পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

বড় সমস্যার মধ্যে ফেলে দেওয়া হল অন্নদাতাদের - কৃষক সমস্যা

"কেন্দ্রীয় সরকার যে কৃষি আইন আনতে চলেছে, তা কৃষকদের আরও বড় সংকটে টেনে আনবে । কৃষকদের সংকট থেকে উদ্ধার করার জন্য কৃষিক্ষেত্রে সরকার বিনিয়োগ করবে বলে যখন আশা করা হচ্ছিল, তখন তারা একটা নতুন আইন করল যা কৃষকদের বড় ব্যবসায়িক সংগঠন ও কর্পোরেট সংস্থার দয়ার উপর ছেড়ে দিল ৷" জানালেন বিশিষ্ট কৃষি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ( অবসরপ্রাপ্ত ) ড. নরসীমা রেড্ডি ।

Annadaata thrown into a larger crisis
Annadaata thrown into a larger crisis

By

Published : Dec 23, 2020, 9:01 AM IST

Updated : Dec 23, 2020, 9:34 AM IST

হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে এবং স্কুল অফ সোশাল সায়েন্সের ডিন পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর অধ্যাপক রেড্ডি এখন দিল্লিতে অবস্থিত ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যান ডেভেলপমেন্টে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন । 2005 ও 2016 সালে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার দ্বারা নিযুক্ত ফার্ম কমিশনেরও সদস্যও ছিলেন তিনি । একাধিক গবেষণাপত্রের রচয়িতা অধ্যাপক নরসীমা রেড্ডি নতুন কৃষি আইন নিয়ে তাঁর মতামত ভাগ করে নিলেন ইটিভি ভারতের সঙ্গে ।

কেন্দ্রীয় সরকার যে নতুন আইন এনেছে, তার ফলে কৃষকরা কী ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে পারে ?

নতুন আইন কৃষকদের স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে বড় ধাক্কা । যখন এটা আশা করা হচ্ছিল যে সরকার কোনও পরিবর্তন আনার আগে কৃষকদের স্বার্থরক্ষার জন্য কৃষি বাজার কমিটি তৈরি করবে, তখন সরকার নিয়ে এল অনিয়ন্ত্রিত কৃষি বিপণন ব্যবস্থা । এটা সত্যিই চিন্তার বিষয় । এই আইন কৃষকদের বড় অংশের জন্য ভালো হবে না ।

এখনও পর্যন্ত আমাদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যসহ নিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা ছিল । কৃষিক্ষেত্রে যা উৎপাদিত হচ্ছে, চাহিদা ও সরবরাহ দ্বারা তা নিয়ন্ত্রিত হবে । নতুন আইন এই ব্যবস্থাই কার্যকর করছে । আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হল অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন গুরুত্বহীন হয়ে যাচ্ছে ৷ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন অতিরিক্ত মজুত ঠেকাতে তৈরি করা হয়েছিল । কম দামে প্রচুর পরিমাণ সামগ্রী কিনে আটকে রাখার বিরুদ্ধে এই আইন কৃষক ও গ্রাহককে রক্ষা করত । অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থার স্বার্থে এই আইনকে আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে । নতুন আইনের ফলে সরকারের বিনিয়োগ হারিয়ে যাবে ৷ সমস্ত নিয়ম তুলে নেওয়া হবে । এফসিআই-এর ভূমিকা কমিয়ে দেওয়া হবে । কৃষিক্ষেত্রে যা উৎপাদিত হবে, তা পুরোপুরি চলে যাবে বেসরকারি হাতে । কষিক্ষেত্রে উৎপাদন থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াকরণ, সবটাই বড় ব্যবসায়ীদের নির্দেশে হবে । তারা কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদিত সামগ্রীকে ব্র্যান্ডিং করে বেশি দামে বিক্রি করবে ।

মূল কৃষি পরিকাঠামোগুলিতে বিনিয়োগ কার্যকর হবে । যে সংস্থা বা ব্যক্তি গুদামঘর, হিমঘরের ব্যবস্থা এবং প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটের মালিক হবে, তাদের নির্দেশেই কৃষিক্ষেত্রের দাম নির্ধারণ হবে । এটা খুবই সাধারণ জ্ঞানের বিষয় ।

নতুন আইন অনুযায়ী, বেসরকারি গুদামঘরগুলি সামগ্রী মজুত করে রাখার জন্য অনেক টাকা নিতে পারে । যদি কোনও কৃষক গুদামঘরে নিজের উৎপাদিত ফসল রাখে এবং ভালো দামের জন্য অপেক্ষা করে, তাহলে তিনি ফসল ফলানোর জন্য যে খরচ করেছেন, তার থেকে বেশি কিছু পাবেন না । যদি গুদামঘরগুলি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে সহজলভ্য দামে কৃষকরা সেখানে ফসল মজুত করে রাখতে পারবেন । গুদামঘরে মজুত করে রাখা উৎপাদিত ফসলের জন্য তিনি ঋণও পেতে পারেন । কিন্তু নতুন আইন এই বিষয়টিকে অসম্ভব করে তুলল ।

নতুন আইন অনুযায়ী কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল যে কোনও বাজারে বিক্রি করতে পারেন, যেখানে তাঁরা ভালো দাম পাবেন । তাহলে আপনি কীভাবে এটা বলতে পারেন যে এটা কৃষকদের ক্ষতি করবে ?

দেশের রায়তদের মধ্যে 85 শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষি । যদি বাজার অনেক দূরে হয়, তাহলে কৃষক তাঁর উৎপাদিত ফসল গ্রামের ব্যবসায়ীর কাছেই বিক্রি করে দেবেন । তাঁরা কীভাবে তাঁদের উৎপাদিত সামগ্রী আরও ভালো দাম পাওয়ার আশায় দূরে নিয়ে যাবেন ? সামান্য 10 কুইন্টাল ধান বা 10টি কাপড়ের ব্যাগে ভরতি তাঁর উৎপাদন, তা কি তিনি একটা ট্রাক্টর ভাড়া করে একজন মাঝারি চাষির ক্ষেত্রে দূরের কোনও বাজারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ? বাজারে ভালো দাম না পাওয়া পর্যন্ত এমন একজন কৃষক কি অপেক্ষা করতে পারবেন ? আজকেও তেলাঙ্গানার কৃষকরা এমন অবস্থায় নেই, যে তাঁরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল আরও ভালো দামের আশায় দূরে কোথায় নিয়ে যাবেন । যদি কৃষি বাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে কৃষকদের খুব হতাশাজনক পরিস্থিতির মধ্যে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হবে ।

একটা বড় সমস্যার মধ্যে ফেলে দেওয়া হল অন্নদাতাদের, বললেন বিশিষ্ট কৃষি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ( অবসরপ্রাপ্ত ) ড. নরসীমা রেড্ডি ৷

কেন্দ্রীয় সরকার বলছে যে পঞ্জাব, হরিয়ানার কমিশন এজেন্টরা ছাড়া কোনও কৃষকই এই আইনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না । এই বিষয়ে কী বলবেন ?

এটা সত্যি নয় । এই আইনের খারাপ প্রভাব সারা দেশে অনুভূত হবে । পঞ্জাবের সমস্যা কিছুটা আলাদা । পঞ্জাবের 84 শতাংশ কৃষিক্ষেত্রে ধান ও গম তৈরি হয় । তারা যা উৎপাদন করে, তার 95 শতাংশ পর্যন্ত এমএসপি পেয়ে যায় । পঞ্জাবে ফসলের পরিবর্তন মানে ধানের পর গম চাষ করা । এই ফসল উৎপন্ন করা হয়, কারণ তারা সঠিক ভাবে এমএসপি পেয়ে যায় । তাৎপর্যপূর্ণ হল পঞ্জাব ধান উৎপন্ন করে, কিন্তু তারা কেউ ধান খায় না । পুরো ফসলটাই কৃষকরা বিক্রি করে দেয় । নিজেদের কাছে কিছুই রাখে না । এমনটা কিন্তু অন্য রাজগুলিতে হয় না । কৃষকরা নিজেদের চাহিদার জন্য কিছুটা রেখে তবেই ধান বিক্রি করে । অন্ধ্রপ্রদেশে 40 শতাংশ কৃষি জমিতে ধান চাষ হয় । তেলাঙ্গানায় সুতো প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয় । তার পরও ধান চাষ গত বছর ও এই বছর বৃদ্ধি পেয়েছে ।

সমস্যাটা শুধু ধান ও গম চাষিদের মধ্যে আটকে নেই । উদাহরণ হিসেব আপনাদের অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর জেলার কথা বলি । সেখানে চিনাবাদাম খুব বেশি উৎপন্ন হয় । গত কয়েক দশক ধরে আমরা সেখানে চিনাবাদামের বিকল্প কিছুকে তুলে ধরার কথা শুনে আসছি । ওই জেলার কৃষকরা বিকল্প হিসেবে পেঁপে ও অন্যান্য উদ্যানপালন সংক্রান্ত ফসলের দাবি তুলছে । কিন্তু চাষিরা ওই ফসলের জন্য পর্যাপ্ত দাম পাচ্ছে না । সেখানে মজুত করা ও বিপণনের জন্য কোনও ব্যবস্থা নেই । সুতোর জন্য তেলেঙ্গানায় ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়া হয় । তার পরও সুতো চাষিরা প্রতি বছর সমস্যার মুখে পড়েন । এই ধরনের সমস্যাগুলি সমাধান করার বদলে সরকার নতুন আইন নিয়ে এল । যার মাধ্যমে বাজার অনিয়ন্ত্রিত হয়ে চলে গেল বেসরকারি অংশীদারদের দখলে । এই আইনের প্রভাব সব রাজ্যেই অনুভূত হবে ।

আমাদের বলা হচ্ছে যে এই নতুন আইনের জন্য দুই ধরনের বাজার প্রকাশ্যে আসবে । এটাও বলা হচ্ছে যে নতুন ধরনের নিয়ম থাকবে । এটা কীভাবে সম্ভব ?

হ্যাঁ, সেখানে কৃষি বাজার কমিটি থাকবে । কিন্তু বেসরকারি সংস্থা বা কোনও ব্যক্তি বাজারের বাইরে থেকে সামগ্রী কিনতে পারবেন । এর মানে সেখানে দুই ধরনের বাজার থাকবে । বেসকারি ডিলারদের উপর কীভাবে এমএসপি লাগু করা হবে ? কেন্দ্রীয় সরকার এমন কোনও আইন তৈরি করেনি, যার মাধ্যমে ব্যবসয়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট দামে সামগ্রী কিনতে পারবেন এর বদলে নতুন আইনে মুক্ত বাজার গড়ার পথ প্রশস্ত হয়েছে । বাজারের ভিতরে নিয়ন্ত্রিত বিপণনের ব্যবস্থা থাকছে । কিন্তু বাজারের বাইরে তা অনিয়ন্ত্রিত । প্রতিটি বাজারের জন্য আলাদা আলাদা ফি ও নিয়ম কার্যকর করা হবে । এর ফলে ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রিত বাজার থেকে বেরিয়ে যাবেন এবং অনিয়ন্ত্রিত বাজারে গিয়ে ব্যবসা করবেন । বাজারে কৃষকদের ফসলের দাম নির্ধারণ করার জন্য ব্যবসায়ীরা একে অপরের সঙ্গে গোলমালে জড়াচ্ছে বলে আগেই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল । আইন কার্যকর হয়ে গেলে তারা বাজারের বাইরে গিয়ে একই কাজ করবে । যখন বাজারের মধ্যে এই ধরনের ঘটনা ঘটে, তখন আমরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারি । কিন্তু বাজারের বাইরে আমাদের অভিযোগ শোনার জন্য কেউ থাকবে না ।

বাজারের বাইরে আমাদের দাম, ওজন, আদ্রতার উপাদান, গ্রেডিং ইত্যাদি বিষয় নিয়েও সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে । আদিবাসী এলাকা ও অন্যান্য প্রত্যন্ত এলাকায় এই ধরনের প্রতারণা কৃষকদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই হয়েছে । নতুন আইনের ফলে সমস্ত কৃষককে এই ধরনের সমস্যার মুখে এনে দাঁড় করাবে । এটা বোঝাই যাচ্ছে যে সরকার কৃষি বাজারগুলিকে তুলে না দিলেও নতুন এই আইনের মাধ্যমে এমএসপি তুলে দিতে চাইছে । পঞ্জাব, হরিয়ানা ও পূর্ব উত্তর প্রদেশ ছাড়া অন্য জায়গাগুলিতে কৃষি বাজার কমিটি (এপিএমসি)-গুলি কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের 20 শতাংশ কেনে । এর পরও কৃষকরা ন্যূনতম মূল্য চাইতে পারেন । নতুন আইন যখন চলে আসবে, তখন সরকার এটা বোঝাবে যে এমএসপি রয়েছে । কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত বাজারের জন্য এটা কার্যকর হবে না ।

কেন্দ্রীয় সরকার বলছে যে তারা স্বামীনাথনের রিপোর্ট হুবহু কার্যকর করেছে । কিন্তু পূর্বতন ইউপিএ সরকার ওই রিপোর্ট ফেলে দিয়েছিল ।

এটা পুরোটাই মিথ্যে একটা প্রচার । এখন যেটা হচ্ছে, সেটা হল স্বামীনাথন যা পরামর্শ দিয়েছিলেন তার অসম্পূর্ণ বিরোধিতা । কমিশন স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছিল যে কীভাবে সহায়ক মূল্য নির্ধারণ করতে হবে এবং কৃষকদের জন্য আরও 50 শতাংশ যোগ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল । দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে তারা কমিশনের পরামর্শকে বিকৃত করছে । এই পরিমাণটা কীভাবে কমিশনের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োগ করা হল ? দাম নির্ধারণের সময় কমিশন সমস্ত দিক খতিয়ে দেখেছিল । তার মধ্যে বিনিয়োগের সুদ ও ভাড়ার জমির বিষয়টিও ছিল । স্বামীনাথন কমিশনের পরামর্শ শুধু এমএসপি-র মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না । কমিশন গুদাম ও অন্যান্য পরিষেবা সংক্রান্ত পরিকাঠামো নিয়েও নানা পরামর্শ দিয়েছিল । কমিশন যা প্রস্তাব দিয়েছিল, তার পুরোটাই এখন কেন্দ্রীয় সরকার লঙ্ঘন করছে ।

যখন এই আইন কৃষকদের পক্ষে নয়, তখন রাজ্য সরকারগুলি কি এর থেকে দূরে থাকতে পারে?

রাজ্য সরকারগুলির এতে কোনও ভূমিকা নেই । যদিও কৃষি হল রাজ্যের বিষয় । বীজ সরবরাহ করা থেকে ফসলের প্রক্রিয়াকরণ পর্যন্ত, পুরোটাই রাজ্য সরকারের আওতায় হয় । নিয়মের সুবিধা নিয়ে সেটাকে নিজেদের দিকে টানতে কেন্দ্রীয় সরকার নতুন আইন আনতে চলেছে । আগে কেন্দ্রীয় সরকার একটা খসড়া আইন তৈরি করত । তার পর তা রাজ্যগুলিকে দেওয়া হত, যাতে এমন একটা আইন তৈরির আগে রাজ্যগুলির পরামর্শ পাওয়া যায় । আগের ওই অভ্যাসের একেবারে বিপরীতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এই আইন বলবৎ করছে । রাজ্য সরকারগুলিকে এই আইন মেনে চলতে হবে । বীজ, কীটনাশক, ফসলের জন্য ঋণ, ফসলের প্রক্রিয়াকরণ ও অন্যান্য কিছু-সহ সমস্ত দরকারে কৃষকদের তাকিয়ে থাকতে হয় রাজ্য সরকারের দিকে । কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের ক্ষমতার উপর নিজেদের চাপিয়ে দিচ্ছে । যদি নিয়ন্ত্রিত বাজার না থাকে, তাহলে রাজ্য সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না । কেন্দ্রীয় সরকারের এই আচরণ ঠিক নয় যে এই বিষয়ে রাজ্যের যেন কোনও ভূমিকাই নেই । কেন্দ্র একটা নতুন ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ তৈরি করেছে, যা কৃষি বাজার থেকে অনেক দূরে । সেই কারণেই কিছু রাজ্য দাবি তুলেছে যে যেখানে কৃষিজাত পণ্য বিক্রি হবে, সেই প্রতিটি জায়গাই কৃষি বাজার কমিটির অধীনে আসতে হবে । নতুন আইন তৈরি করার আগে কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেনি । রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গেও কোনও আলোচনা করেনি । আগামীতে সমস্ত কৃষকরাই ভুক্তোভুগী হবেন । রাজ্যগুলিকে এর আঁচ পোয়াতে হবে । নীতিতে সাম্যবাদ আনতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এই আইনের মাধ্যমে বড় ব্যবসায়ীদের এর মধ্যে টেনে আনলেন । এই কারণেই তারা রাজ্যগুলিকে একেবারে বাইরে রেখেছে ।

নতুন কৃষি আইনে কতটা লাভবান হবেন কৃষকরা ?

কৃষকদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কী করতে পারে ?

কৃষি ক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে । সরকার বড় কর্পোরেট হাউজ়গুলিকে আগামী 10 বছরে 1 লাখ কোটি টাকা দিচ্ছে পরিকাঠামোর মান উন্নয়ন করার জন্য । তার বদলে এই কাজ সরকারকে নিজের কাঁধেই নিতে হবে । কৃষির সঙ্গে জড়িত ক্ষেত্রগুলিকে উৎসাহ দিতে হবে । ওই ক্ষেত্রগুলির উপর যত মানুষ ভরসা করে থাকেন, তাঁদের সংখ্যা অন্তত 25 শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে হবে । এই দেশে মাথা পিছু জমির পরিমাণ 2.5 একর । কৃষকরা ছোটো জমি থেকে প্রয়োজনীয় রোজগার করতে পারবেন না । কৃষকের পরিবারে মাথা পিছু রোজগার 1.25 লাখ টাকা । পঞ্জাবে এই মাথা পিছু রোজগার 3.4 লাখ টাকা ।

2004-05 আর্থিক বছর ও 2017-18 আর্থিক বছরের মধ্যে 5 কোটি মানুষ চাষের কাজ করা ছেড়ে দিয়েছেন । সম্প্রতি যখন লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন কয়েক লাখ মানুষ হেঁটে নিজেদের গ্রামের বাড়িতে ফিরেছিলেন । তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষই কৃষক । এদের গড় আয় বৃদ্ধি পেয়েছে 1 শতাংশ । আর অন্যান্য ক্ষেত্রের গড় আয় বৃদ্ধি পেয়েছে 15 শতাংশ ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যত মানুষ বসবাস করেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র 2 শতাংশ চাষের কাজের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকেন । ওই দেশে মানুষের যতটা খাবার লাগে, তার থেকেও দেড় গুণ তাঁরা উৎপন্ন করতে পারেন মাত্র 2 শতাংশ চাষের কাজে নির্ভরশীল মানুষদের নিয়ে । জাপানে ছোটো ও প্রান্তিক চাষিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ । জনসংখ্যার 15 শতাংশ চাষের কাজের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকেন ।

কৃষির সঙ্গে জড়িত যে ক্ষেত্রগুলি রয়েছে, সেই গুলির দিকে আমাদের দেশের নজর দেওয়া উচিত । যে কষক 3 একর জমির মালিক, তিনি কী করে নিজের পরিবারের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ও অন্যান্য চাহিদা পূরণ করবেন ? শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা কৃষকদের কাছে সহজলভ্য করে গড়ে তুলতে হবে । নতুন আইন কৃষকদের অবস্থা আরও ভালো করার পরিবর্তে তাঁদের আরও খারাপ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে ।

Last Updated : Dec 23, 2020, 9:34 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details