নয়াদিল্লি, 29 এপ্রিল: জানুয়ারির পর এপ্রিল ৷ ফের ভারতীয় ইক্যুইটি বাজারে নেট বিক্রেতাতে পরিণত হল বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা ৷ এই মাসে 6 হাজার 304 কোটি টাকা স্টক বিক্রি করেছে এফপিআই ৷ এর ফলে ভারতীয় শেয়ার বাজারে কমল বিদেশি পুঁজি ৷ এফপিআই স্টক বিক্রিতে বিদেশি বিনিয়োগ হাতছাড়া হওয়ার ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে চলেছে ভারতীয় বাজারে ৷ তবে এর ইতিবাচক দিকও রয়েছে ৷ যেটি হল, বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীর বিক্রি করা স্টকগুলির বেশিরভাগই কিনেছে ভারতীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী (DIIs), উচ্চ পুঁজির বিনিয়োগকারীরা (HNIs) এবং খুচরা বিনিয়োগকারীরা ৷
যে কারণে, ভবিষ্যতে বাজার নিয়ন্ত্রণের একটা সুযোগ রইল ভারতের বিনিয়োগকারীদের হাতে ৷ সেখান থেকে মনে করা হচ্ছে, শেয়ার বিক্রির ফলে আপাতত ভারতীয় শেয়ারবাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ অনেকটা কমলেও ভবিষ্যতে বাজারের হাল ফেরার আশা ও সম্বাবনাও রয়েছে ৷ আর এই লাভ আসবে যখন বাজারে এফপিআইয়ের বিক্রি করা শেয়ারগুলি ভালো ফল দেবে ৷
ন্যাশনাল সিকিউরিটিজ ডিপোজিটরি লিমিটেডের (এনএসডিএল) থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে নেট ক্রেতা ছিল বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা ৷ মার্চ মাসে 35 হাজার 98 কোটি এবং ফেব্রুয়ারিতে 1 হাজার 539 কোটি টাকার স্টক কিনেছিল তারা ৷ এর ফলে ভারতীয় বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছিল ৷ এরপর টানা দু'মাস পর চলতি বছরের এপ্রিলে তারা 6 হাজার 304 কোটি টাকার স্টক বিক্রি করেছে ।
এর মাধ্যমে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা চারমাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার নেট বিক্রেতাতে পরিণত হল ৷ তার পিছনের প্রধান কারণগুলি হল সম্ভবত, পশ্চিম এশিয়ার সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক সংকট ৷ পাশাপাশি মরিশাসের সঙ্গে ভারতের কর চুক্তিতে পরিবর্তনের বিষয়ে উদ্বেগ এবং মার্কিন বন্ডের ফলনের ধারাবাহিক বৃদ্ধি ৷ যার ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের পোর্টফোলিও থেকে অর্থ সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে এবং বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা (এফপিআই) ইদানীং ভারতীয় স্টকগুলিতে নেট বিক্রেতা হয়ে উঠেছে ৷
জিওজিৎ ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের প্রধান বিনিয়োগ কৌশলবিদ ভি কে বিজয়কুমার বলেছেন, "মার্কিন ফেডেরাল রিজার্ভ প্রাথমিক সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা আমেরিকার ক্রমবর্ধমান মূল মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গেই হ্রাস পাচ্ছে । এটি (ইউএস বন্ড) ইকুইটি এবং ঋণ উভয় ক্ষেত্রেই অধিক এফপিআই বহিঃপ্রবাহের ধারা বজায় রাখবে ৷" ইতিবাচক বিষয় হল, ইক্যুইটি বাজারে যে সমস্ত স্টক এফপিআই বিক্রি হচ্ছে সেগুলি ডিআইআই, এইচএনআই এবং খুচরা বিনিয়োগকারীদের দ্বারা গৃহিত হচ্ছে । এটিই একমাত্র কারণ যা এফপিআই বিক্রিতে গতি আনতে পারে ।
ইক্যুইটি ছাড়াও, এফপিআই পর্যালোচনার সময়কালে ঋণ বাজার থেকে 10,640 কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এর আগে, বিদেশী বিনিয়োগকারীরা মার্চ মাসে 13,602 কোটি টাকা, ফেব্রুয়ারিতে 22,419 কোটি টাকা, জানুয়ারিতে 19,836 কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল। এই বিনিয়োগ প্রবাহ ভারতীয় সরকারের বন্ডে জেপি মর্গ্যানের আসন্ন বিনিয়োগ দ্বারা চালিত হয়েছিল।
জেপি মর্গ্যান গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঘোষণা করেছে যে এটি 2024 সালের জুন থেকে তার বেঞ্চমার্ক উদীয়মান বাজার সূচকে ভারতীয় সরকারের বন্ড যুক্ত করবে। এই যুগান্তকারী অন্তর্ভুক্তি পরবর্তী 18 থেকে 24 মাসে প্রায় 20-40 বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ টেনে ভারতকে উপকৃত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, জেপি মর্গ্যান হল একটি আমেরিকান বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান যার সদর দফতর নিউ ইয়র্ক সিটিতে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক এবং 2023 সালের হিসাবে বাজার মূলধনের দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক ৷
আরও পড়ুন: