দূষণ করে এমন কণার পরিমাণ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বা হু এর বেঁধে দেওয়া মাত্রার চেয়ে 10 থেকে 11 গুন বেশি রয়েছে দেশে । এটা সত্যি যে লকডাউন যখন চলছিল, সেই সময় বায়ুদূষণের মাত্রা অনেকটাই নিচে নেমে এসেছিল । তবে দূষণের এই মাত্রা কমে যাওয়ার মেয়াদ ছিল অল্প কিছু সময়ের জন্য । দ্য সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের তরফে সর্বশেষ যে সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে যে 2020 সালের অক্টোবর থেকে 2021 সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে বায়ুদূষণের মাত্রা আগের বছরের একই সময়ের বায়ু দূষণের মাত্রার চেয়ে বেশি ছিল ।
99 টি শহরে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড একটি সমীক্ষা করে । সেখানে যে ফলাফল উঠে এসেছে, তা বুঝিয়ে দিচ্ছে যে ওই 99 টি শহরের মধ্যে 43 টি শহরে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে । তালিকায় রয়েছে গুরুগ্রাম, লখনউ, জয়পুর, আগ্রা, নভি মুম্বই, যোধপুর, কলকাতা, বিশাখাপত্তনম এবং অন্যান্য শহর । তথ্য বলছে যে যখন ঔরঙ্গবাদ, ইন্দোর, ভোপাল, কোচি, কোজিকোড় এবং অন্যান্য শহরে তাপমাত্রা কমে যায়, তখন দূষণ বৃদ্ধি পায় ।
দিল্লি আইআইটি এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে করা একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে বায়ুদূষণের বৃদ্ধি পাওয়ার অনুপাতে 5 বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে রক্তাল্পতা বৃদ্ধি পেয়েছে । তাৎপর্যপূর্ণভাবে বায়ুদূষণের জন্য পরিস্থিতির যখন অবনতি হচ্ছে, তখন বাতাসের গুণমানের উন্নতি করার জন্য বাজেটের বরাদ্দকে হ্রাস করেছে কেন্দ্র । সিএসই-এর গবেষণায় যে ফল উঠে এসেছে, তার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত কিছুটা হলেও সংশোধন করা উচিত ।
বায়ুদূষণের মধ্যে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে মস্তিষ্ক এবং কিডনির কর্মক্ষমতা তীব্রভাবে কমে যায় বলে জানা গিয়েছে । বাতাসের গুণমানের অনুপাতের সঙ্গে ফুসফুস সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায় । বাতাসের গুণগত মান বৃদ্ধি করতে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে মারাত্মক ত্রুটি রয়েছে । নীতি আয়োগ পুরানো তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টিরও উন্নতি করার কথা বলেছিল । তবে এই ধরনের পরামর্শ শোনার কেউ নেই বলে মনে হয় । দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য যে আইনগুলি তৈরি হয়েছে, তার প্রতি সামান্য পরিমাণ সম্মান দেখানো হচ্ছে ।
যে সমস্ত দেশ তাদের নাগরিকদের মধ্যে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে পেরেছে, তারা তাদের জল এবং বাতাসের মান উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে । ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলি সবুজায়নের বিস্তার ঘটাতে এবং জৈব বর্জ্য থেকে মিথেন তৈরিতে অনেক বেশি পরিমাণে জোর দিচ্ছে । বার্লিন, সাংহাই, লন্ডন, মাদ্রিদ এবং সিওলের মতো শহরগুলিতে সেরা গণপরিবহণ ব্যবস্থা রয়েছে । পাশাপাশি ওই শহরগুলি যানবাহন থেকে হওয়া দূষণ এবং অন্যান্য ধরনের দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করে, তার সুনাম অর্জন করেছে ।
চিন 1998 সাল থেকে 15 বছরের জন্য জ্বালানির পরিকাঠামোগত উন্নতির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ । তারা প্রতিবছর দূষণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করছে এবং তা অর্জন করছে । গত বছর বেজিংয়ে বাতাসে দূষণ ছড়ায় এমন কণার পরিমাণ ছিল প্রতি ঘন মিটারে 38 মাইক্রো গ্রাম । এই বছর চিন সরকার এই পরিমাণকে প্রতি ঘন মিটারে 34.5 মাইক্রো গ্রামে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে । চিন ঘোষণা করেছে যে, আগামী পাঁচ বছরে তারা সম্পূর্ণ রূপে কয়লার ব্যবহার বন্ধ করে দেবে এবং তার জায়গায় বিকল্প জ্বালানির ব্যবহারের ব্যবস্থা করবে । কয়লা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় এমন নতুন শিল্পগুলির নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে । ওই দেশ বন সংরক্ষণ করার জন্য একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছে এবং দূষণ তৈরি করে এমন শিল্পগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার পরিকল্পনা কার্যকর করেছে ।
ভারতও বাতাসের গুণমানের সুরক্ষার জন্য আইন প্রণয়ন করেছে এবং নির্দেশিকা নির্ধারণ করেছে । তবে সরকারি কর্মকর্তা ও নাগরিক সমাজের মধ্যে পরিবেশ নিয়ে সচেতনতার অভাবই আমাদের দেশে সংকটের কারণ । বায়ুদূষণের প্রতি অবহেলা করার মনোভাব ত্যাগ করতে হবে । কারণ, এর ফলে বছরে 12 লাখ প্রাণহানি হচ্ছে । আর এই কাজের জন্য প্রথম পদক্ষেপ হবে বাতাসের গুণগত মান উন্নত করা ।