নয়াদিল্লি, 11 ডিসেম্বর: 2019 সালের 5 অগস্ট৷ সংসদে বিল পেশ করে সংবিধানের অনুচ্ছেদ 370 বাতিল করে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার ৷ সেই ঘটনার চার বছর, চার মাস এবং পাঁচ দিন পরে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রের সেই সিদ্ধান্তকে সাংবিধানিক বলে রায় দিল ৷
কেন্দ্রের তরফে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক আবেদন জমা পড়ে ৷ তা নিয়ে চলতি বছরেরর 2 অগস্ট সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ শুনানি শুরু করে ৷ 16 দিন ধরে শুনানি হয় ৷ তা শেষ হয় গত 5 সেপ্টেম্বর ৷ সেদিন সুপ্রিম কোর্ট রায় সংরক্ষণের কথা জানিয়েছিল ৷ সোমবার সেই রায়ই দিল শীর্ষ আদালত ৷
সোমবার, 370 অনুচ্ছেদ বাতিল করার এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল 2019 আনার কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করার সময়, প্রধান বিচারপতি ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড় উল্লেখ করেন, "370 অনুচ্ছেদটি অস্থায়ী ছিল এবং ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার পর জম্মু ও কাশ্মীরের কোনও অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্ব ছিল না ৷"
এ দিনের রায়ে আদালত নির্বাচন কমিশনকে 2024 সালের 30 সেপ্টেম্বরের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভার জন্য নির্বাচন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছে ৷ আর ওই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে অবিলম্বে পূর্ণরাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার কথাও বলেছে ৷
এখানে ভারতের প্রধান বিচারপতির দেওয়া রায়ের 10টি মূল বিবৃতি রয়েছে:
- জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের কোনোরকম সার্বভৌমত্ব আর নেই ৷ এর কোনও অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্বও নেই । অনুচ্ছেদ 370 অপ্রতিসম ফেডারেলিজমের একটি বৈশিষ্ট্য এবং সার্বভৌমত্বের নয় ।
- আবেদনকারীরা রাষ্ট্রপতির ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ করেননি । ঘোষণার পর রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার প্রয়োগ বিচারবিভাগীয় পর্যালোচনায় আসতে পারে ৷ 370 (1) (d) এর অধীনে রাষ্ট্রপতির দ্বারা ক্ষমতার প্রয়োগ অসাধু উদ্দেশ্যে হয়নি । রাষ্ট্রপতিকে রাজ্যের সম্মতি নিতে হবে না এবং তিনি কেন্দ্রের সম্মতিতে কাজ করতে পারেন ।
- অনুচ্ছেদ 356 (1) এর অধীনে সংসদকে দেওয়া ক্ষমতা শুধুমাত্র আইন প্রয়োগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই ৷ রাজ্য বিধানসভার হয়েও সংসদ নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে ৷
- আমরা ধরে নিয়েছি যে 370 অনুচ্ছেদ একটি অস্থায়ী বিধান । 370 (3) ধারার অধীনে জম্মু ও কাশ্মীরের গণপরিষদের অস্তিত্ব চলে হয়ে যাওয়ার পরেও বন্ধ হয়নি । অনুচ্ছেদ 370(1)(d) এর অধীনে ক্ষমতা প্রয়োগ করে অনুচ্ছেদ 370 সংশোধন করা যাবে না ।
- অনুচ্ছেদ 2 থেকে সিও 272 সংবিধানের সমস্ত বিধান জম্মু ও কাশ্মীরে প্রয়োগ করা বৈধ ।
- জম্মু ও কাশ্মীরের গণপরিষদের সুপারিশ ছাড়াই রাষ্ট্রপতি বিজ্ঞপ্তি জারি করে অনুচ্ছেদ 370 রদ করতে পারেন ৷ এটা সংযুক্তিকরণের একটি প্রক্রিয়া ছিল ৷
- ধারা 3-এর অধীনে ক্ষমতা প্রয়োগে সংসদ একটি রাজ্যকে এক বা একাধিক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তর করতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন উন্মুক্ত রাখা হয়েছে ।
- স্বায়ত্তশাসন কমে যাওয়া, ফেডারেটিং ইউনিট গঠনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও এর প্রভাব, সংবিধানিক কাঠামো ও প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের নীতির উপর ভিত্তি করে এই আদালতকে অবশ্যই একটি রাজ্যকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তর করার প্রয়োজনীয় প্রভাবের দিক থেকেই অনুচ্ছেদ 3 এর অধীনে ক্ষমতার পরিধি নির্ধারণ করতে হবে ৷
- অনুচ্ছেদ 3 বিধানের অধীনে রাজ্য আইনসভার মতামত সুপারিশমূলক । সলিসিটার জেনারেল জানিয়েছেন যে লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রেখে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্য়ের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে ৷ তাই এই সমস্যাটি ছেড়ে দেওয়া হল ।
- আমরা নির্দেশ দিচ্ছি যে নির্বাচন কমিশন 30 সেপ্টেম্বরের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভার নির্বাচন পরিচালনার জন্য পদক্ষেপ করবে । যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পূর্ণরাজ্যের মর্যাদাও ফিরিয়ে দিতে হবে ৷
আরও পড়ুন:
- 370 ধারা বিলোপের সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক নয়, জম্মু ও কাশ্মীরের মামলায় জানাল শীর্ষ আদালত
- জম্মু-কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে কমিশন তৈরির সুপারিশ সুপ্রিম কোর্টের
- 370 নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় আশার আলো, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি: প্রধানমন্ত্রী