হায়দরাবাদ, 13 নভেম্বর : শুধু পুরুষেরাই নন, ঔপনিবেশিক শক্তিকে প্রতিহত করতে তীব্র প্রতিরোধ চালিয়েছেন এ দেশের মহিলারাও ৷ তাঁরাও ভারতের মাটিতে ইউরোপীয় শক্তির ঘাঁটি গেঁড়ে বসার রাজনৈতিক স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন ৷ স্বাধীনতার 75 বছর উদযাপনে (75 Years of Independence) দু'জন বীরাঙ্গনা রানিকে স্মরণ করা যাক, যাঁরা জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে ৷
উত্তর কর্নাটকে কিত্তুর রানি চেন্নাম্মা (Kittur Rani Chennamma) বহু মানুষের অনুপ্রেরণা ৷ প্রতি বছর 23 অক্টোবর ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে চেন্নাম্মার প্রথম জয়কে পালন করেন বেলাগাভী ও তাঁর সংলগ্ন এলাকার মানুষেরা ৷ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ধারওয়াড়ের কালেক্টর জন ঠাকরে চেন্নাম্মাকে গুরুত্ব না-দিয়ে তাঁর কিত্তুর কেল্লার সম্পদ লুঠ করার চেষ্টা চালিয়েছিল ৷ রানির লেফটেন্যান্ট আমাতুর বালাপ্পার হাতে মৃত্যু হয় অনেক জনের ৷ চেন্নাম্মার জেনারেল সঙ্গোল্লি রায়ান্না ও বালাপ্পার হাতে চূর্ণ হয় কোম্পানির সেনা ৷
1778 সালে বেলাগাভী জেলার কাকাতিতে জন্ম হয় কিত্তুর রানি চেন্নাম্মার ৷ 15 বছর বয়সে কিত্তুরের রাজা মল্লাসার্যর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় ৷ তির-ধনুক চালানো, তলোয়ারের লড়াই, ঘোড়া চালানোয় সিদ্ধহস্ত ছিলেন তিনি ৷ 1816 সালে রাজা মল্লাসার্যের মৃত্যু হয় এবং তাঁর ও তাঁর বড়রানি রুদ্রাম্মার ছেলে সিংহাসনে উপনীত হন ৷ তবে কোনও বংশধর দেওয়ার আগেই 1824 সালে তাঁর মৃত্যু হয় ৷ রাজ্য শাসনের দায়িত্ব এসে পড়ে চেন্নাম্মার উপর ৷
বংশধর না-থাকার সুযোগ নিয়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কিত্তুরের উপর ডকট্রিন অফ ল্যাপস আনলে 1824 সালে চেন্নাম্মা বংশধর হিসেবে দত্তক নেন শিবলিঙ্গাপ্পাকে ৷ তবে তাঁকে বংশধর হিসেবে মেনে নেননি রাজনৈতিক এজেন্ট জন ৷ তিনি চেন্নাম্মাকে তাঁর রাজ্যপাট ব্রিটিশদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য জোরজার শুরু করেন ৷ বম্বে প্রেসিডেন্সির কাছে নিজের আবেদন জানিয়েছিলেন চেন্নাম্মা ৷ তবে তাঁর আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয় ৷ এরপরই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন তিনি ৷
আরও পড়ুন:Independence Special : বালগঙ্গাধরের কলম ধার বাড়িয়েছিল স্বাধীনতার যুদ্ধের
প্রথম আক্রমণে সাফল্য পেলেও দ্বিতীয় ক্ষেত্রে বন্দি হতে হয় রানি চেন্নাম্মাকে ৷ যদিও তাঁর সেনা বীর বিক্রমে লড়াই চালিয়েছিল ৷ কিত্তুর বাহিনীর হাতে মৃত্যু হয় মাদ্রাজের গভর্নর জেনারেল থমাস মুনরোর ভাইপো তথা সাব-কালেক্টর মুনরোর ৷ চেন্নাম্মাকে বাইলহোঙ্গাল কেল্লায় বন্দি করে রাখা হয় ৷ 1829 সালে তাঁর মৃত্যু হয় ৷ গেরিলা কৌশল নিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জোর লড়াই চালান রানির জেনারেল সঙ্গোল্লি রায়ান্না ৷ যদিও তাঁকেও পরে বন্দি করা হয় ৷ রানির যে বছর মৃত্যু হয়েছিল, সেই বছরই রায়ান্নাকে ফাঁসি দেওয়া হয় ৷তবে আজও চেন্নাম্মার লড়াইকে বাঁচিয়ে রেখেছে কর্নাটক সরকার ৷ প্রতি বছর 22 থেকে 24 অক্টোবরের মধ্যে তাঁর জয়কে আজও উদযাপন করা হয় ৷
চেন্নাম্মা যেমন ছিলেন ব্রিটিশদের ত্রাস, তেমনই ভারতে প্রথম উপনিবেশ গড়ে তোলা পর্তুগিজদের কাছে দুঃস্বপ্ন ছিলেন উপকূলীয় কর্নাটকের এক মহিলা ৷ যতদিন তিনি বেঁচে ছিলেন, ততদিন তাঁর ভয়ে কাঁটা হয়ে ছিল পর্তুগিজরা ৷ আব্বাক্কা মহাদেবী (Abbakka Mahadevi)৷ তুলুনাড়ুর ম্যাঙ্গালোরের কাছে ছোট্ট রাজ্য উল্লালের শাসক ছিলেন তিনি ৷ মাতৃতান্ত্রিক উত্তরাধিকারের অনুসরণকারী চৌতাস বংশের ছিলেন আব্বাক্কা ৷ 1525 সালে উল্লালের রানি হন তিনি ৷