কলকাতা, 27 অক্টোবর : প্রথমে তানিস্ক, তারপর ফ্যাব ইন্ডিয়া এবং সবশেষে ডাবর । বিজ্ঞাপনী সৃজনশীলতা কোথায় যেন আটকে যাচ্ছে ধর্মের লক্ষ্মণরেখায় । পরিস্থিতি এমন তৈরি করা হচ্ছে, চাপের মুখে বারবার বিজ্ঞাপন বদলাতে হচ্ছে কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে ।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রখ্যাত গয়না বিপণন সংস্থা তানিস্ক-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তারা নাকি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে 'লাভ জিহাদ'-এর প্রচার চালাচ্ছে । উক্ত বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে বিরোধিতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, প্রবল চাপের মুখে পড়ে সংস্থা ওই বিজ্ঞাপন সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় । টুইটারে হ্যাশট্যাগ দিয়ে শুরু হয়েছিল #বয়কটতানিস্ক-এর ডাক । তার জেরেই বিজ্ঞাপন সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সংস্থার তরফে ।
শুধু গয়না প্রস্তুতকারী সংস্থা তানিস্কই নয়, হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির তোপের মুখে ‘জশন-ই-রিওয়াজ’ কালেকশনের বিজ্ঞাপন তুলে দিতে বাধ্য হল ফ্যাব ইন্ডিয়াও । বস্ত্র বিপনী এই সংস্থার তরফে দীপাবলির আগে ‘জশন-ই-রিওয়াজ’ কালেকশন চালু করা হয়েছিল । তা নিয়ে বিজেপি নেতা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার একাংশ ক্ষোভ উগড়ে দেয় । তারপর সেই বিজ্ঞাপন নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার একটি অংশ রীতিমতো বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে । ঊর্দু শব্দ ‘জশন-ই-রিওয়াজ’ নিয়ে আপত্তি তোলা হয় । সেই ঊর্দু শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে দীপাবলিকে অপমান করা হয়েছে বলে দাবি তোলেন একাংশ । বাধ্য হয়ে পিছু হটে এই বস্ত্র বিপণন সংস্থা ।
এরপর করবা চৌথ উৎসব আবহে ডাবরের একটি বিজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের সূত্রপাত হয় । এই বিজ্ঞাপন হিন্দু রীতিনীতির বিরোধী বলে অভিযোগ ওঠে ৷ সরগরম হয় নেটদুনিয়া । মূলত সমকামিতার প্রশ্ন উস্কে দেওয়ার অভিযোগে বিদ্ধ হয় ডাবরের এই বিজ্ঞাপন । বিজ্ঞাপনটি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় । ভাইরাল হতেই নানা তির্যক মন্তব্যের সম্মুখীন হতে হয় সংস্থাকে । এরপরই দ্রুত ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামতে হয় তাদের ৷
এর মধ্যে কোনও ঘটনাই সমর্থনযোগ্য নয়, নির্দ্বিধায় সে কথা বলছেন রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞরা । তাঁরা মনে করছেন, ভারতবর্ষের একটা বহুমুখী সংস্কৃতি রয়েছে । বিভেদের মধ্যে ঐক্য আমাদের বাকিদের থেকে আলাদা করে । এরকম একটা ধর্মনিরপেক্ষ দেশে যখন সৃজনশীলতাকে ধর্মীয় লক্ষণ রেখার মধ্যে আটকে দেওয়া হয় তা অবশ্যই সমালোচনার যোগ্য ।