নয়াদিল্লি, 8 নভেম্বর: সীমান্তে চিনা আগ্রাসন নিয়ে ক্রমশ ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছে কেন্দ্র । সেই অবস্থায় এবার সংসদে খোলাখুলি চিন নিয়ে আলোচনার দাবি তুললেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল আল মুসলমিন প্রধান তথা লোকসভার সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসি । তাঁর দাবি, ক্ষমতায় আসার আগে সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে বড় বড় কথা বললেও, এখন চিন নিয়ে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করছেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । এনিয়ে সংসদে খোলাখুলি আলোচনা হওয়া উচিত ।
বিরোধীরা লাগাতার অভিযোগ তুলে এলেও, বরাবর চিনা আগ্রাসনে দেশের জমি হাতছাড়া হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে কেন্দ্র । কিন্তু সম্প্রতি আমেরিকার প্রতিরক্ষা দফতরের রিপোর্টে বলা হয়, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে (এলএসি) অরুণাচল প্রদেশে ঢুকে আস্ত গ্রাম গড়ে তুলেছে চিন । তাতেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নতুন করে সরব হয়েছেন বিরোধী শিবিরের নেতা-নেত্রীরা । দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে বলেও দাবি উঠতে শুরু করেছে ।
আরও পড়ুন:Lakhimpur Kheri Case : অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির তদারকিতে লখিমপুর-তদন্ত, জানাল সুপ্রিম কোর্ট
তাতেই এবার নয়া সংযোজন ওয়েইসি । রবিবার একের পর এক টুইটে সরসাররি মোদিকে আক্রমণ করেন ওয়েইসি । তিনি লেখেন, ‘‘2014-র আগে মোদি বলতেন, সীমান্তে কোনও সমস্যা নেই, সমস্যা আসলে দিল্লিতে ৷ তখনকার চেয়ে এখন আজকের দিনেই এই কথা সব থেকে বেশি প্রযোজ্য ৷ মুখ্যমন্ত্রী মোদি জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে বড় বড় কথা বলতেন ৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদি চিনের নাম পর্যন্ত মুখে আনেন না ৷ কী হল ? এত ইতস্তত কিসের ?’’
আসল সমস্যার দিকে না তাকিয়ে, বিভাজনের রাজনীতি করে সরকার দেশের মেরুদণ্ড ভেঙে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন ওয়েইসি । তাঁর কথায়, ‘‘দুঃখের বিষয় হল, মেরুকরণ এবং বিভাজনের রাজনীতি করে ভিতর থেকে ভারতীয়দের দুর্বল করে দিচ্ছে এই সরকার । আর এই অভ্যন্তরীণ বিভাজনই চিনের শক্তিবৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে । তাই চিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং সীমান্ত সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয় নীতি নিয়ে সংসদে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা আবশ্যক । সব দলের সাংসদদের বিতর্কিত সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে নিয়ে যেতে হবে, যাতে দেশের সার্বভৌমত্ব বজায় রয়েছে কি না জানা যায় এবং মানুষও তা জানতে পারেন ।’’
আরও পড়ুন:Padma Awards 2020 : গুণীজনদের হাতে পদ্ম সম্মান তুলে দিলেন রাষ্ট্রপতি
প্রয়োজনে সংসদে গোপন বৈঠকেও আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন ওয়েইসি । তাঁর কথায়, ‘‘নীরবতা বজায় রাখা, বাস্তবকে অস্বীকার করা এবং বিভ্রান্তি বজায় রাখা, চিন প্রশ্নে যে কৌশল নিয়ছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি, তা আত্মপরাজয়ই । এতে একটাই বার্তা যায় যে, বেজিংয়ের সামনে আমরা দুর্বল । আমাদের সহযোগীদের কাছেও বার্তা যায় যে, সত্যের সম্মুখীন হওয়ার ক্ষমতা নেই আমাদের ।’’
বিগত কয়েক বছর ধরেই ইন্দো-চিন সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে । লাদাখে একাধিক বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে দুই দেশের সেনা । এমনকি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা চিন দখল করে নিয়েছে বলেও অভিযোগ সামনে এসেছে । একই পরিস্থিতি অরুণাচলেও । প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে সেখানে চিন সাড়ে 4 কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে এসেছে এবং শতাধিক বেশি বাড়ি বানিয়ে আস্ত গ্রাম গড়ে তুলেছে বলে আমেরিকার রিপোর্টেই উঠে এসেছে । এতদিন কেন্দ্র চিনের হাতে জমি বেদখল হয়ে যাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে এলেও, আমেরিকার রিপোর্ট তাদের প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে ।