দিল্লি, 31 মার্চ : কোরোনা ভাইরাসের জেরে যে অর্থনৈতিক সংকটের দেখা দিয়েছে, তা মোকাবিলায় আর্থিক সহায়তার প্রস্তাবে গুরুত্ব দিচ্ছে ইউরোপের 27 টি দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোট-ইউরোপীয় ইউনিয়ন । COVID-19-এ সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে সব থেকে বেশি মৃত্যু হয়েছিল চিনে ৷ এবার সেই চিনকে মৃতের সংখ্যার দিক থেকে ছাপিয়েগেছে ইট্যালি ৷ ইট্যালি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বলেছে, যাতে তারা বিশেষ তহবিল ব্যবহার করে, এই কোরোনার জেরে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলা করে ।
দিল্লিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূত উগো অ্যাস্তুতো মনে করেন, এই মুহূর্তে প্রয়োজন কঠোর পদক্ষেপ এবং বিজ্ঞানভিত্তিক লকডাউন । সাংবাদিক স্মিতা শর্মার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূত জানিয়েছেন, COVID-19 এর ভ্যাকসিন দ্রুত খুঁজে পাওয়াটা জরুরি ৷ এই মুহূর্তে একসঙ্গে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে প্রয়োজন সঠিক তথ্য ও স্বচ্ছ্বতার । যাঁরা নিজের নিজের দেশে ফিরতে পারেনি, তাঁদের ভিসার মেয়াদ বাড়াতে ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলি নমনীয়ভাবে কাজ করছে বলেও আশ্বাস দেন তিনি । কোরোনার প্রেক্ষিতে কয়েকজনের উপর বর্ণবিদ্বেষী হামলা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মানুষকে এই মুহূর্তে সহমর্মিতা বজায় রাখতেই হবে । উগো অ্যাস্তুতো জানান করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হল খোলামেলা এবং সঠিক তথ্য ৷
প্রশ্ন - ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই মুহূর্তে কতটা ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়ে?
COVID-19 ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বে, এর মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক স্তরে একজোট হয়ে লড়ার দরকার । জনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে এবং আরও মৃত্যু এড়াতে, আমাদের দৃঢ়বদ্ধ হয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে । ইউরোপে আমরা বেশ কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছি । সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া, লকডাউন সবই বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণ ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে করেছি । আমরা সমস্ত সদস্য দেশের মধ্যে COVID 19-এর সহযোগিতা বাড়িয়েছি, এবং শুরু করেছি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলি দিয়ে । এই সংকটের জেরে অর্থনীতিতে যে সম্ভাব্য প্রভাব পড়বে, তার কথাও ভেবেছি আমরা । সমাজের উপর এই ভাইরাসের প্রভাব কমাতে এবং এর বিরুদ্ধে লড়তে আমরা পুরোদমে তৈরি । আমরা এই লড়াইে জিততে পারি । ইউরোপীয় ইউনিয়নে বিজ্ঞানীরাও সেই চেষ্টা করছেন । সরকারি ও বেসরকারিভাবে আমরা ভ্যাকসিন তৈরি রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য 140 মিলিয়ন ইউরো দিয়েছি । যত দ্রুত সম্ভব এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন খুঁজে পাওয়া জরুরি । আমরা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ্বতা বজায় রেখে চলছি । ইউরোপিয়ান কমিশন-সহ বহু ওয়েবসাইটে সমস্ত সংখ্যা এবং সাম্প্রতিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে । আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যে খোলামেলা ও সঠিক তথ্য এই সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে । স্থানীয় ও জাতীয় স্তর পেরিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে আমাদের কাজ করতে হবে, কারণ ভাইরাস কোনও সীমানা মানে না । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থ্যাগুলির সঙ্গে আমাদের যৌথভাবে কাজ করতে হবে ।
প্রশ্ন : এই সময় সীমান্ত দিয়ে যে বাধাহীন যাতায়াত হয়েছে, তাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কতটা ঝুঁকির মুখে? আগেই যে COVID-19 আক্রান্ত রোগীরা ঢুকেছেন, তাঁদের কি খুঁজে বার করে সনাক্ত করা সম্ভব?
উত্তর : আমরা এটা খতিয়ে দেখছি । লকডাউন আরও প্রভাবশালী হচ্ছে । আমরা সবাই কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি । জনস্বাস্থ্যে এই আতঙ্ক কাটাতে আমরা সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তৈরি । আমরা এরমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ বিশদে মেনে চলছি । স্বাস্থ্য সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে । আমরা যথেষ্ট কঠিন সিদ্ধান্তগুলি নিচ্ছি, যা এইসময় প্রয়োজন । একই সঙ্গে আমাদের সার্বিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিও বজায় রাখা হচ্ছে । জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকির মোকাবিলাই এখন অগ্রাধিকার ।
প্রশ্ন : ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ভারতের তালিকায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্ত হওয়ার ফলে, বহু ভারতীয় পড়ুয়া বিভিন্ন শহরে অথবা কোনও থাকার জায়গা ছাড়াই আটকে পড়েছেন । ভারতে থাকা ই-ইউ নাগরিক বা ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের ভিসার মেয়াদ কি বাড়ানো হচ্ছে?
উত্তর : হ্যাঁ, আমরা সেটা করছি । প্রত্যেক সদস্য দেশ এটা করছে । আমরাও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে সাহায্যের চেষ্টা করছি । আমরা সবাই ঝুঝি, যে আমরা একসঙ্গে এই পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি, এবং সময়ের চাহিদা মেনে আমাদের যথেষ্ট নমনীয় হতে হবে । ভারতে থাকা ইউরোপীয়রা হোন, বা ইউরোপে থাকা ভারতীয়রা আমরা স্পষ্ট ধারণা নিয়ে এব্যাপারে কাজ করছি ।
প্রশ্ন : আপনি কী মনে করেন, যে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়াই মহামারীর সঙ্গে লড়াইয়ের সবথেকে ভালো পদ্ধতি? সামাজিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কি কোনও সমাধান সূত্র দিতে পারে?
উত্তর : আমি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ নই । কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন সব থেকে ভালো বিজ্ঞানভিত্তিক দক্ষতার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমরা যাই করি না কেন, সেটা বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণের ওপর ভিত্তি করেই করার চেষ্টা করছি ।
প্রশ্ন : কোরোনার জেরে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে সরকারগুলিকে কী ধরণের প্যাকেজ দিতে হবে?