হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে এবং স্কুল অফ সোশাল সায়েন্সের ডিন পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর অধ্যাপক রেড্ডি এখন দিল্লিতে অবস্থিত ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যান ডেভেলপমেন্টে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন । 2005 ও 2016 সালে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার দ্বারা নিযুক্ত ফার্ম কমিশনেরও সদস্যও ছিলেন তিনি । একাধিক গবেষণাপত্রের রচয়িতা অধ্যাপক নরসীমা রেড্ডি নতুন কৃষি আইন নিয়ে তাঁর মতামত ভাগ করে নিলেন ইটিভি ভারতের সঙ্গে ।
কেন্দ্রীয় সরকার যে নতুন আইন এনেছে, তার ফলে কৃষকরা কী ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে পারে ?
নতুন আইন কৃষকদের স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে বড় ধাক্কা । যখন এটা আশা করা হচ্ছিল যে সরকার কোনও পরিবর্তন আনার আগে কৃষকদের স্বার্থরক্ষার জন্য কৃষি বাজার কমিটি তৈরি করবে, তখন সরকার নিয়ে এল অনিয়ন্ত্রিত কৃষি বিপণন ব্যবস্থা । এটা সত্যিই চিন্তার বিষয় । এই আইন কৃষকদের বড় অংশের জন্য ভালো হবে না ।
এখনও পর্যন্ত আমাদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যসহ নিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা ছিল । কৃষিক্ষেত্রে যা উৎপাদিত হচ্ছে, চাহিদা ও সরবরাহ দ্বারা তা নিয়ন্ত্রিত হবে । নতুন আইন এই ব্যবস্থাই কার্যকর করছে । আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হল অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন গুরুত্বহীন হয়ে যাচ্ছে ৷ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন অতিরিক্ত মজুত ঠেকাতে তৈরি করা হয়েছিল । কম দামে প্রচুর পরিমাণ সামগ্রী কিনে আটকে রাখার বিরুদ্ধে এই আইন কৃষক ও গ্রাহককে রক্ষা করত । অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থার স্বার্থে এই আইনকে আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে । নতুন আইনের ফলে সরকারের বিনিয়োগ হারিয়ে যাবে ৷ সমস্ত নিয়ম তুলে নেওয়া হবে । এফসিআই-এর ভূমিকা কমিয়ে দেওয়া হবে । কৃষিক্ষেত্রে যা উৎপাদিত হবে, তা পুরোপুরি চলে যাবে বেসরকারি হাতে । কষিক্ষেত্রে উৎপাদন থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াকরণ, সবটাই বড় ব্যবসায়ীদের নির্দেশে হবে । তারা কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদিত সামগ্রীকে ব্র্যান্ডিং করে বেশি দামে বিক্রি করবে ।
মূল কৃষি পরিকাঠামোগুলিতে বিনিয়োগ কার্যকর হবে । যে সংস্থা বা ব্যক্তি গুদামঘর, হিমঘরের ব্যবস্থা এবং প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটের মালিক হবে, তাদের নির্দেশেই কৃষিক্ষেত্রের দাম নির্ধারণ হবে । এটা খুবই সাধারণ জ্ঞানের বিষয় ।
নতুন আইন অনুযায়ী, বেসরকারি গুদামঘরগুলি সামগ্রী মজুত করে রাখার জন্য অনেক টাকা নিতে পারে । যদি কোনও কৃষক গুদামঘরে নিজের উৎপাদিত ফসল রাখে এবং ভালো দামের জন্য অপেক্ষা করে, তাহলে তিনি ফসল ফলানোর জন্য যে খরচ করেছেন, তার থেকে বেশি কিছু পাবেন না । যদি গুদামঘরগুলি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে সহজলভ্য দামে কৃষকরা সেখানে ফসল মজুত করে রাখতে পারবেন । গুদামঘরে মজুত করে রাখা উৎপাদিত ফসলের জন্য তিনি ঋণও পেতে পারেন । কিন্তু নতুন আইন এই বিষয়টিকে অসম্ভব করে তুলল ।
নতুন আইন অনুযায়ী কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল যে কোনও বাজারে বিক্রি করতে পারেন, যেখানে তাঁরা ভালো দাম পাবেন । তাহলে আপনি কীভাবে এটা বলতে পারেন যে এটা কৃষকদের ক্ষতি করবে ?
দেশের রায়তদের মধ্যে 85 শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষি । যদি বাজার অনেক দূরে হয়, তাহলে কৃষক তাঁর উৎপাদিত ফসল গ্রামের ব্যবসায়ীর কাছেই বিক্রি করে দেবেন । তাঁরা কীভাবে তাঁদের উৎপাদিত সামগ্রী আরও ভালো দাম পাওয়ার আশায় দূরে নিয়ে যাবেন ? সামান্য 10 কুইন্টাল ধান বা 10টি কাপড়ের ব্যাগে ভরতি তাঁর উৎপাদন, তা কি তিনি একটা ট্রাক্টর ভাড়া করে একজন মাঝারি চাষির ক্ষেত্রে দূরের কোনও বাজারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ? বাজারে ভালো দাম না পাওয়া পর্যন্ত এমন একজন কৃষক কি অপেক্ষা করতে পারবেন ? আজকেও তেলাঙ্গানার কৃষকরা এমন অবস্থায় নেই, যে তাঁরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল আরও ভালো দামের আশায় দূরে কোথায় নিয়ে যাবেন । যদি কৃষি বাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে কৃষকদের খুব হতাশাজনক পরিস্থিতির মধ্যে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হবে ।
একটা বড় সমস্যার মধ্যে ফেলে দেওয়া হল অন্নদাতাদের, বললেন বিশিষ্ট কৃষি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ( অবসরপ্রাপ্ত ) ড. নরসীমা রেড্ডি ৷ কেন্দ্রীয় সরকার বলছে যে পঞ্জাব, হরিয়ানার কমিশন এজেন্টরা ছাড়া কোনও কৃষকই এই আইনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না । এই বিষয়ে কী বলবেন ?
এটা সত্যি নয় । এই আইনের খারাপ প্রভাব সারা দেশে অনুভূত হবে । পঞ্জাবের সমস্যা কিছুটা আলাদা । পঞ্জাবের 84 শতাংশ কৃষিক্ষেত্রে ধান ও গম তৈরি হয় । তারা যা উৎপাদন করে, তার 95 শতাংশ পর্যন্ত এমএসপি পেয়ে যায় । পঞ্জাবে ফসলের পরিবর্তন মানে ধানের পর গম চাষ করা । এই ফসল উৎপন্ন করা হয়, কারণ তারা সঠিক ভাবে এমএসপি পেয়ে যায় । তাৎপর্যপূর্ণ হল পঞ্জাব ধান উৎপন্ন করে, কিন্তু তারা কেউ ধান খায় না । পুরো ফসলটাই কৃষকরা বিক্রি করে দেয় । নিজেদের কাছে কিছুই রাখে না । এমনটা কিন্তু অন্য রাজগুলিতে হয় না । কৃষকরা নিজেদের চাহিদার জন্য কিছুটা রেখে তবেই ধান বিক্রি করে । অন্ধ্রপ্রদেশে 40 শতাংশ কৃষি জমিতে ধান চাষ হয় । তেলাঙ্গানায় সুতো প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয় । তার পরও ধান চাষ গত বছর ও এই বছর বৃদ্ধি পেয়েছে ।
সমস্যাটা শুধু ধান ও গম চাষিদের মধ্যে আটকে নেই । উদাহরণ হিসেব আপনাদের অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর জেলার কথা বলি । সেখানে চিনাবাদাম খুব বেশি উৎপন্ন হয় । গত কয়েক দশক ধরে আমরা সেখানে চিনাবাদামের বিকল্প কিছুকে তুলে ধরার কথা শুনে আসছি । ওই জেলার কৃষকরা বিকল্প হিসেবে পেঁপে ও অন্যান্য উদ্যানপালন সংক্রান্ত ফসলের দাবি তুলছে । কিন্তু চাষিরা ওই ফসলের জন্য পর্যাপ্ত দাম পাচ্ছে না । সেখানে মজুত করা ও বিপণনের জন্য কোনও ব্যবস্থা নেই । সুতোর জন্য তেলেঙ্গানায় ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়া হয় । তার পরও সুতো চাষিরা প্রতি বছর সমস্যার মুখে পড়েন । এই ধরনের সমস্যাগুলি সমাধান করার বদলে সরকার নতুন আইন নিয়ে এল । যার মাধ্যমে বাজার অনিয়ন্ত্রিত হয়ে চলে গেল বেসরকারি অংশীদারদের দখলে । এই আইনের প্রভাব সব রাজ্যেই অনুভূত হবে ।
আমাদের বলা হচ্ছে যে এই নতুন আইনের জন্য দুই ধরনের বাজার প্রকাশ্যে আসবে । এটাও বলা হচ্ছে যে নতুন ধরনের নিয়ম থাকবে । এটা কীভাবে সম্ভব ?
হ্যাঁ, সেখানে কৃষি বাজার কমিটি থাকবে । কিন্তু বেসরকারি সংস্থা বা কোনও ব্যক্তি বাজারের বাইরে থেকে সামগ্রী কিনতে পারবেন । এর মানে সেখানে দুই ধরনের বাজার থাকবে । বেসকারি ডিলারদের উপর কীভাবে এমএসপি লাগু করা হবে ? কেন্দ্রীয় সরকার এমন কোনও আইন তৈরি করেনি, যার মাধ্যমে ব্যবসয়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট দামে সামগ্রী কিনতে পারবেন এর বদলে নতুন আইনে মুক্ত বাজার গড়ার পথ প্রশস্ত হয়েছে । বাজারের ভিতরে নিয়ন্ত্রিত বিপণনের ব্যবস্থা থাকছে । কিন্তু বাজারের বাইরে তা অনিয়ন্ত্রিত । প্রতিটি বাজারের জন্য আলাদা আলাদা ফি ও নিয়ম কার্যকর করা হবে । এর ফলে ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রিত বাজার থেকে বেরিয়ে যাবেন এবং অনিয়ন্ত্রিত বাজারে গিয়ে ব্যবসা করবেন । বাজারে কৃষকদের ফসলের দাম নির্ধারণ করার জন্য ব্যবসায়ীরা একে অপরের সঙ্গে গোলমালে জড়াচ্ছে বলে আগেই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল । আইন কার্যকর হয়ে গেলে তারা বাজারের বাইরে গিয়ে একই কাজ করবে । যখন বাজারের মধ্যে এই ধরনের ঘটনা ঘটে, তখন আমরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারি । কিন্তু বাজারের বাইরে আমাদের অভিযোগ শোনার জন্য কেউ থাকবে না ।
বাজারের বাইরে আমাদের দাম, ওজন, আদ্রতার উপাদান, গ্রেডিং ইত্যাদি বিষয় নিয়েও সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে । আদিবাসী এলাকা ও অন্যান্য প্রত্যন্ত এলাকায় এই ধরনের প্রতারণা কৃষকদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই হয়েছে । নতুন আইনের ফলে সমস্ত কৃষককে এই ধরনের সমস্যার মুখে এনে দাঁড় করাবে । এটা বোঝাই যাচ্ছে যে সরকার কৃষি বাজারগুলিকে তুলে না দিলেও নতুন এই আইনের মাধ্যমে এমএসপি তুলে দিতে চাইছে । পঞ্জাব, হরিয়ানা ও পূর্ব উত্তর প্রদেশ ছাড়া অন্য জায়গাগুলিতে কৃষি বাজার কমিটি (এপিএমসি)-গুলি কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের 20 শতাংশ কেনে । এর পরও কৃষকরা ন্যূনতম মূল্য চাইতে পারেন । নতুন আইন যখন চলে আসবে, তখন সরকার এটা বোঝাবে যে এমএসপি রয়েছে । কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত বাজারের জন্য এটা কার্যকর হবে না ।
কেন্দ্রীয় সরকার বলছে যে তারা স্বামীনাথনের রিপোর্ট হুবহু কার্যকর করেছে । কিন্তু পূর্বতন ইউপিএ সরকার ওই রিপোর্ট ফেলে দিয়েছিল ।
এটা পুরোটাই মিথ্যে একটা প্রচার । এখন যেটা হচ্ছে, সেটা হল স্বামীনাথন যা পরামর্শ দিয়েছিলেন তার অসম্পূর্ণ বিরোধিতা । কমিশন স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছিল যে কীভাবে সহায়ক মূল্য নির্ধারণ করতে হবে এবং কৃষকদের জন্য আরও 50 শতাংশ যোগ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল । দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে তারা কমিশনের পরামর্শকে বিকৃত করছে । এই পরিমাণটা কীভাবে কমিশনের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োগ করা হল ? দাম নির্ধারণের সময় কমিশন সমস্ত দিক খতিয়ে দেখেছিল । তার মধ্যে বিনিয়োগের সুদ ও ভাড়ার জমির বিষয়টিও ছিল । স্বামীনাথন কমিশনের পরামর্শ শুধু এমএসপি-র মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না । কমিশন গুদাম ও অন্যান্য পরিষেবা সংক্রান্ত পরিকাঠামো নিয়েও নানা পরামর্শ দিয়েছিল । কমিশন যা প্রস্তাব দিয়েছিল, তার পুরোটাই এখন কেন্দ্রীয় সরকার লঙ্ঘন করছে ।
যখন এই আইন কৃষকদের পক্ষে নয়, তখন রাজ্য সরকারগুলি কি এর থেকে দূরে থাকতে পারে?
রাজ্য সরকারগুলির এতে কোনও ভূমিকা নেই । যদিও কৃষি হল রাজ্যের বিষয় । বীজ সরবরাহ করা থেকে ফসলের প্রক্রিয়াকরণ পর্যন্ত, পুরোটাই রাজ্য সরকারের আওতায় হয় । নিয়মের সুবিধা নিয়ে সেটাকে নিজেদের দিকে টানতে কেন্দ্রীয় সরকার নতুন আইন আনতে চলেছে । আগে কেন্দ্রীয় সরকার একটা খসড়া আইন তৈরি করত । তার পর তা রাজ্যগুলিকে দেওয়া হত, যাতে এমন একটা আইন তৈরির আগে রাজ্যগুলির পরামর্শ পাওয়া যায় । আগের ওই অভ্যাসের একেবারে বিপরীতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এই আইন বলবৎ করছে । রাজ্য সরকারগুলিকে এই আইন মেনে চলতে হবে । বীজ, কীটনাশক, ফসলের জন্য ঋণ, ফসলের প্রক্রিয়াকরণ ও অন্যান্য কিছু-সহ সমস্ত দরকারে কৃষকদের তাকিয়ে থাকতে হয় রাজ্য সরকারের দিকে । কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের ক্ষমতার উপর নিজেদের চাপিয়ে দিচ্ছে । যদি নিয়ন্ত্রিত বাজার না থাকে, তাহলে রাজ্য সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না । কেন্দ্রীয় সরকারের এই আচরণ ঠিক নয় যে এই বিষয়ে রাজ্যের যেন কোনও ভূমিকাই নেই । কেন্দ্র একটা নতুন ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ তৈরি করেছে, যা কৃষি বাজার থেকে অনেক দূরে । সেই কারণেই কিছু রাজ্য দাবি তুলেছে যে যেখানে কৃষিজাত পণ্য বিক্রি হবে, সেই প্রতিটি জায়গাই কৃষি বাজার কমিটির অধীনে আসতে হবে । নতুন আইন তৈরি করার আগে কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেনি । রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গেও কোনও আলোচনা করেনি । আগামীতে সমস্ত কৃষকরাই ভুক্তোভুগী হবেন । রাজ্যগুলিকে এর আঁচ পোয়াতে হবে । নীতিতে সাম্যবাদ আনতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এই আইনের মাধ্যমে বড় ব্যবসায়ীদের এর মধ্যে টেনে আনলেন । এই কারণেই তারা রাজ্যগুলিকে একেবারে বাইরে রেখেছে ।
নতুন কৃষি আইনে কতটা লাভবান হবেন কৃষকরা ? কৃষকদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কী করতে পারে ?
কৃষি ক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে । সরকার বড় কর্পোরেট হাউজ়গুলিকে আগামী 10 বছরে 1 লাখ কোটি টাকা দিচ্ছে পরিকাঠামোর মান উন্নয়ন করার জন্য । তার বদলে এই কাজ সরকারকে নিজের কাঁধেই নিতে হবে । কৃষির সঙ্গে জড়িত ক্ষেত্রগুলিকে উৎসাহ দিতে হবে । ওই ক্ষেত্রগুলির উপর যত মানুষ ভরসা করে থাকেন, তাঁদের সংখ্যা অন্তত 25 শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে হবে । এই দেশে মাথা পিছু জমির পরিমাণ 2.5 একর । কৃষকরা ছোটো জমি থেকে প্রয়োজনীয় রোজগার করতে পারবেন না । কৃষকের পরিবারে মাথা পিছু রোজগার 1.25 লাখ টাকা । পঞ্জাবে এই মাথা পিছু রোজগার 3.4 লাখ টাকা ।
2004-05 আর্থিক বছর ও 2017-18 আর্থিক বছরের মধ্যে 5 কোটি মানুষ চাষের কাজ করা ছেড়ে দিয়েছেন । সম্প্রতি যখন লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন কয়েক লাখ মানুষ হেঁটে নিজেদের গ্রামের বাড়িতে ফিরেছিলেন । তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষই কৃষক । এদের গড় আয় বৃদ্ধি পেয়েছে 1 শতাংশ । আর অন্যান্য ক্ষেত্রের গড় আয় বৃদ্ধি পেয়েছে 15 শতাংশ ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যত মানুষ বসবাস করেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র 2 শতাংশ চাষের কাজের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকেন । ওই দেশে মানুষের যতটা খাবার লাগে, তার থেকেও দেড় গুণ তাঁরা উৎপন্ন করতে পারেন মাত্র 2 শতাংশ চাষের কাজে নির্ভরশীল মানুষদের নিয়ে । জাপানে ছোটো ও প্রান্তিক চাষিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ । জনসংখ্যার 15 শতাংশ চাষের কাজের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকেন ।
কৃষির সঙ্গে জড়িত যে ক্ষেত্রগুলি রয়েছে, সেই গুলির দিকে আমাদের দেশের নজর দেওয়া উচিত । যে কষক 3 একর জমির মালিক, তিনি কী করে নিজের পরিবারের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ও অন্যান্য চাহিদা পূরণ করবেন ? শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা কৃষকদের কাছে সহজলভ্য করে গড়ে তুলতে হবে । নতুন আইন কৃষকদের অবস্থা আরও ভালো করার পরিবর্তে তাঁদের আরও খারাপ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে ।