পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

কোরোনা আতঙ্ক গ্রাস করছে কৃষিক্ষেত্রকে - কোরোনা ভাইরাসের চিকিৎসা

বিপদের মুখে মাস্ক, সাবান, জীবাণুনাশকের মতো সামগ্রী নিয়ে কালোবাজারি শুরু হয়ে গেছে । কোরোনা ভাইরাসের প্রকোপে পৃথিবী যে অচলাবস্থার দিকে এগোচ্ছে, তাতে জিনিসপত্র মজুত করে রাখতে শুরু করেছে মানুষ । মানুষের মরিয়া মনোভাব এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, কালোবাজারিরা অত্যাবশ্যক ওষুধ, খাবার ইত্যাদি মজুত করতে শুরু করবে । কৃষিক্ষেত্র এবং বীজকেও গ্রাস করবে এই কোরোনা সঙ্কট ।

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী

By

Published : Mar 19, 2020, 7:52 PM IST

মারণ ভাইরাস সার্স-COV-2 আজ মানবজাতিকে অবরুদ্ধ করেছে । ভাইরাসের থেকেও বেশি, তার থেকে ছড়ানো COVID-19 অসুখ বিশ্বের সব জায়গায় কুখ্যাত হয়েছে । যখন অর্থনীতি ক্রমশ নিম্নগামী, তখন রাস্তাঘাট ও সংবাদমাধ্যমে ছড়াচ্ছে আতঙ্ক ও উন্মাদনা । কোরোনা ভাইরাসের সময় হাঁচি ও কাশি একটা নিন্দনীয় কাজে পরিণত হয়েছে । অন্যান্য দেশ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো ভারত সরকারও এই বিশ্ব মহামারিকে নিয়ন্ত্রণের প্রাণপণ চেষ্টা করছে । কিন্তু, বিপদ আমাদের ঘিরে ধরছে । চিনের মতো বিরাট একটা শক্তি এই রোগের শিকার হয়েছে, ইরানকে ছারখার করছে এই অসুখ । আর বেশি দেরি নেই, যখন COVID-19 তার সর্বশক্তি নিয়ে ভারত ও SAARC দেশগুলোকে আঘাত করবে ।

বিপদের মুখে মাস্ক, সাবান, জীবাণুনাশকের মতো সামগ্রী নিয়ে কালোবাজারি শুরু হয়ে গেছে । কোরোনা ভাইরাসের প্রকোপে পৃথিবী যে অচলাবস্থার দিকে এগোচ্ছে, তাতে জিনিসপত্র মজুত করে রাখতে শুরু করেছে মানুষ । ভারত তথা বিশ্বের বুকে জাঁকিয়ে বসেছে COVID-19-র ভয় । কোরোনা ভাইরাসের থেকেও এই ভয়টাই পৃথিবীর সামনে বড় বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে । মানুষের মরিয়া মনোভাব এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, কালোবাজারিরা অত্যাবশ্যক ওষুধ, খাবার ইত্যাদি মজুত করতে শুরু করবে । কৃষিক্ষেত্র এবং বীজকেও গ্রাস করবে এই কোরোনা সঙ্কট ।

কৃষি আমাদের জীবনধারণের মেরুদণ্ড এবং আমাদের কৃষিক্ষেত্র নির্ভর করে উচ্চমানের বীজ এবং বিশ্বজুড়ে সংগঠিত বীজক্ষেত্রের উপর । আমাদের খাদ্য উৎপাদন নির্ভর করে মানবসম্পদ বা কৃষি শ্রমিকের লভ্যতা এবং বীজ, সারের মতো কৃষি সম্পর্কিত পণ্যের অবাধ যাতায়াতের উপর । বর্তমান পরিস্থিতিতে দু'টোই সীমিত । প্রথমে অ্যামেরিকা এবং তারপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে আর এখন বিশ্বজুড়ে ভিসা বাতিল এবং মানুষের যাতায়াতে রাশ টানা হচ্ছে । এমন কী, দেশের মধ্যেও মানুষ বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছেন এবং বিশেষ করে ভিড় এলাকাগুলো এড়িয়ে চলছেন । ভিয়েতনাম থেকে ইট্যালি, স্কুলগুলো বন্ধ আর রাস্তাঘাট শুনশান । বর্তমান পরিস্থিতিতে কৃষিতে কাজ করা মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে । এই মরশুমে কৃষি-মজুরি বৃদ্ধি পাবে এবং খাদ্য উৎপাদনে খরচ বেড়েও যেতে পারে । পোলট্রির ক্ষেত্রেও বিপদ রয়েছে । দিল্লিতে চিকেনের দাম মুখ থুবড়ে পড়েছে । আতঙ্ক ক্রমশ বাড়ার ফলে কর্মীরা পোলট্রি ফার্মগুলোতে কাজ করতে আরও অনাগ্রহী হবেন ।

বিশ্বের বীজ ক্ষেত্র উৎপাদক অঞ্চলগুলোর সরবরাহ ব্যবস্থার উপর গভীরভাবে নির্ভরশীল । বীজের ক্ষেত্রে কোনও দেশই সম্পূর্ণভাবে স্বনির্ভর নয় । বন্দরগুলো এবং বীজ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া চলতি বছরের পরের দিকে কৃষি উৎপাদনে ধাক্কা দেবে । বিশ্বজুড়ে নিরক্ষরেখার উত্তর অংশে বসন্তের শস্য এবং দক্ষিণ অংশে শরতের শস্য, যেমন- ভুট্টা, সোয়াবিন, সূর্যমুখী, ক্যানোলা, স্প্রিং হুইট, বার্লি রোপনের জন্য মার্চ ও এপ্রিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময় । ভারতেও জায়েদ মরশুমের শস্য রোপনের সময় আসন্ন । বীজ সরবরাহে বিলম্ব বা বীজ না আসার কারণে যদি কৃষকদের এই সময়টা হাতছাড়া হয় বা দেরি হয়, তাহলে এই বছরের পরের দিকে আমরা গুরুতর খাদ্যাভাব বা খাদ্য মুদ্রাস্ফীতির মুখোমুখি হতে পারি । যদিও ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি অথরিটি, সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল এবং BFR-কে উদ্ধৃত করে, ইন্টারন্যাশনাল সিড ফেডারেশনের সাম্প্রতিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "বীজ-সহ খাদ্যের মধ্যে দিয়ে যে ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে, তেমন কোনও প্রমাণ নেই । সদ্য সংক্রমিত হয়েছে এমন জিনিস থেকে রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে । যদিও, এটা সংক্রমণের সামান্য পরেই হতে পারে, কারণ পরিবেশে কোরোনা ভাইরাসের স্থায়িত্ব কম ।" অর্থাৎ বীজ থেকে সংক্রমণ ছড়াবার কোনও প্রমাণ নেই, এবং আমাদের দুশ্চিন্তারও কারণ নেই ।

ভয় শুধু নিজেকেই ভয় পায়

এটা কঠিন সময়, যখন প্রয়োজন সাহস ও সত্যের । আমাদের বিজ্ঞানভিত্তিক এবং তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যাতে COVID-19 এমন একটা দানবে পরিণত হতে না পারে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি আমাদের কৃষিকেও বিপদে ফেলবে । বীজ-সহ কৃষিপণ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো উচিত নয় ভারত এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের সরকারের । বীজের প্রস্তুতকারক সংস্থা এবং রপ্তানকারীদের উচিত, বীজ পাঠানোর কাজে নিযুক্ত কর্মীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়া । আগামী কয়েক মাস পণ্য ও মানুষকে স্ক্রিনিং করার বিপুল দায়িত্ব রয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষগুলির, এবং তাদের একাজে সাহায্যও করা উচিত । এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়, তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিকতম নির্দেশগুলি প্রচার করতে হবে এবং কর্মী ও সাধারণ মানুষকে সে নিয়ে সচেতনও করতে হবে । যেহেতু বীজের শিপমেন্ট থেকে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি খুবই কম, তাই তাদের থামানো বা বিলম্ব করানো উচিত হবে না । এই সঙ্কটের সময় পৃথিবীকে একজোট হতে হবে, এবং শুধু কোরোনা ভাইরাস নয়, লড়তে হবে ভয়ের বিরুদ্ধেও ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details