মুম্বই, 26 সেপ্টেম্বর: মহালয়ার পর থেকেই দেবীপক্ষ ৷ আর এর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো ৷ রাজ্য-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় দুর্গাপুজোর পাশাপাশি পালিত হয় নবরাত্রি (Navratri) ৷ সেই নবরাত্রির সূচনা হল আজ থেকে ৷
নবরাত্রি হিন্দুদের অন্যতম প্রধান উৎসব । এটি বছরে দুবার পালিত হয় । বছরের প্রথম নবরাত্রি উদযাপিত হয় মার্চ-এপ্রিল মাসে । এটি চৈত্র নবরাত্রি বা বসন্ত নবরাত্রি নামে পরিচিত । দ্বিতীয় নবরাত্রি সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে পড়ে এবং এটিকে শারদ নবরাত্রি বলা হয় ।
নয় দিনব্যাপী হয় নবরাত্রি উৎসব (Nine Days Festival) ৷ এই সময়ে দেবী দুর্গার নয়টি অবতারকে উৎসর্গ করা হয় । এটি দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে অত্যন্ত উত্সাহ এবং ভক্তির সঙ্গে পালিত হয় ।
নবরাত্রি পুজোর তিথি
শারদীয় নবরাত্রি শরৎ ঋতুতে পড়ে । এটি শুরু হয় আশ্বিন শুক্লপক্ষের প্রতিপদ থেকে । শারদ নবরাত্রি 26 সেপ্টেম্বর (সোমবার) শুরু হল এবং 4 অক্টোবর (মঙ্গলবার) পর্যন্ত চলবে, তারপরে 5 অক্টোবর দশেরা হবে ।
নবরাত্রির ইতিহাস
নবরাত্রি উদযাপনের পিছনে অনেক পৌরানিক কাহিনি রয়েছে । পুরান অনুসারে, মা দুর্গা মহিষাসুরের সঙ্গে নয় দিন যুদ্ধ করেছিলেন এবং তারপর নবমীর রাতে তাকে হত্যা করেছিলেন । সেই সময় থেকেই দেবী 'মহিষাসুরমর্দিনী' নামে পরিচিত । সেই থেকে, মা দুর্গার শক্তিকে উৎসর্গ করে নবরাত্রির উপবাস পালন করার সময় তার 9টি রূপের পূজা করা হয় ।
অন্য একটি কিংবদন্তী অনুসারে, ভগবান শ্রী রাম দুষ্ট রাবণকে বধ করেছিলেন এবং শুভকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন । এই উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য, নারদ শ্রী রামকে নবরাত্রির উপবাসের আচার পালন করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন । তারপর ভগবান শ্রী রাম উপবাস শেষ করে লঙ্কা আক্রমণ করে রাবণকে বধ করেন । সেই থেকে নবরাত্রি উপবাস সিদ্ধির জন্য করা হয়ে আসছে ।
নবরাত্রির তাৎপর্য
ত্রেতাযুগে রামচন্দ্র শারদীয়া দূর্গোৎসবের প্রচলন করেন । রাবণ বধ ও সীতা উদ্ধারের জন্য রামচন্দ্র দুর্গতিনাশিনী দুর্গার অকাল বোধন (Akaal Bodhon) করে নবরাত্র ব্রত পালন করেছিলেন । এই নবরাত্রি ব্রত আশ্বিনের শুক্লা প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত ।
নবরাত্রি মা দুর্গার নয়টি অবতার নবদুর্গাকে উৎসর্গ করা হয়, যিনি তার ভক্তদের শক্তি, শক্তি এবং সমৃদ্ধি প্রদান করতে পরিচিত । বিশ্বাস করা হয় যে কেউ এই নয়টি শুভ দিনে সম্পূর্ণ ভক্তি সহকারে দেবীর নয়টি অবতারের উপবাস ও উপাসনা করেন তিনি তাঁর আশীর্বাদ পান । মা দুর্গা তাদের সমস্ত সমস্যার সমাধান এবং তাদের ইচ্ছা পূরণ করতে পরিচিত ।
নবরাত্রি উৎযাপন
সারা দেশ জুড়ে সারম্ভরে পালিত হয় নবরাত্রি ৷ এই সময় গড়বা ও ডাণ্ডিয়া-সহ বিভিন্ন নাচের মাধ্যমে পুজোর নটা দিন উৎযাপন করা হয় ৷ ডাণ্ডিয়া রাস নাচে পুরুষ ও মহিলারা হাতে সরু ও হালকা লাঠি নিয়ে বৃত্তাকারে নৃত্য প্ৰদৰ্শন করে থাকে । তারা নাচের সময় ব্যবহার করা এই লাঠিকে বলা হয় ডালক দাণ্ডিয়া (ডাণ্ডিয়া) । ডালক দাণ্ডিয়াগুলোতে নিয়মিত আঘাত করে এই নাচ করা হয় । এতে একরকম সুর ও শব্দের সৃষ্টি হয় । গড়বা গুজরাতের একটি লোক নৃত্য ৷ এটি নবরাত্রি নয় রাতে নাচা হয় ৷ ছেলে-মেয়ে সকলে মিলে পরিবেশন করে ৷
এই সময় একদিকে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে পালিত হয় নবরাত্রি ৷ অন্যদিকে পালিত হয় রামলীলা থেকে দুর্গাপুজো ৷ তারপরেই আবার আসে কালিপুজো বা দিওয়ালি ৷ এবছর অক্টোবর বা আশ্বিন মাসজুড়ে দেশে উৎসবেব মেজাজ থাকবে ৷ করোনাকাল কাটিয়ে এবার হয়তো সবাই নিজস্ব উৎসবে সামিল হয়ে পারবে ৷ কারণ আগের বছরগুলোর তুলনায় এবারে করোনা সংক্রমণের হার অনেক কম রয়েছে ৷