কলকাতা, 10 মার্চ: পরিসর আগেই কমেছিল, কমেছিল ক্ষমতায় থাকা রাজ্যের সংখ্যাও ৷ কোণঠাসা হতে হতে এবার জাতীয় রাজনীতিতে (position of Congress in national politics is weaken ) আরও বেসামাল হয়ে পড়ল দেশের শতাব্দী প্রাচীন দল কংগ্রেস ৷ বৃহস্পতিবার পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলাফল ও সেখানে কংগ্রেসের শোচনীয় পরিনাম তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের ৷
উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, গোয়া, উত্তরাখণ্ড ও মণিপুর এই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশ (Assembly Election Results 2022) হচ্ছে বৃহস্পতিবার ৷ ট্রেন্ড বলছে, 2024 লোকসভা ভোটের আগে ভাল ফল তো দুরস্ত, বরং মান যাও ছিল তাও খোয়াতে বসেছে কংগ্রেস ৷ উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের ভাগ্যে এবারও যে শিঁকে ছিড়বে না সেটা দলের নেতারাও জানতেন ৷ বাস্তবে হয়েছেও তাই ৷ গত বার দেশের এই সব থেকে বড় রাজ্যের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস পেয়েছিল 7টি আসন ৷ যা ইঙ্গিত মিলছে তাতে এবার তার থেকেও খারাপ ফল এখানে হতে চলেছে তাদের ৷ রাজনৈতিক মহলের মতে, এককালে যে উত্তরপ্রদেশে গান্ধি পরিবারের নামে ভোট ঝুলিতে ভরত হাত শিবির, সেখানে বর্তমানে 'হাত-'এর ভিত যে সম্পূর্ণ ধুয়ে গিয়েছে তার প্রমাণ এই ফল ৷ রাহুলের পর প্রিয়াঙ্কা গান্ধিকে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব দিয়েও উত্তরপ্রদেশের মানুষের মনে কংগ্রেস যে জায়গা করতে পারেনি তার প্রমাণ মিলল ৷
আরও পড়ুন : উত্তরাখণ্ডেও ফেল কংগ্রেস, সরকার গঠনের পথে বিজেপি
পঞ্জাবে, কংগ্রেস সিংহাসন থেকে পড়ে প্রায় ধুলোয় মিশেছে বলা যায় ৷ সেখানে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ ঘুর্ণিঝড়ের মুখে পড়ে ভূপতিত হয়েছে 'হাত' ৷ নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা তো বটেই, 117টি আসনের মধ্যে 90টির কাছাকাছি আসন পেতে চলেছে আপ ৷ ল্যান্ডস্লাইড ভিক্টরি বলা যায় ৷ প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া তো ছিলই, এছাড়াও এখানে সোনিয়া গান্ধির দলের বিপক্ষে গিয়েছে দলীয় কোন্দল ও অন্তর্দ্বন্দ্ব ৷ মুখ্যমন্ত্রীত্ব ও সংগঠন নিয়ে নভজ্যোৎ সিং সিধুর সঙ্গে প্রথমে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংয়ের বিরোধ, তারপর অমরেন্দ্র সিংয়ের দলত্যাগ অনেক আগেই পঞ্জাবে কংগ্রেসকে দুর্বল করে দিয়েছিল ৷ রাহুল গান্ধি পরবর্তী সময়ে চরণজিৎ সিং চান্নিকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বেছে নিলেও সেই ক্ষত আর মেরামত করা সম্ভব হয়নি কংগ্রেসের সঙ্গে ৷ ভোটের আগে সিধুর সঙ্গে চান্নির বিরোধও প্রকাশ্যে এসেছিল ৷ ছিল সরকার, প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থতা, মাদক চক্রের রমরমার মতো একাধিক অভিযোগ ৷ দিন যত গিয়েছে কংগ্রেসের এই ফাটল তত গভীর সুরঙ্গে পরিণত হয়েছে ৷ যেখান থেকে দলকে আর টেনে তুলতে পারেননি হাইকমান্ড ৷ কৃষক আন্দোলনের অন্যতম গড় পঞ্জাব বিজেপিকে ক্ষমতায় আনবে না এটা জানাই ছিল ৷ কংগ্রেস ছাড়া সেক্ষেত্রে অন্য দুই বিকল্প ছিল আপ আর অকালি দল ৷ অকালি দলও এই রাজ্যে অতীতে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল ৷ কিন্তু দেখা গেল, এদের সবাইকে ফেলে পঞ্জাববাসী এবার আস্থা রেখেছে কেজরিওয়ালের আপে ৷ যে হারে দু'হাত ভরে এই রাজ্যের মানুষ অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দলকে ভোট দিয়েছে তাতে মনে করা হচ্ছে, শুধু কংগ্রেসকে সরাতেই নয়, আপকে ক্ষমতায় আনতেও এবার প্রত্যয়ী ছিলেন এখানকার ভোটাররা ৷ ফলে কৃষক আন্দোলনের ফসলও নিজেদের ঘরে তুলতে পারেনি কংগ্রেস ৷
আরও পড়ুন : গোয়ায় ফল প্রকাশের আগেই রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠকের আর্জি কংগ্রেসের
মনে করা হয়েছিল এবার গোয়া ও উত্তরাখণ্ডে ভাল ফল করতে পারে কংগ্রেস ৷ লড়াই কঠিন হলেও বিজেপিকে সরিয়ে এই দুই রাজ্যে ক্ষমতার দখল নিতে পারে কংগ্রেস এমনটাই মনে করা হয়েছিল ৷ গোয়ায় একা নিজেদের বিজয় রথ ছোটাতে তৃণমূলের দেওয়া সমঝোতার প্রস্তাবও নাকচ করে দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধি ৷ এক্সিট পোলেও এই দুই রাজ্যে বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত মিলেছিল ৷ কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, গত বারের থেকে কম হলেও কংগ্রেসের সঙ্গে ভাল ব্যবধান রেখেই এবার ফের উত্তরাখণ্ডের মসনদ দখল করছে বিজেপি ৷ গোয়া ত্রিশঙ্কু হলেও এগিয়ে রয়েছে বিজেপিই ৷
মণিপুরেও কংগ্রেসের থেকে ভাল করছে বিজেপি ৷ ত্রিশঙ্কু হলেও এখানে সরকার গড়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে পদ্ম শিবিরই ৷ রাজনৈতিক মহলের মতে, এই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে কংগ্রেসের পক্ষে কার্যত শূন্যই হল ৷ এবং তাঁদের এই শূন্যস্থান পূরণে এগোচ্ছে আঞ্চলিক দলগুলি ৷ পঞ্জাবে আপের ফলই তার প্রমাণ ৷ এবারের এই নির্বাচনের ফল জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি বিরোধী মঞ্চে কংগ্রেসকে আরও একঘরে করে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে ৷