নয়াদিল্লি, 19 জুলাই : দু'জন মন্ত্রী, চল্লিশ জনেরও বেশি সাংবাদিক, তিন বিরোধী নেতা এবং একজন বিচারক-সহ দেশের 300টিরও বেশি মোবাইল ফোন নম্বর হ্যাক করার চেষ্টা করা হয়েছিল ৷ আন্তর্জাতিক একটি মিডিয়া সংস্থা গোষ্ঠীর রিপোর্টে রবিবার বলা হয়েছে, শুধু সরকারি সংস্থাগুলির কাছে বিক্রি হওয়া ইজ়রায়েলি স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে এই ফোন নম্বরগুলি হ্যাক করার সম্ভাবনার কথা সম্পূর্ণ উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না ৷ অবশ্য সরকারি তরফে এমন কোনও প্রকার নজরদারির কথা অস্বীকার করা হয়েছে ৷ বলা হয়েছে, এই রিপোর্টে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ নেই ৷ পাশাপাশি, দেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তার অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসাবে গণ্য করা হয় ভারতীয় গণতন্ত্রে ৷ রিপোর্টটি নাকচ করা হয় সরকারি তরফে ৷
প্যারিসের নন-প্রফিট সংস্থা ফরবিডেন স্টোরিস এবং অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশানালের উদ্যোগে একটি তদন্ত সংগঠিত করা হয় ৷ সেই তদন্তে মিডিয়া পার্টনার হিসাবে অংশগ্রহণ করে ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য গার্ডিয়ান এবং লে মনডে-এর মতো 16টি আন্তর্জাতিক মিডিয়া সংস্থা ৷ তারা সবাই একযোগে রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে ৷ এই মিডিয়া সংস্থা গোষ্ঠীর মধ্যে ভারতের খবরের পোর্টাল দ্য ওয়্য়ার-ও রয়েছে ৷ এই রিপোর্টে বলা হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি ফোন নম্বর সামনে এসেছে ৷ এই ফোন নম্বরগুলি নজরদারিতে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ৷ ইজ়রায়লি নজরদারি সংস্থা এনএসও গ্রুপের (NSO Group) পেগাসাস সফটওয়্যারের (Pegasus software) মাধ্যমে এই নজরদারি চালানো হত বলে অভিযোগ ৷
সংসদের বাদল অধিবেশনের ঠিক আগের দিনই প্রকাশিত হয় এই রিপোর্ট ৷ লোকসভা এবং রাজ্যসভার অধিবেশনে তা মূল প্রতিপাদ্য হয়ে উঠতে পারে বলেও অনুমান করা হচ্ছে ৷ বিরোধীদের মধ্যে কেউ কেউ এই ইস্যুকে বিতর্কের বিষয় অথবা স্থগিতের নোটিশ দিতে পারেন বলেও অনুমান করা হচ্ছে । দ্য ওয়্যারের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ইজ়রায়লি সংস্থা এনএসও গ্রুপ গোটা বিশ্বে 36টি সরকারকে তাদের পেগাসাস সফটওয়্যার বিক্রি করেছে ৷ তদন্তের অংশ হিসাবে এই ফোন নম্বরগুলির মধ্যে একটি ছোট অংশের উপর ফরেনসিক পরীক্ষা চালানো হয় ৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, পেগাসাস স্পাইওয়্যারের (Pegasus spyware) মাধ্যমে 37টি ফোনকে লক্ষ্য করা হয়, যার মধ্যে 10টি ভারতীয় নম্বরও রয়েছে ৷ রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, দু'জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং 3 জন বিরোধী নেতার পাশাপাশি 40 জন সাংবাদিকের ফোন নম্বর রয়েছে নজরদারির তালিকায় ৷ হিন্দুস্থান টাইমস (Hindustan Times), ইন্ডিয়া টুডে (India Today), নেটওয়ার্ক এইটটিন (Network18), দ্য হিন্দু (The Hindu) এবং ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের (Indian Express) শীর্ষ সাংবাদিকরা রয়েছেন এই তালিকায় ৷ এছাড়াও এক সাংবিধানিক আধিকারিক, নিরাপত্তা সংস্থাগুলির বর্তমান ও প্রাক্তন আধিকারিক, বেশ কয়েকজন শিল্পপতি এবং বিচারকদের ফোন নম্বর ওই তালিকায় রয়েছে ৷ 2018 সালে জুন থেকে 2020 সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত এলগার পরিষদ মামলায় (Elgar Parishad case) জড়িত থাকার জন্য সমাজকর্মী, আইনজীবী এবং শিক্ষাবিদ মিলিয়ে গ্রেফতার হওয়া মোট 9 জন এবং দিল্লি ইউনিভার্সিটির এক প্রাক্তন অধ্যাপকের ফোন নম্বরও এই তালিকায় রয়েছে ৷