পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

হিরোশিমায় বিস্ফোরণের 75 বছর, আজও ঘণীভূত সংকটের মেঘ - Nagasaki Day

75 বছর আগে হিরোশিমা ও নাগাসাকি এক ভয়ঙ্কর ঘটনার সাক্ষী হয়েছিল । পারমাণবিক বিস্ফোরণে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছিল বিস্তীর্ণ প্রান্তর । বর্তমানেও পৃথিবী এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । হিরোশিমা দিবসে সেই পরিপ্রেক্ষিত উঠে এসেছে সি উদয় ভাস্করের কলমে ।

হিরোশিমা
হিরোশিমা

By

Published : Aug 5, 2020, 8:52 PM IST

Updated : Aug 6, 2020, 2:26 PM IST

6 অগাস্ট । হিরোশিমার ভয়ঙ্কর ইতিহাসের 75 বছর । স্বস্তির বিষয়, 1945 সালের পর এখনও আর সেই ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী হয়ে ওঠেনি পৃথিবী । 75 বছর আগে সেদিন জাপানের প্রায় 1 লাখ 20 হাজার নিষ্পাপ প্রাণ শেষ হয়ে গেছিল । বহু প্রিয়জন চোখের সামনে হারিয়ে গেছিল । ঘর-বাড়ি সব ধ্বংস হয়ে গেছিল । যাঁরা বেঁচেছিলেন, তাঁদের কাছে সেই মাশরুম ক্লাউড (পারমাণবিক বিস্ফোরণের পর আগুন ও ধোঁয়ার যে মাশরুম আকৃতির ঘন কালো মেঘ তৈরি হয়) আর তেজস্ক্রিয় মৃত্যপুরী যেন এক নির্মম সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল । যে সত্য বারবার বলছিল এর থেকে বোধহয় মৃত্যু শ্রেয় ছিল ।

সমগ্র বিশ্বের পারমাণবিক পরিস্থিতির যে রূপরেখা, তার পরিপ্রেক্ষিতে এইমুহূর্তে এটা ভাবা খুব কঠিন যে, এরকমই নিরবিচ্ছিন্নভাবে হিরোশিমার 80 তম বর্ষেও পৌঁছাতে পারবে পৃথিবী । সেই সূত্র ধরেই 3 অগাস্ট রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি রিপোর্টও জমা পড়েছে । নিঃসন্দেহে এই প্রতিবেদনের সত্যতা UNSC দ্বারা পরীক্ষা করা হবে । তবে তার আগের ফিরে দেখতে হবে ইতিহাসে । 1970 সাল । পারমাণবিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অ্যামেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল । এই চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল গ্লোবাল নিউক্লিয়ার ক্লাবগুলিকে সীমাবদ্ধ রাখা । এই NPT বা নিউক্লিয়ার নন-প্রোলিফারেশন ট্রেটির মধ্যে দিয়ে মূলত পরাজিত অক্ষ শক্তিগুলিকে (জার্মানি, জাপান এবং ইতালি) পারমাণবিক ক্ষমতা অর্জন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল । এই চুক্তিতে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল, তা হল প্রধান পাঁচটি দেশের সুরক্ষার স্বার্থেই পারমাণবিক শক্তিকে কুক্ষিগত করা হয়েছিল । কথা হয়েছিল, যে দেশগুলির পারমাণবিক শক্তির প্রয়োজন রয়েছে, তাদের সেই শক্তি সরবারাহ করবে ওই পাঁচ প্রতিনিধি দেশ । এরপর কেটে যায় বেশ কয়েক বছর । কিন্তু ছবিটা বদলায়নি । 1991 সালের ডিসেম্বরে রাশিয়া ভেঙে যায় । ঠান্ডাযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বের উত্থানের পরও পারমাণবিক অস্ত্রশক্তি পাঁচটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল । এগুলি হল অ্যামেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও চিন । 1974 সালে একটি পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিল ভারত । কিন্তু বিশ্বের প্রথম পাঁচ দেশের মধ্যে জায়গা পায়নি ।

স্পষ্টতই এটি একটি অপরিকল্পিত পরিকাঠামো ছিল । ঠান্ডাযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ভারত, পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়া ধীরে ধীরে নানা পারমাণবিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেদের পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত করার পথে নেমেছিল । যা এখনও জারি । যদিও এদিক থেকে ইজ়রায়েল এখনও একটি অস্বচ্ছ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে । ইরাক, ইরান, লিবিয়া অবশ্য পারমাণবিক পরীক্ষার পথে নামার ক্ষেত্রে অন্যভাবে বাধা পেয়েছিল । সংক্ষেপে বলতে গেলে এই গ্লোবাল নিউক্লিয়ার ক্লাব যেন একটা একতরফা সার্বভৌমত্ব রক্ষার দাবিতে নিজেদের শক্তিকে প্রসারিত করেছিল । পারমাণবিক শক্তির বিষয়টি যেন এক দুর্ভেদ্য সুরক্ষার সমার্থক হয়ে উঠেছিল ।

এখন পরমাণু অস্ত্রের মূল লক্ষ্যই যেন অন্যের অগ্রগতিকে প্রতিরোধ করা । গত দু'দশকে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ আপাতত সেকথাই বলছে । 2001 সালের 9 নভেম্বর ও 2008 সালের মুম্বই হামলাও সেদিকেই ইঙ্গিত করে । নিউক্লিয়ার উইপন এনেবেলড টেরোরিজম (NWET) বর্তমানে বিশ্বের কাছে এক জটিল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে । পাশাপাশি প্রযুক্তিগত অগ্রগতি আমাদের এমন পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে, যা সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । 75 বছরে সেই মাসরুম ক্লাউড আর দেখা যায়নি । বলা হয়, পৃথিবীর বৃহত্তম শক্তিগুলির মধ্যে একটি বিশ্বাস রয়েছে । পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারের ক্ষেত্রেও তারা একটি নির্দিষ্ট নীতি ও নির্দেশিকাকে অনুসরণ করে । দুঃখের বিষয়, 2020 সালে এই তত্ত্ব আর খাটে না । এক্ষেত্রে অ্যামেরিকা-রাশিয়া ও অ্যামেরিকা ও চিনের বর্তমান সম্পর্কের রূপরেখা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ।

দুঃখজনকভাবে, এখন অনেক শক্তিই বিশ্বাস করে, কৌশলগতভাবে পারমাণবিক অস্ত্র একটি বড় বিকল্প । সেই পরিপ্রেক্ষিতেই বলা যায়, উত্তর কোরিয়া নিরাপত্তাহীনতা বোঝাতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার কথা বলে । তবে উত্তর কোরিয়া একা নয় কোথাও যেন ধীরে ধীরে অন্ধকার জমছে । পৃথিবী যেন 6 অগাস্টের এক অনিশ্চিৎ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ।

Last Updated : Aug 6, 2020, 2:26 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details