বিমার ব্যবস্থা করা যায় ।
শেষ পর্যন্ত, সরকারের নীতি আরও স্থিতিশীল ও বাজারের পক্ষে ভালো এমন যেন হয় । অতীতে এতে অনেক বিধিনিষেধ ছিল । আর তা ছিল অনিশ্চিত । কৃষির ভবিষ্যতের উপর নিষেধাজ্ঞার জন্য কৃষিজাত পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেত । অনুমানের উপর ভিত্তি করে ভারতীয় নীতি নির্ধারকরা কৃষির ভবিষ্যতের বাজারকে দেখত । এই বাজারকে যে কোনওরকম অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি বা কমে যাওয়ার জন্য দায়ী করা হত । দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমাদের নীতি নির্ধারকরা সঠিক দাম খুঁজে বের করার জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করত না । কৃষির ভবিষ্যতের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে বা তা স্থগিত করে দিয়ে দামের বার্তাকেও মেরে দেওয়া হচ্ছিল । ফলে বিষয়টা খানিকটা অন্ধকারে তির ছোঁড়ার মতো হয়ে যাচ্ছিল । অনেক সময় তারা নিজেরাই নিজেদের পায়ে কুড়ুল মারছিল ।
মূল বিষয়টি হল ভারতকে কেবলমাত্র যে কৃষি-বাজারকে একত্রিত করতে হবে (একটি দেশ, একটি বাজার) শুধু তাই নয়, সাময়িকভাবে তাদের সংহতও করতে হবে । তাৎক্ষণিক এবং ভবিষ্যতের বাজারগুলিকে একত্রিত করতে হবে । তবেই ভারতীয় কৃষকরা তাঁদের উৎপাদনের সর্বোত্তম মূল্য উপলব্ধি করতে পারবেন এবং বাজারের ঝুঁকিগুলি এড়িয়ে চলতে পারবেন ।
এখন এটি উপলব্ধ করা গেছে যে প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র কৃষকরা যে পণ্য ও আর্থিক বাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্যাগুলির মুখোমুখি হন, তা কৃষকদের গোষ্ঠী গঠন করে এবং তারপরে এই গোষ্ঠীগুলিকে একটি সুসংহত সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে একত্রিত করে ও সমস্ত কুশীলবদের এক জায়গায় এনে তা কমানো যেতে পারে । এখনও অবধি, বিভিন্ন সংস্থা দ্বারা দেশের 7 হাজার ফারমার প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন (FPO)-কে তুলে ধরেছে ।