পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

প্লাস্টিকের সমস্যা এড়াতে আমরা যা করছি, তা কি যথেষ্ট ? - সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড

2030 সালের মধ্যে ভারতের শহুরে নাগরিকের সংখ্যা বর্তমানের 38 কোটি থেকে বেড়ে 60 কোটি হবে বলে মনে করা হচ্ছে । ফলে পৌরসভার কঠিন বর্জ্যের স্তূপ আরও বেশি পরিমাণ স্তূপাকৃত হবে । বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে পণ্য ও পরিষেবার যোগানও এখন থেকেই বাড়তে শুরু করেছে ।

plastic menace
প্লাস্টিকের সমস্যা

By

Published : Dec 22, 2020, 3:08 PM IST

প্লাস্টিক বর্তমানে আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হয়েছে । তবে এর ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েই চলেছে । স্থায়িত্ব, সহজলভ্যতা, কম দাম এবং রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধা–এই সব কিছুই হল বাজারে প্লাস্টিকের পণ্যের রমরমার প্রাথমিক কয়েকটি কারণ ।

2030 সালের মধ্যে ভারতের শহুরে নাগরিকের সংখ্যা বর্তমানের 38 কোটি থেকে বেড়ে 60 কোটি হবে বলে মনে করা হচ্ছে । ফলে পৌরসভার কঠিন বর্জ্যের স্তূপ আরও বেশি পরিমাণ স্তূপাকৃত হবে । বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে পণ্য ও পরিষেবার যোগানও এখন থেকেই বাড়তে শুরু করেছে । মানুষের কর্মকাণ্ডের জেরে যেখানে বায়ু, জল এবং মাটির দূষণ হচ্ছে, তখনই এর জন্য দায়ী থাকা প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহারের দিকেও অবধারিতভাবে নজর পড়তে বাধ্য । স্তূপাকৃত প্লাস্টিক বর্জ্য প্রাণী তথা উদ্ভিদ প্রজাতিদের জন্যও বড় বিপদের মুখে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে ।

স্বচ্ছ ভারত দ্বিতীয় পর্বের অঙ্গ হিসাবে কেন্দ্র প্লাস্টিক বর্জ্যের দুর্বিপাক নিয়ন্ত্রণে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে । সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের বার্ষিক রিপোর্ট 2017-18 অনুসারে ভারত প্রতিদিন অন্তত 26 হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন করে । পণ্য প্যাকেটবন্দি করার সামগ্রী দ্রুত প্লাস্টিক বর্জ্যে পরিণত হয় । আর সেগুলিই চারপাশের মাটিকে দূষিত করে, ভৌমজলের স্তরের মধ্যে প্রবেশ করে এবং বাস্তুতন্ত্রগুলিকে ধ্বংস করে । দেশের মোট প্লাস্টিক বর্জ্যের 10 শতাংশেরও কম, পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয় । প্লাস্টিক বোতলগুলি মাটিতে বিয়োজিত হতে 450 বছর কিংবা তারও বেশি সময় নিতে পারে ।

প্রতি বছর, বিশ্বজুড়ে 80 লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য জলাশয়গুলিতে ফেলা হয় । পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই নদী ও সমুদ্রগুলিতে অন্তত 15 কোটি টন প্লাস্টিক জমে গিয়েছে। 2050 সালের মধ্যে সমুদ্রে হয়তো মাছের থেকে প্লাস্টিক বেশি মিলবে । একাধিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, আমাদের দেশে পানীয় জলের মধ্যে বহুল মাত্রায় প্লাস্টিক রয়েছে ।

চাঞ্চল্যকরভাবে, নবজাতক শিশুদের প্লাজ়মা নমুনাতেও প্লাস্টিকের অংশবিশেষ পাওয়া গিয়েছে । এই ধরনের মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের কারণে ক্যানসার, হরমোনাল ইমব্যালান্স এবং হার্টের রোগের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে ।

এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন অ্যাক্ট, 1996-এর 6,8 এবং 25 নম্বর ধারায় প্রাপ্ত আইনি ক্ষমতাবলে ভারত সরকারের তরফে ‘এনভায়রনমেন্ট, ফরেস্ট অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ’-এর আওতায় ‘প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট রুলস, 2015’ প্রকাশিত হয়েছিল । বর্জ্য উৎপাদনকারী স্থানীয় কর্তৃপক্ষসমূহ, গ্রাম-কাউন্সিল, প্রোডিউসার, রপ্তানিকারী এবং ব্র‌্যান্ড-মালিকদের ক্ষেত্রে এর নিয়মাবলী প্রযোজ্য হয় । সংশোধিত বিধি অনুসারে, পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি পণ্য কখনওই কোনও কিছু সংরক্ষণ করতে, বহন করতে বা প্যাকেটবন্দি করতে ব্যবহার করা উচিত নয় । অব্যবহৃত বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি ক্যারিব্যাগগুলির ঘনত্ব কখনওই 50 মাইক্রনের কম হওয়া ঠিক নয় ।

আরও পড়ুন , কোভিড আর খাদ্য প্রতারণা – দ্বিগুন ধাক্কা

কেন্দ্রীয় সরকার 2022 সালের মধ্যে এককব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের প্রয়োগ দফায় দফায় নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশ জারি করেছে । অধিকাংশ রাজ্য ইতিমধ্যেই ‘ডিসপোজ়েবল’ তথা একবার ব্যবহারের পরই ফেলে দেওয়া যায়, এমন প্লাস্টিকের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে । প্লাস্টিকের ব্যাগ, কাপ, প্লেট, ছোটো বোতল এবং স্ট্র আর তৈরিও করা যাবে না এবং ব্যবহারও করা যাবে না । খাদি অ্যান্ড ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রিজ় কমিশন প্লাস্টিকের গ্লাসের জায়গায় বাঁশ এবং মাটির পাত্র তৈরি করছে। এই ধরনের পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার গ্রামীণ কর্মসংস্থানেরও পথ সুগম করছে ।

অ্যাসোচেম—ইওয়াই যৌথ সমীক্ষা অনুসারে, ভারতের প্যাকেজিং শিল্পই 2019-20 সালে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক ব্যবহার করেছে । রাষ্ট্রসংঘের পরিবেশ কর্মসূচিতে (এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্র‌্যাম) প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে 60টি দেশের অনুসৃত 10টি নির্দেশিকা চিহ্নিত করা হয়েছে । ভারত সরকারের উচিত শহুরে এবং গ্রামীণ বর্জ্য সংগ্রহ, পরিবহণ এবং নিষ্কাশনে সক্রিয় কর্মসূচি গ্রহণ করা । সমস্ত বড় ও ছোটো শহরগুলিতে প্লাস্টিক সংগ্রহ কেন্দ্র গড়ে তোলা উচিত । প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে নতুন পণ্য তৈরির গবেষণাকেও উৎসাহ দেওয়া উচিত এবং এর জন্য আর্থিক অনুদানও দেওয়া উচিত। পরিবেশগত সংরক্ষণ, প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার এবং সেই সংক্রান্ত শিল্পসমূহও কর্মসংস্থানের প্রভূত সুযোগ তৈরি করতে পারে । যদিও ভারতের প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্তি বিধি কয়েক বছর ধরেই লাগু আছে তবুও তাদের বাস্তবায়নে সেই উদ্যম নেই । রাজনৈতিক কর্তাব্যক্তি এবং নেতাদের উচিত প্লাস্টিকের এই বিপদ মোকাবিলায় পরিকল্পনা করে এগোতে । পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং কর্মসূচিগুলিতে জনগণের যোগদানের গুরুত্বও এক্ষেত্রে অপরিসীম ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details